পৃথিকা ইসলাম বৈশালীর গল্প

 

হারানো পুতুল



 



হ্যাপি বার্থডে টু মিথি ! সবাই সুর করে গানটি শেষ করলো,

আজ মিথির জন্ম দিন। রিয়া , মাহী , মাহীর ছোট বোন মানহা, (সে অবশ্য খুবই ছোট, এখনো হামাগুড়ি দিয়ে চলে) সারিনা , মাইশা , নুশিন আর আমি সবাই এসেছি ওদের বাসায়।

কেক কাটার পর মিথি আমাদের নিয়ে গেলো গিফট খুলতে। ওর বড়মামা একটা সুন্দর জামা দিয়েছে, মিথি তখন তখনই জামাটা পড়ে ফেলল। ওর নানি আর নানা মিলে একটা সোনার কানের দুল দিয়েছেন, মিথির তো কানে ফুটো নেই তাই সে সেটা মা-কে দিয়ে আসলো। ছোটচাচা এখন ভার্সিটিতে পড়েন, তিনি বেশি বড় কিছু না এনে, একটা পুতুল দিয়েছেন; পুতুলটা ছোট এক হাতের ভিতরই ধরা যায়। পুতুলটার সাথে আবার ওর জন্যে জামাও দেওয়া আছে। আর মিথির মেজমামা এত্তোগুলো বই নিয়ে এসেছেন। আমি জানি, মিথির বই পড়তে অনেক ভালো লাগে!

আমি দিয়েছি একটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি। আমরা সবাই মিলে সেটা চালাতে শুরু করে দিলাম ,

মাহী আবার মুখ বাঁকা করে বলল, ‘’ হুহ মেয়েরা গাড়ি নিয়ে খেলতে পারেনা ! ওটা ছেলেদের খেলনা। ‘’

আমরা তো হই হই করে উঠলাম, ‘’কে বলেছে মেয়েরা গাড়ি নিয়ে খেলতে পারেনা ! ‘’

মাহী মুখ ভেংচে বলল, ‘’ সবাই জানে।‘’

আমরাও মুখ ভেংচে বলল, ‘’ হুহ বললেই হলো !’’

তারপর আবার সবাই মিলে গিফট খুলতে থাকি।

***

পরদিন সকালে উঠে খেলতে গিয়ে দেখি মিথি খুব উত্তেজিত হয়ে নিচে আসছে, কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই ও বলল, ওর নতুন পাওয়া পুতুলটা নাকি হারিয়ে গেছে।

‘’তুই ভালো করে খুঁজেছিস তোর বাড়িতে?’’

‘’গোটা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেছি কোথাও নেই।‘’

আমরা বেশ চিন্তিত হলাম। আমার মনে হচ্ছিল, কেউ ইচ্ছা করে ওটা নেয়নি তো? তারপর আবার মনে হলো, আমার বন্ধুরা তো চোর না কেউ কেন নেবে? চুরি করা যে খারাপ সেটা তো সবাই জানে! তাইনা! ঠিক করলাম কথাটা গিয়ে নিশাপু কে বলবো।

এই ফাঁকে নিশাপুর পরিচয়টা দিয়ে রাখি, নিশাপু আমার মামাতো বোন হয় । নিশাপুর মা-বাবা, অর্থাৎ আমার মামা-মামি অনেক বছর আগে মারা যান। তারপর থেকে ও আমাদের বাসায়ই থাকে। ওর আবার খুব গোয়েন্দা হবার শখ। পড়াশোনা শেষ এখন নাকি সে গোয়েন্দা হবে।

বাড়ি ফিরে নিশাপুর ঘরে গিয়ে দেখি ও বিছানায় আধশোয়া হয় একটা বই পড়ছে।

‘’কিরে টুশি?’’

‘’জানো কি হয়েছে?’’

‘’কি হয়েছে?”

‘’ কালকে জন্মদিনে মিথি একটা পুতুল পেয়েছিলো মনে আছে?”

‘’হুম’’

‘’রাতে সবাই যাওয়ার পর মিথি ওটা আর কোথাও খুঁজে পায়নি।‘’

‘’ওটা কেউ নিয়ে গেছে?’’

‘’আমার মনে হচ্ছে তাইই , আবার মনে হচ্ছে তাই না। তুমি বের করে দাওনা।“

‘’ তুই বলছিস আমার এই কেসটা নেওয়া উচিৎ?’’

‘’তুমিই না গোয়েন্দা হবে বলছো, এখন পুতুলটা খুঁজে গোয়েন্দাগিরির উদ্বোধন করো !’’

‘’গোয়েন্দা তো প্রায় হয়েই গেছি টুশি। এইযে ধর আজকে আমি নিচে যাইনি, কিন্তু আমি বলে দিতে পারি তুই কী খেলেছিস।‘’

‘’কী বলোতো?’’

‘’ব্যাডমিন্টন।‘’

“ওরেবাবা ! কি করে বললা ?’’

‘’তোর হাঁটুতে ধুলা লেগে আছে, আর তোর হাতের কালো ঘড়িটাতে ধুলার একটা ছাপ পড়েছে একদম লম্বা যেরকম র‍্যাকেটের হ্যান্ডেলের মতো। তোর র‍্যাকেট মেইবি মাটিতে পড়ে গেছিলো, তারপর তুই যখন তুলেছিস তখন হ্যান্ডেলটা তোর ঘড়িতে লেগে গিয়েছিলো।‘’

‘’একদম ঠিক ! --তাহলে পুতুলটা তুমি খুঁজছো?’’

‘’হুম। চল একবার মিথিদের বাসায় যাই।‘’

***

মিথিদের বাসায় নিশাপু তন্নতন্ন করে খুঁজলো কিন্তু কোথাও পেলনা পুতুলটা। তারপর হঠাৎ ও বসার ঘরের তক্তপোষের সামনে থেমে গেলো, এখানেই আমরা গিফট খুলেছিলাম।

অনেকক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে বললো, ‘’কি জানি একটা মনে পড়ছে টুশি, কিছু একটা আমি মিস করছি। ‘’ কিন্তু সেটা আর নিশাপুর মনে পড়লোনা।

এরপর আমরা গেলাম রিয়াদের বাসায়।

অনেকটা জেরা করার মতোই, নিশাপু রিয়া কে প্রশ্ন করলো,

‘’ওই পুতুলটা তোমার কেমন লেগেছে?’’

‘’ওটা অনেক সুন্দর আমার অনেক পছন্দ।‘’

নিশাপু আর কোনো প্রশ্ন করলোনা।

তারপর আমরা গেলাম মাইশাদের বাড়ি। মাইশাকেও একই প্রশ্ন করা হলো,

‘’ উমম ওটা সুন্দর তবে আমার গোল্ডির থেকে কম।‘’

সারিনা আর নুশিনকেও একই প্রশ্ন করা হলো। দুজনই বলল, ওদের ওটা ভালো লেগেছে পুতুলটা খুব সুন্দর।

মাহীকে জিজ্ঞেস করাতে ও বলল, ‘’আমি বুঝিনা মেয়েরা ওটা দিয়ে খেলে কি মজা পায়!’’

যাই হোক , নিশাপু বাড়ি ফিরে বিছানায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুচকে চিন্তা করতে লাগলো।

***
সন্ধ্যায় আমি আর থাকতে না পেরে নিশাপুর ঘরে গেলাম। আমি কি আর জানতাম নিশাপু ঠিক তখনই রহস্যের সমাধান করে ফেলেছে?

ঘরে ঢুকে দেখি নিশাপুর মুখে বিশাল হাসি।

আমাকে দেখে বলল, ‘’ পুতুল কোথায় পেয়ে গেছি টুশি।‘’

আমি অবাক হয়ে বললাম ,’’কোথায়?’’

‘’বলছি বলছি, তার আগে বল দেখি তোরা যখন গিফট খুলছিলি তখন কে কী করছিলো?’’

আমি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললাম,’’ আমি , রিয়া , মাইশা , নুশিন , মাহী আর সারিনা তক্তপোষে বসে গিফট খুলছিলাম, মা-রা সবাই সোফায় গল্প করছিলো, মানহা হামাগুড়ি দিয়ে এদিক সেদিক যাচ্ছিলো, বাবা-রা খাবার টেবিলে বসে গল্প করছিলো। ও হ্যাঁ তুমিও আমাদের সাথে বসে গিফট খোলা দেখছিলা। ‘’

‘’এখন বল দেখি পুতুল তাহলে গেল কোথায়?’’

এই সময়ই আমার নিশাপুর উপর রাগ ওঠে হেঁয়ালি না করে সরাসরি বলে দিলে হয়না !

‘’ উহ নিশাপু আর হেঁয়ালি কোরোনা তো! ‘’

‘’ওকে ওকে, তোর মনে আছে মানহা হামাগুড়ি দিয়ে এসে পুতুলটা নেয়? আর তখনই ওর মা এসে ওকে কোলে নিয়ে প্যারাম্বুলেটরে বসিয়ে দেয়, আমার বিশ্বাস ওটা প্যারাম্বুলেটরেই আছে। এই ছোট জিনিসটাই আমার এতোক্ষণ পর মনে পড়লো।‘’

আমরা তখন-তখনই মাহীদের বাসায় গিয়ে মানহার প্যারাম্বুলেটর বের করে দেখি...

ভিতরে হাসিমুখে পুতুলটা বসে আছে ।



[ ৭ম শ্রেণী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল]

Comments

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা