শিহান রিশাদের গল্প

হারানো ঘড়ি রহস্য-২

শিহান রিশাদ





তারপরের দিন সকালে রতনের মা গ্রামের বাড়িতে চলে গেল। দুপুরের দিকে যখন সজলর মা ও বাবা সেখানে যাচ্ছিলেন তখন দেখা গেল সজল ও রতন একা হয়ে যাচ্ছে্। তাই তাদের কে সাথে নিতে হল। পৌছানোর পর সজল বাসাটি একবার দেখলো। ও আরেক বার এখানে এসে ছিল। তখনকার কথা তার সেরকম মনে নেই। কারণ সেটা ৪ বছর আগে। সজল তামিমের ভাই অরিক এর কাছে গেল। রতন বড়দের মাঝে থাকলো। সজল অরিকের কাছে গিয়ে দেখলো সে কিছু একটা নিয়ে খুব চিন্তিত। সজল সেখানে গিয়ে বসলো। কিছু বলার আগেই অরিক বলে উঠলো, “খুবই অদ্ভুদ লাগছে।”

“কেন?”

“আমি শুধু গেলাম আর আসলাম দেখলাম তামিম কোথায় চলে গেল। আমি তো অবাক। আমি আরিককে বলেছিলাম কোথাও না যেতে আর ও কোথায় চলে গেল? আমি তখন তাকে সারা বাসা খুজলাম। কোথাও তাকে পেলাম না। শেষ পর্যন্ত না পেয়ে যখন দরজা খুলালাম তখন হঠাৎ একটা সাদা রং এর ট্রাক নিঃশব্দে চলে গেল। এই গ্রামে আগে কখনো এরকম ট্রাক দেখিনি। তাই আমি সাবধানে এটির পেছন পেছন আসতে থাকলাম। হঠাৎ ট্রাকটি একটু ঝাকুনি দিল। তখন ট্রাকের ভেতর একটা শব্দ শুনে আমি চমকে উঠলাম। কারো মুখ বন্ধ রাখলে যেরকম শব্দ করে সেরকম শব্দ আসছে ট্রাকটি থেকে। এবং এটি তামিমের শব্দ! হঠাৎ করে ট্রাকটি জোরে চলতে শুরু করলো এবং আমি আর ট্রাকটি কে ধরতে পারলাম না। শেষের দিকে শুধু দেখলাম হলুদ রঙের জামা পরা একজনের হাত এর কনুই জনালা দিয়ে বের করে রাখলো।”

কথাটি শেষ করে আরিক একটা নিশ্বাস ফেলল। সজল তাকে শান্তনা দিল। তার পর বলল, “একটা জিনিসের সন্দেহ সময়ের সাথে বাড়ছে। কারণ, প্রথমে শুনলাম এখানে সবকিছু ওলট পালট হয়ে গেছে....”

“ওলট পালট?” আরিক বলল, “এখানে আবার কখন ওলট পালট হল?”

“রতন বলেছিল। সে যখন শহরে এসেছিল। যাই হোক, প্রথমে শুনে ছিলাম সবকিছু ওলট পালট হয়ে গেছে তারপর...”

হঠাৎ রতন এসে রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, “কি নিয়ে আলোচনা করছ ?”

অরিক উত্তরে বলল, “সজলর একটা জিনিসে সন্দেহ লাগছে। সন্দেহটা বলছে।” তারপর সজলর দিকে তাকিয়ে বলল, “বাকিটুকু বল।”

সজল বলল, “ হ্যাঁ, যা বলছিলাম। একদিন ওলট পালট হল, আরেকদিন রতনের ঘড়ি নিয়ে গেল, আরেকদিন তামিম কে কিডন্যাপ করা হল, তারপর আরিক দেখলো একটা ট্রাক, ট্রাকের ভেতরে আরিকের গলার শব্দ আর ট্রাকটি থেকে হলুদ রঙের জামা পরা লোক হাত বের করলো (ট্রাকের কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ সজলের পত্রিকায় দেয়া খবর ‘আকাশ থেকে পড়া রহস্যময় বস্তু’ এর কথা মনে পড়ে গেল) এসব শুনে আমার একটা ব্যাপার সন্দেহ হচ্ছে। আমি পত্রিকায় পড়ে ছিলাম একদল বিজ্ঞানী নাকি কি একটা জিনিস খুঁজছে। ওটা নাকি আকাশ থেকে পড়তে দেখা গেছে। ওটার আনুমানিক সাইজ নাকি....” বলে সজল একটু চিন্তা করলো। তারপর বলল, “আনুমানিক সাইজ হবে রতনের চুরি হওয়া ঘড়িটির সমান। তখন নাকি অপরিচিত লোকদের এটি খুঁজতে দেখা গেছে। যারা মানুষের সাথে একদমই ভালো ব্যবহার করে না। আমার মনে হয় যখন বাসাটি ওলট পালট হলো তখন তারা বাসায় ঢুকে সব কিছু ওলট পালট করে সেটি খুঁজে চলে গেছে। তার পরে যখন রতনের ঘড়ি চুরি হল তখন মনে হয় তারা আবার এসে রতনের ঘড়িটিকে তাদের সেই আকাশ থেকে বস্তু মনে করে নিয়ে গেছে। তারপরে তামিমকে কিডন্যপ করা হয়েছে। কিন্তু সেটা নিয়ে আমার মনে একটা প্রশ্ন এসেছে। তামিমের কাছে কি সেরকম কোন কিছু কি ছিল?”

সবাই সজলের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। অরিক একটু সাবধানে বলল, “আমারো সেরকম একটা প্রশ্ন ছিল। কারণ আমি তামিমকে দেখতাম সে কেন জানি সবকিছু একটু তাড়াহুড়া করতো।”

“আমিও এরকম খেয়াল করেছিলাম।” রতন বলে উঠলো, “আমিও খেয়াল করে ছিলাম যখন আমি এখানে ছিলাম। তামিম কেন জানি খাওয়া পড়ায়, সবসময় একটু অস্থির করত। কয়েকবার ও আমাকে কিছু বলতে গিয়ে থেমে যেত।”

সজল এবার সবকিছু শুনে বলে উঠলো, “এইত্তো। আমি একটু বুঝতে পারলাম। তামিম মনে হয় এরকম কিছু পেয়েছিল যেটা সে কাউকে বলতে চায়নি। তবে রতন কে বার বার বলতে গিয়ে সে থেমে গিয়েছিল। তারপরে নিশ্চই এটার খবর পেয়ে হলুদ জামা পড়া সন্দেহজনক বিজ্ঞানীরা (বিজ্ঞানী না বলে কিডন্যাপার বলা যায়) তামিম কে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে। কিন্তু সেটা কোথায়? কোথায় তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে?”

সজল কিছুক্ষণ ভাবলো। ভাবতে ভাবতে তার মনে পড়লো যে তার বাবা নিজের কাছে সবসময় একটি পত্রিকা রাখে। যদি তার বাবার কাছে কালকের পত্রিকাটি রাখে তাহলে সেখান থেকে কিছু জানা যেতে পারে। তখন সে রতন আর অরিককে তার বুদ্ধিটি খুলে বলল। তারপর সে বাবার কাছে গেল । বাবার কাছে গিয়ে দেখলো তারা বড়রা সবাই খুব গম্ভীর হয়ে কথা বলছে। সে বাবার কাছে গিয়ে বলল, “বাবা, আমাকে কি কালকের পত্রিকাটি দিতে পারবে?”

বাবা বলল, “কেন?”

“গতকালকের খেলার খবরটা দেখব।” আমি জানি যে মিথ্যা কথা বলা উচিত না, তবুও আমাকে এটা বলতে হল। বাবা আমাকে কালকের পত্রিকাটি দিলেন। আমি এটি নিয়ে অরিকের রুমে গেলাম। সেখানে গিয়ে পুরা খবরটা পড়লাম। সেখানে লেখা আছে, ‘একদল বিজ্ঞানী একটি বস্তু যেটি আকাশ থেকে মাটিতে পড়তে দেখা গেছে সেটি খুঁজছে। হঠাৎ আরেক দল অপরিচিত লোকদের এটি খুঁজতে দেখা গেছে। তাদের সবসময় দেখা যায় না। তবে যারা দেখেছেন তারা তাদের নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেছেন। তারা সাধারণত হলুদ জামা পড়ে থাকে। তার কারণটি কি কেউ জানে না। কিছু গোয়েন্দা তাদের পিছু নিয়ে জানিয়েছে ওরা কিছুদিনের জন্য থাকবে সাফেদপুরের সিকির নামের একটি গ্রামে.....।’

সিকিরে রতনের দাদার বাড়ি। সজল এইমূহুর্তে যেখানে আছে। মানে গ্রামের বাড়ি থেকে এটি কাছে। সজলের মনে হল, ওর সন্দেহটা কি তাহলে সত্যি?

(চলবে)

প্রথম পর্ব

Comments

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা