Posts

Showing posts from February, 2021

মারজানা সাবিহা শুচির গল্প

Image
পতাকার পিছনের কান্নাগুলো “বাবুই বাবুই তাড়াতাড়ি আয়, দাদু খাচ্ছেন! বাবুই তার পুতুলগুলো সাজাচ্ছিলো, পাপাইয়ের চাপা গলার ডাক শুনে সব ফেলে ছুট লাগলো। দুই ভাইবোন একদৌড়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে ভাল মানুষের মতো মুখ করে বসলো, একটা চেয়ারেই দুইজন গাদাগাদি করে। একসাথে বসলে নিজেদের মধ্যে গুঁতোগুঁতি আর হাসাহাসি করতে সুবিধা হয় যে! বসির দাদু খাচ্ছেন। বাবুই পাপাইকে মা আগেই খাইয়ে দেন। অন্যদিন হলে ওরা এতোক্ষণে বিছানায় উঠে বালিশ নিয়ে মারামারিটা শুরু করে দিতো। আজ দাদুর খাওয়া দেখবে বলে অপেক্ষায় ছিলো। শুধু কি আজ, ওরা দুইদিন ধরে প্রতি বেলায়ই দাদুর খেতে বসার অপেক্ষায় থাকছে। দুদিন আগে ওদের বাবার এই মামাটি বেড়াতে এসেছেন, আর যেই না উনি খেতে বসলেন ওরা তো অবাক! এমনিতে কত শান্ত-শিষ্ট, খেতে বসলেই কেমন যে হয়ে যান! এক হাতে থালাটা আগলে রাখেন আর এক হাতে গাপুস গুপুস করে খেতে থাকেন। যেন খুব তাড়া আছে, এক্ষুনি খেয়ে শেষ না করলে যেন আর খাওয়াই হবেনা। আর চারপাশে কেমন ভয়-ভয় রাগ-রাগ চোখে তাকাতে থাকেন! দাদু অত বুড়ো নন কিন্তু খাওয়ার সময় মুখটা কেমন বুড়োটেও লাগে।

পারভীন সুলতানার তিনটি কবিতা

হিম হিম শীত শীতের মলিন আকাশ রঙটা ধুসর বা কাশ মেঘে থাকে মেখে   হুহু হিমেল বাতাস ঠাণ্ডা কী যে মাতাস শীত বুড়িকে হেঁকে।

মৌলি আখন্দের গল্প

Image
ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক আজ লামিয়ার জন্মদিন। ওর বয়স আজকে ছয় বছর পূর্ণ হলো।  সকাল থেকে আজকে বাসায় সাজ সাজ রব। আম্মু ভোরে উঠে রান্নাবান্না করছে। আব্বু বেলুন, মোমবাতি কিনে এনেছে। বাসা সাজানো হচ্ছে রঙ বেরঙের বেলুনে আর রঙিন কাগজ দিয়ে। আম্মু কেক বানাচ্ছে বেবি শার্ক থিম দিয়ে। লামিয়ার নতুন জামা বের করে রেখে দিয়েছে বিছানার ওপর। গোসল করে নতুন জামা পরবে লামিয়া। একটু পর গিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে জামাটা। 

শংকর দেবনাথের কবিতা

Image
পড়বো ছড়ার বই পড়তে পারি অ আ ক খ পড়তে পারি ছড়াও, মিথ্যে তবু আমায় কেন বদনামেতে জড়াও? লিখতে কি আর সবাই পারে? একটু ভাবো মাগো, বৃষ্টিও তো পড়তে পারে লিখতে পারে না গো। চোখের জলও শুধুই পড়ে কিচ্ছু লেখে না সে, গাছের পাতা হাওয়ায় পড়ে শিশির পড়ে ঘাসে। শীত পড়ে আর গরম পড়ে ইচ্ছে খুশি মত, লিখতে ভালো পারিনে তাই আমারই দোষ যত। ঘুমিয়ে পড়ে, জেগেও পড়ে, পড়ে খাটের থেকে, অ আ ক খ সত্যি বলো, ওরা কি কেউ লেখে? ইচ্ছে মত যাচ্ছে পড়ে, লিখছে সবাই কই! লিখবো না মা, আমি কেবল পড়বো ছড়ার বই।

নাফিসা নাহিয়ানের গল্প

Image
মিস্টার অ্যালজেব্রা রাত ১২টা বেজে ১মিনিট পার হয়েছে। একটা পেঁচা ডাকতেই মিস্টার অ্যালজেব্রা বিছানা থেকে উঠে পড়লেন। রোজকার মতো ধুলো পড়া জানালাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিষ্কারটায় নিজের চেহারা দেখে চুলগুলো এলোমেলো করে নিলেন। কিন্তু আজ কোন সাধারণ দিন নয়। আজ অনেক অনেক দিন পর কেউ এসেছে এই বাড়িতে থাকার জন্য। তাই তিনি মনের আনন্দে একটা গানের সুর গাইতে গাইতে নিজের অন্ধকার ধুলো পড়া ঘর থেকে বের হলেন। যারা এ বাড়িতে থাকতে এসেছে তাদের নাকি ছোট ছোট দুটি বাচ্চাও আছে। এই ভেবে মিস্টার অ্যালজেব্রা আরো খুশি হলেন। আমরা এখানে যে মিস্টার জেব্রার কথা বলছি, মানে মিস্টার অ্যালজেব্রা (মিস্টার জেব্রা বললে তিনি আবার রেগে যান) আদতে তিনি মোটাসোটা উঁচু লম্বা ধরনের একটি ভূত। এটুকু লিখতে এই মিস্টার অ্যালজেব্রা আমার কানের কাছে এসে হুংকার দিয়ে উঠলেন, "অ্যা!! ভূত বলে কি আমাদের কোনো সম্মান নেই? আমরা তো কোনো জড় বস্তু কিংবা জীবজন্তু নই যে আমাদের "একটি ভূত" বলতে হবে। 'একজন ভূত' লেখ। আমি বেশ থতমত খেয়ে গেলাম আবার ঠিক করে লিখতে শুরু করলাম আর মিস্টার অ্যালজেব্রা বলতে লাগলেন। বাচ্চাদের ভয় দেখানো বেশ সহজ।...

বেগম জাহান আরার গল্প

Image
  একজন রূপার কথা   - তুই বড়ো বিপদে ফেলিস ঝুমকি। খুব বিরক্ত হয়ে বলেন মারিয়াম। - কি বিপদ মা ? - বুঝতে পারছিস না ? - কি বুঝবো ? বলবে তো ? - গা থেকে সোয়েটার খুলে রূপাকে দেয়ার কি দরকার ছিলো ? - ওর শীত লাগছিলো মা। - ওদের এতো শীত লাগে না। - কি যে বলো না মা ? শুধু আমাদেরই শীত লাগে ? আমার তো আরও সোয়েটার আছে , তাই না ? একটা দিলাম তো কি হলো ? - দেখলি না , তোর মামির মুখ কেমন হয়ে গেলো ? - দেখিনি তো! কেনো হলো ? - কেনো যে কিছুই বুঝিস না ? - আমার জিনিস কাউকে দিলে মামির ক্ষতি কি মা ? - এটা কি তোর নিজের বাড়ি ? যেমন খুশি তেমন চলবি। - বা রে , নিজের মামার বাড়ি কি পরের বাড়ি হলো ? - তুই সত্যিই অবুঝ। তোকে কিছু বলাই বৃথা। তবে কাজটা   ঠিক করিসনি।   একমাত্র মেয়েকে বেশি বকা ঝকা করতেও পারে না মারিয়াম। তাহলে মেয়ের বাবার গোস্বা উঠে যাবে। নিজের বাড়িতে ঝুমকি যা করে করুক। পরের বাড়িতেও তাই করতে হবে ? সাড়ে তিন বছর পর এসেছিলো ভাইয়ের বাড়িতে। মেয়ের জ্বালায় সেটাও হবে না আর মনে হয়। রূপাকে সোয়েটার দেয়াটা ঠিক নয় কেনো , সেটা কিছুতেই তেরো বছরের মেয়ে ঝুমকির মাথায় আসে না। কতো বয়স হবে মেয়েটার ? ...

মৌলী আখন্দের গল্প

Image
  মিনির মন ভালো নেই মিনির মন আজকে ভালো নেই। আজকে খুব বকুনি খেয়েছে সে। ওহ, তোমরা তো জানোই না মিনি কে। মিনি হলো একটা নাদুস নুদুস বিড়ালছানা। মিনি যাদের বাসায় থাকে, সেই শায়লা আন্টি আর ইমতিয়াজ আংকেল খুবই ভালো মানুষ। ছোট্ট একটা বাবু আছে তাঁদের। নাম সিয়াম। সিয়াম এখনও নিজে নিজে হাঁটতে পারে না। ওয়াকিং চেয়ারে সারা বাসায় ঘুরে বেড়ায়। আজকে হয়েছিল কী, শায়লা আন্টি আর ইমতিয়াজ আংকেল একুরিয়াম আর অনেকগুলো লাল সোনালি আর কালো মাছ নিয়ে এসেছেন। মিনি কোনো দিনও এসব মাছ দেখেনি। একুরিয়ামে যখন মাছগুলো ঢালা হয়েছে, এইসব রঙিন মাছ খেলে বেড়াতে দেখে সে একটু লাফঝাঁপ শুরু করে দিয়েছিল। এক পর্যায়ে একুরিয়াম সই করে একটা লাফ মারতেই একুরিয়ামের ওপরে রাখা শোপিসটা কাত হয়ে গেছে পড়ে। তখনই শায়লা আন্টি শুরু করলেন বকুনি। “মাছ খাওয়াই না তোমাকে? একুরিয়ামের মাছ দেখে ছোচামি শুরু করে দিয়েছ?” মিনি বেচারি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। সে বেচারি “মিউ” ছাড়া আর কোনো শব্দ তো করতে পারে না। কেমন করে বোঝাবে খাওয়ার জন্য নয়, স্রেফ অবাক হয়েই মাছগুলো সই করে লাফ দিয়েছিল সে। অভিমানে মিনি আজকে খায়ওনি। এখন খিদেও লেগেছে জব্বর। কাতর শব্দে মিউ মিউ করে ঘুর...

পৃথিকা ইসলাম বৈশালীর গল্প

Image
  হারানো পুতুল   হ্যাপি বার্থডে টু মিথি ! সবাই সুর করে গানটি শেষ করলো, আজ মিথির জন্ম দিন। রিয়া , মাহী , মাহীর ছোট বোন মানহা, (সে অবশ্য খুবই ছোট, এখনো হামাগুড়ি দিয়ে চলে) সারিনা , মাইশা , নুশিন আর আমি সবাই এসেছি ওদের বাসায়। কেক কাটার পর মিথি আমাদের নিয়ে গেলো গিফট খুলতে। ওর বড়মামা একটা সুন্দর জামা দিয়েছে, মিথি তখন তখনই জামাটা পড়ে ফেলল। ওর নানি আর নানা মিলে একটা সোনার কানের দুল দিয়েছেন, মিথির তো কানে ফুটো নেই তাই সে সেটা মা-কে দিয়ে আসলো। ছোটচাচা এখন ভার্সিটিতে পড়েন, তিনি বেশি বড় কিছু না এনে, একটা পুতুল দিয়েছেন; পুতুলটা ছোট এক হাতের ভিতরই ধরা যায়। পুতুলটার সাথে আবার ওর জন্যে জামাও দেওয়া আছে। আর মিথির মেজমামা এত্তোগুলো বই নিয়ে এসেছেন। আমি জানি, মিথির বই পড়তে অনেক ভালো লাগে! আমি দিয়েছি একটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি। আমরা সবাই মিলে সেটা চালাতে শুরু করে দিলাম , মাহী আবার মুখ বাঁকা করে বলল, ‘’ হুহ মেয়েরা গাড়ি নিয়ে খেলতে পারেনা ! ওটা ছেলেদের খেলনা। ‘’ আমরা তো হই হই করে উঠলাম, ‘’কে বলেছে মেয়েরা গাড়ি নিয়ে খেলতে পারেনা ! ‘’ মাহী মুখ ভেংচে বলল, ‘’ সবাই জানে।‘’ আমরাও মুখ ভেংচে বলল, ‘’ হুহ...

নাহার তৃণার গল্প

Image
 অ্যান্ড্রোক্লস আর সিংহের গল্প বহু বহু বছর আগে অর্থ-বিত্তে বলবান মানুষেরা গরীব মানুষদের সাথে ভারী নিষ্ঠুর ব্যবহার করতো। এখন যেমন পশুর হাটে গরু-ছাগল ইত্যাদি বেচা-কেনা হতে দেখো না তোমরা? ঠিক সেভাবে গরীবদের ধরে এনে বিক্রি করা হতো। তাদের দিয়ে অমানুষিক ভাবে খাটিয়ে নেওয়া হতো। এইসব অসহায় মানুষেরা ‘দাস’ হিসেবে পরিচিত ছিল। সেরকম এক দাসের গল্প এটা। সে বহুকাল আগের কথা। রোমে অ্যান্ড্রোক্লস নামে এক গরিব দাস থাকতো। তার মালিক ছিল খুবই নিষ্ঠুর প্রকৃতির। অ্যান্ড্রোক্লসের সাথে মালিকটা একটুও সদয় ব্যবহার করতো না। সে কারণে একদিন সুযোগ বুঝে অ্যান্ড্রোক্লস মালিকের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেল। পালিয়ে এসে বেশ কিছু দিন অ্যান্ড্রোক্লস হিংস্র পশুতে ভরপুর গভীর এক জঙ্গলে লুকিয়ে থাকলো। কিন্তু সেই বনে খাবার খুঁজে পাওয়া ছিল ভীষণ কষ্টের। দিনের পর দিন, ঠিক মতো খেতে না পেয়ে অ্যান্ড্রোক্লস দুর্বল আর অসুস্হ হয়ে পড়লো। তার মনে ভয় ধরলো এভাবে না খেয়ে থাকতে থাকতে ফট্ করে একদিন সে মরে যাবে। মরণটা যেন শান্তিতেই হয় সেরকম একটা চিন্তাতেই অ্যান্ড্রোক্লস কাছেই এক গুহায় কোনো রকমে হাঁচড়েপাচড়ে ঢুকে নেতিয়ে পড়লো। শরীর দুর্বল থাকায় অল্প স...

সাদিয়া সুলতানার গল্প

Image
ইচ্ছে বেলুন ফায়জা আধা ঘন্টা ধরে কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করছে। কান্না চেপে রাখতে রাখতে ওর ছোট বুকের ভেতরটা ব্যথা করছে। ফায়জার মন খুব খারাপ। মা আজ ফায়জাকে মেরেছে। ফায়জার পিঠে চড় দিয়েছে মা। অথচ মা সবসময় বলে, বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলা নিষেধ। সবসময় তাদের সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে হয়। অথচ মা নিজেই ওকে চড় দিয়েছে। যদিও মা খুব জোরে চড় দেয়নি। ফায়জা তাতে ব্যথাও পায়নি। তবু ফায়জার বুক ব্যথা করছে। বুঝতে পারছে ফায়জা ব্যথাটা পিঠে নয় বুকের ভেতরে লেগেছে। ঘটনাটা ঘটার পর থেকেই ফায়জার মা বালিশে মুখ গুঁজে আছে। কোথায় চড় খেয়ে ফায়জার কাঁদবার কথা তা না, মা’ই জোরে জোরে কাঁদছে। রাইসা চুপচাপ খাটে বসে টিভি দেখছে। যেন কিছু হয়নি। রাইসা ফায়জার তিন বছরের বড় কিন্তু রাইসার কর্মকা- দেখলে মনে হয় ও ত্রিশ বছরের বড়। বড় আপি হলে যে বড় ভাব করার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কাজও করতে হয় তা রাইসা বোঝে না। এই যে মা যখন ফায়জাকে মারল তখন তো রাইসা এগিয়েই এলো না। উল্টো মিটিমিটি হাসল! যেন বেশ হয়েছে, মার খেয়েছে! আর ঠিক তখন শিলার মা এগিয়ে এসে ফায়জাকে কোলে তুলে না নিয়ে গেলে ফায়জার কান্না আর ঠেকানোই যেত না। শিলার মা ফায়জাদের বাসায় কাজ করে। শিলা ফায়জার সমান...

মাহবুব আজাদের গল্প

Image
  সিন্ধুর আর ইন্দুর শেরবাহারপুর জঙ্গলে বাঘ একদিন নদীতে পানি গিলতে গিয়ে দেখে, বিরাআআআট উঁচু এক জন্তু পাড়ে দাঁড়িয়ে। তার থামের মতো চারটা পা, কুলোর মতো দুটো কান, মুলোর মতো দুটো দাঁত, আর যেখানে নাক থাকার কথা, তার জায়গায় হাতের মতো এক মস্ত কী-একটা যেন। বাঘকে দেখে জঙ্গলে হরিণ-শম্বর-শূকর-বান্দর সবাই সেলাম ঠোকে, এমনকি জলের মস্ত কুমিরও তাকে সমঝে চলে, কিন্তু এই পেয়ারা গাছের সমান উঁচু জন্তুটার যেন কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। নাকের-জায়গায়-মস্ত-হাতের-মতো ঐ কী-যেনটা দিয়ে সে নদীর জল শুষে টেনে আনমনে নিজের পিঠে ছিটিয়ে চলছে তো চলছেই।  বাঘ ভাবলো, হয়তো জন্তুটা ওকে দেখেইনি। কুঁতকুঁতে চোখ ব্যাটার, কতটুকুই বা দেখতে পায়? বাঘ তাই গলা খাঁকরালো একবার। সে খাঁকরানি শুনে দূরে ঝোপ থেকে পাখি উড়ে গেলো, নদীর উল্টো পাড়ে হরিণের দল তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে শূকরের দলকে ডিঙিয়ে ছুট লাগালো বনের গহীনে, আর গাছে গাছে নানা জাতের বাঁদর কিচমিচ করে উঠলো, একটা পুঁটি মাছও নদী ছেড়ে তিড়িং করে লাফিয়ে উঠে ফের জলে ডুব দিলো, কিন্তু মস্ত জন্তুটা যেন পাত্তাই দিলো না বাঘকে। একটিবার ঘাড় ঘুরিয়ে কুলোর মতো কানদুটো খানিক নেড়ে সে হেঁকে উঠে বললো, “ভোঁওও...

শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্মৃতি স্মারক

Image
একুশের পলাশ শাওন মাহমুদ ছেলেবেলা থেকে হারিয়ে যাওয়া বাবাকে খুুঁজতে খুঁজতে এক সময় বয়স হবার সাথে সাথে জোর করে মেনে নিতে হয়েছিল যে, সে আর ফিরে আসবে না। সে সময়গুলোতে আমাকে বুঝ দেয়া হয়েছিল সাভারের স্মৃতিসৌধ আমার বাবার কবর। সেই বিশালতা আমাকে মুগ্ধ করতো। বিস্মিত করতো। গর্বিত করতো। বুদ্ধি হবার পর জানতে পেরেছি এই স্মৃতিসৌধ শুধু বাবা নয়, একাত্তরে তিরিশ লাখ শহীদের জন্য উৎসর্গীত। সেখানে বাবার কবর নেই। তখন প্রশ্ন করতাম, তাহলে বাবা কোথায়! পুরো বাংলাদেশ জুড়েই কি বাবার কবর! গত দশ বছর ধরে অনেক ভাবনা ভেবেছি, কোথায় গেলে শুধুমাত্র বাবাকে পাওয়া যাবে। তাঁর সাথে কথা বলা যাবে। জানতে পারবো সত্যি সত্যি সে আর আসবে না। মৃত মানুষের কবর না হলে তাঁকে মৃত ভাবা যায় কি! গত পাঁচ বছর আগে 'সবুজ পাতা' নামে একটি সংগঠনের সাথে যোগাযোগ হলে আমি আমার মনে চাওয়াটা জানিয়েছিলাম। আমার চাওয়া ছিল বাবাকে গাছ হিসেবে দেখতে চাই। অনেক চিন্তার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আরেফিন স্যারের কাছে ভয়ে ভয়ে বলতে গিয়েছিলাম, শহীদ মিনারের একদম এক কোণায় একটা জায়গা খালি আছে। সেখানে বাবার নামে একটা গাছ বুনতে চাই। সে আমাকে পূর্ণ সমর্থন এবং স্ব...

কবিতা - জুয়াইরাহ বিনতে জুলফিকার

Image
  খেয়াল হঠাৎ এলো করোনা সবার মনে ভাবনা কী জানি কী হয় সবার মনে ভয়। মাঝামাঝি সময় করোনার কেউ পাত্তা দেয় না আর কেউ পরে না মাস্ক ধোয় না কেউ হাত। ভাবে করোনায় করেছে  তারা বাজিমাত এসব দেখে করোনা হাসে মানুষ নিজের খেয়ালেই ভাসে। ......................................... (সপ্তম শ্রেণি, বয়স-১৩)

সোফি পারোভি রেইনের ধারাবাহিক গল্প

Image
দু ’ টি বিড়ালের অভিযান-৩ মিল্কি আর কিছু করতে না পেরে পুকুর পাড়ে বসে পড়ে। সে চারদিক তাকাতে লাগলো। পানি দেখে তার ভয় লাগছিল। হঠাত সে পুকুরে আরেকটা বিড়াল দেখতে পেলো। ধবধবে শাদা। আসলে সেটা ছিল মিল্কির প্রতিবিম্ব। মিল্কি তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করে, “এই তুমি কে? তোমার নাম কী?” বিড়ালটি কোন উত্তর দিল না “এই তুমি কথা বলছ না কেন?” মিল্কি আবার জিজ্ঞেস করলো। এইবার মিল্কি বোকার মত তাকে ধরতে গেলো আর পড়ে গেলো পুকুরের পানিতে। সে অনেক চেষ্টা করলো সাঁতার কাটতে কিন্তু ডুবে গেলো গভীর পানিতে। ছটফট করতে করতে সে জ্ঞান হারাল। কিন্তু জ্ঞান হারানোর আগে সে বুঝতে পারলো কে যেন তাকে কামড়ে ধরেছে। সেই পুকুরে থাকতো এক বোয়াল মাছ। সে অনেকক্ষণ ধরে বিড়ালটাকে লক্ষ্য করছিল। বিড়ালটার পড়ে যাওয়া সে দেখেছে। সে বিড়ালটাকে অনেক কষ্ট করে পানি থেকে তুলে পুকুরের পাড়ে এনে রাখল। বোয়াল মাছটি পানি থেকে বিড়ালটিকে দেখতে লাগলো। সে অপেক্ষা করতে লাগলো বিড়ালটির জ্ঞান ফেরার জন্য। এদিকে লিলি খুঁজে পাচ্ছে না সিল্কি আর মিল্কিকে (আসলে যে জিনজার)। সে কেঁদে কেটে একাকার করে রেখেছে পুরো বাসা। বাসার সবাই তাদের কমতি অনুভব করছিল। দুষ্টু খালাও মন খারাপ করে কা...

শিহান রিশাদের গল্প

Image
হারানো ঘড়ি রহস্য-২ শিহান রিশাদ তারপরের দিন সকালে রতনের মা গ্রামের বাড়িতে চলে গেল। দুপুরের দিকে যখন সজলর মা ও বাবা সেখানে যাচ্ছিলেন তখন দেখা গেল সজল ও রতন একা হয়ে যাচ্ছে্। তাই তাদের কে সাথে নিতে হল। পৌছানোর পর সজল বাসাটি একবার দেখলো। ও আরেক বার এখানে এসে ছিল। তখনকার কথা তার সেরকম মনে নেই। কারণ সেটা ৪ বছর আগে। সজল তামিমের ভাই অরিক এর কাছে গেল। রতন বড়দের মাঝে থাকলো। সজল অরিকের কাছে গিয়ে দেখলো সে কিছু একটা নিয়ে খুব চিন্তিত। সজল সেখানে গিয়ে বসলো। কিছু বলার আগেই অরিক বলে উঠলো, “খুবই অদ্ভুদ লাগছে।” “কেন?” “আমি শুধু গেলাম আর আসলাম দেখলাম তামিম কোথায় চলে গেল। আমি তো অবাক। আমি আরিককে বলেছিলাম কোথাও না যেতে আর ও কোথায় চলে গেল? আমি তখন তাকে সারা বাসা খুজলাম। কোথাও তাকে পেলাম না। শেষ পর্যন্ত না পেয়ে যখন দরজা খুলালাম তখন হঠাৎ একটা সাদা রং এর ট্রাক নিঃশব্দে চলে গেল। এই গ্রামে আগে কখনো এরকম ট্রাক দেখিনি। তাই আমি সাবধানে এটির পেছন পেছন আসতে থাকলাম। হঠাৎ ট্রাকটি একটু ঝাকুনি দিল। তখন ট্রাকের ভেতর একটা শব্দ শুনে আমি চমকে উঠলাম। কারো মুখ বন্ধ রাখলে যেরকম শব্দ করে সেরকম শব্দ আসছে ট্রাকটি থেকে। এবং এটি তামিম...

লুৎফর রহমান রিটন - ছবির গল্প

Image
নদীর আঁকা ছবি - 'বৃষ্টি'     ছোট্টবেলায় আঁকার হাতটা খুবই চমৎকার ছিলো নদীর। প্রচুর ছবি আঁকতে চাইতো। ওকে রঙ-তুলি আর কাগজ কিনে দেয়া হতো। নদী আঁকতো। ওর ছবি আঁকার মুড যখনই আসতো তখনই আঁকতে বসতো সে। এর সঙ্গে সকাল বিকেল কিংবা ছুটির দিনের কোনো সম্পর্ক ছিলো না। সপ্তাহে দু'দিন ওকে ওর মা নিয়ে যেতো শিশু একাডেমিতে, গান আর ছবি আঁকার ক্লাশে। সারাদিন আমি বাইরে বাইরে থাকতাম। নানান ধরণের কাজ আমাকে করতে হতো সংসারের খর্চাপাতি সংগ্রহের জন্যে। সেই কারণে সেই সকালে বেরিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত। ফিরে এসে দেখতাম ডায়নিং টেবিলের ওপর নদী ওর আঁকা নতুন ছবিটা রেখে দিয়েছে, আমাকে দেখাবে বলে। ছবির ওপরে দু'তিনটে পেপারওয়েট, যাতে বাতাসে উড়ে না যায় ছবিটা। খুব আগ্রহ নিয়ে জেগে থাকতো সে। নতুন ছবিটা দেখে বাবাই কি বলে সেটা শোনার জন্যে। সারাদিন নানান হ্যাপা আর ধকল শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত-ধ্বস্ত আমি বাড়ি ফিরে নদীর আঁকা দুর্দান্ত ছবিটা দেখে মুহূর্তেই চাঙ্গা হয়ে উঠতাম। শাদা কার্টিজ পেপারটায় অনিন্দ্যসুন্দর বর্ণিল কিছু মুহূর্তকে ধরে রাখতো নদী। ওর আঁকা ছবিগুলো বরাবরই ছিলো উজ্জ্বল বর্ণাঢ্য। ২. 'এড সাম স্পাইস টু ইয়োর লাইফ'-...

একুশের ছড়া- মারজানা সাবিহা শুচি

Image
  একুশের ছড়া   খোকন বলে , একুশ কি মা দেখতে সেটা কেমন ? মা হেসে কন , শোনো খোকন , আমি তোমার যেমন ! খোকন বলে , ধুত্তুরি ছাই তাই কখনো হয় ! তুমি আমার নয়নমণি একুশ তো তা নয় ! মা বললেন , হয়রে খোকন বুঝবি বড় হলে , বাংলার যে নয়নমণি একুশ তাকেই বলে !