Posts

Showing posts from March, 2021

মাহবুব আজাদের গল্প

Image
  দেশপ্রেম কাকে বলে? ব্যাপারটা এমন নয় যে ‘দেশপ্রেম’ শব্দটা ইমা প্রায়ই শুনতে পায়। টিভিতে সে ডিসকভারি চ্যানেলে দেখেছে, দূর আফ্রিকার সরু সরু নদীর ঘোলাটে পানি ফুঁড়ে হঠাৎ ভুস করে মস্ত কুমির মাথাচাঁড়া দেয়; পড়ার বইতে এখানে-ওখানে তেমনই ঢঙে ‘দেশপ্রেম’ শব্দটা হঠাৎ সামনে চলে আসে। ইমা স্কুলে বাংলা ম্যাডামকে সরল মনে শুধিয়েছিলো, “ম্যাডাম, দেশপ্রেম কী?” ম্যাডাম আসনে আরেকটু ঠেস দিয়ে বসে চোখ বুঁজে হাত নেড়ে খনখনে গলায় শুধু বলেছেন, “দেশের প্রতি প্রেম দেশপ্রেম। এখন তোমরা পড়ার বইয়ের একান্ন ক্রমিকের পাতা খোলো। প্রথম প্যারাটা মন দিয়ে তিনবার পড়ো। …য়্যাই পেছনের বেঞ্চের লম্বু মেয়ে, খিখি করে হাসছো কেন? দাঁড়াও বেঞ্চের ওপর!”

অমর মিত্রের গল্প

Image
  দলমা মশায় দলমা মশায় ছোটকু থাকে ন’পাহাড়ি। ন’পাহাড়ি কোথায়, না অনেকদূর। বাসে কলকাতা থেকে সাত ঘন্টা তো হবেই। তার আগে পার হতে হবে দামোদর নদ। পার হয়ে যেতে হবে জঙ্গল। জঙ্গল পেরিয়ে ধু ধু মাঠ, তার ভিতরে একটুখানি জল, সেখানে বক বসে আছে চুপটি করে মাছের আশায়। একটু দূরে নেড়া পাহাড়ের কোলে বসে আছে মস্ত দুই পাখি। তারা মানিকজোড়। একসঙ্গেই থাকে। একসঙ্গে ওড়ে মস্ত ডানা মেলে। তা পেরিয়ে আবার জঙ্গল, বাস চলেছে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। জঙ্গল শেষ হলে দেখা যাবে দূরে নীল পাহাড়। ওই হল ন’পাহাড়ি। নটি টিলা পাহাড়ে ঘেরা ন’পাহাড়িতেই থাকে ছোটকু। সে খুব ছোট যে তা নয়, আবার খুব বড় যে তাও বলতে পারি না। তার বাবা পাথর ভাঙে নয় পাহাড়ের এক পাহাড় ঘোড়া-মুরগা পাহাড়ের মাথায় বসে। সকালে যায়, বিকেলে ফেরে। যত পাথর ভাঙবে, তত মজুরি পাবে। তারপর বাবা পাহাড় থেকে নেমে এসে নিচের কুন্ডাবাবুর অফিস থেকে মজুরি নেবে কুন্ডাবাবুর লোক পাথরের মাপ বলে দিলে। কুন্ডাবাবু ওই পাহাড়টা ইজারা নিয়েছে। গোটা পাহাড় ভেঙে লরিতে করে করে সে শহরে পাঠিয়ে দেবে। তাতে শহরের রাস্তা হবে, বড় বড় ইমারত হবে। ন’পাহাড়ির এক পাহাড় ভ্যানিশ হয়ে যাবে একটু একটু করে। কুন্ডাবাবু নাকি ন’পাহাড়ি...

লুৎফর রহমান রিটনের ছড়া

Image
হারাধনের দশটি ছেলে হারাধনের দশটি ছেলে হারিয়ে গেছে ভাই হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি কোথায় খুঁজে পাই? দশটি ছেলেই দেশের প্রেমিক দেশেরই গান গায় স্বাধীনতার জন্যে জীবন বিলিয়ে দিতে চায়। অত্যাচারী শাসকগুলোর মসনদে দেয় হানা হারাধনের দশটি ছেলের নাম সকলের জানা। ইংরেজদের দুঃশাসনের তখন গ্রহণকাল দুইশো বছর নিপীড়নের,রক্তে ভেজা,লাল। একটি ছেলে বললো বিদায় দে মা ঘুরে আসি ফাঁসির দড়ি গলায় পরেও মুখে অটুট হাসি। সোনালি অক্ষরে লেখা সেই ছেলেটার নাম দুঃসাহসী মরণজয়ী দীপ্র ক্ষুদিরাম।

নিলয় নন্দীর গল্প

Image
মাটির রং লাল   দড়ি ধরে টানতে টানতে শামলীকে নিয়ে উঠোনে ঢোকে কাশেম। প্যন্টের দড়িটা ওর কখন ছিঁড়ে গেছে , কোমড়ের কাছটা টেনে এনে বাঁধতে থাকে একসাথে। এই ফাঁকে শামলী উঠোনের কোনে ফুলগাছে মুখ গুঁজে দিতে যায়। কাশেম দৌড়ে গিয়ে গলার দড়িটা হাতে তুলে নিয়ে ফিরে আসে , ‘ ও খালা , শামলীকে এই ধারে বেন্ধে দেব না গোয়ালে তুলে রাখব ? ’ ‘ গোয়ালেই তুলে রাখ বাবা , ’ শানুর আম্মা বারান্দা থেকে হাত নাড়ে। ‘ আবু ভাই পরে ধোঁয়া দিয়ে আসবে যা। ’ গরুটাকে গোয়ালে বেঁধে রেখে কাশেম ফিরে আসে। শানুর আম্মা আঁচলে বেঁধে রাখা পয়সাটা কাশেমের হাতে দিয়ে ভ্রু কুঁচকান , ‘ বেশি মিষ্টি খেলে পেটে কী হয় , জানিস ? ’ কাশেম উঠোনের কোনে গিয়ে মাথা চুলকায় , হাত নেড়ে ডাকে শানুকে। শানু গিয়ে মাথায় দেয় এক চাপড় , ‘ যা বাড়ি যা ! ’ ‘ শানু ভাই , ’ কাশেমের গলার স্বর খাদে নেমে আসে , ‘ মফিজ কাকার দোকেনে কী দেখেছি জানো ? ’ ‘ কী ? ’ ‘ পতাকা ! বাংলা দেশের পতাকা ! ’

সোফি পারোভি রেইনের গল্প

Image
দু’টি বিড়ালের অভিযান—৪ (শেষ পর্ব)  জেলে তার বন্ধুকে বলল, “আজকে ঝুড়িটা কেমন ভারী ভারী লাগছে।“ তার বন্ধু বলল, “ আজ মনে হয় বেশি মাছ পেয়েছিস তুই। কথা না বলে তাড়াতাড়ি বাজারে চল! দেরী হয়ে গেলে সব মানুষ চলে যাবে।“ নীল-বাজার পৌছে যেই জেলে ঝুড়িটা খুললো অমনি দৌড় দিলো মিল্কি। জেলে চিৎকার করে উঠলো। সে ভেবেছে বিড়াল সব মাছ খেয়ে ফেলেছে। বাজারে বিড়ালের পেছনে সবাই ছোটাছুটি শুরু করলো। বাজারে লাগলো তুলকালাম কাণ্ড। মিল্কি ছুটতে ছুটতে এসে পৌঁছালো নীল-বাজার আবাসিক এলাকায়। হাঁটতে হাঁটতে মিল্কি তার হারানো মা’কে দেখতে পেলো। সে গিয়ে মা’কে জড়িয়ে ধরলো। মা বলল,” কী রে তুই! তুই এখানে কীভাবে এলি?” মিল্কি সব খুলে বললো প্রিয় মা’কে। মা মিল্কিকে বলল,” আমি তোদের রেখে পালিয়ে যাইনি কিন্তু! আমি বারান্দা দিয়ে নিচে পড়ে গিয়েছিলাম। আমি আর বাসার উপরে উঠতে পারিনি। বাসার নিচে অনেকক্ষণ বসে ছিলাম যাতে কেউ আমাকে দেখে। কিন্তু কেউ এলো না। তাই এখানে ঘুরে বেড়াই।“ মিল্কি বলল,” চলো মা বাসায় যাই। তুমি আমাকে বাসার সামনে নিয়ে চলো।“ মিল্কি আর তার মা বাসার নিচে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পড়ে দেখে খালা বাসায় ঢুকছে। অমনি তারা মিয়াও মিয়াও করে ডাকতে থা...

দেবাঙ্গনার শ্যাডো থিয়েটার

Image
এটি একটি ছায়া গল্প, শোনাচ্ছেন দেবাঙ্গনা সারস ও শেয়ালের গল্প  (ছবির ওপর ক্লিক করে ইউটিউবে দেখা যাবে) 

গুল-এ-আফরোজের গল্প

Image
  মোবাইল চোর প্রায় প্রতি রাতেই চোর আসে শাফিনদের বাসায়। বাবা মা দুজনই চিন্তিত এটা নিয়ে। শাফিন যে ঘরে ঘুমায় সে ঘরে দুটো জানালা। রাতে শোবার আগে মা শক্ত করে জানালা বন্ধ করে দিয়ে যায়। অথচ প্রতি সকালে জানালার একটা পাল্লা খোলা পাওয়া যায়। একদিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে শাফিন দেখতে পেলো জানালার পাশে কার যেন ছায়া হেঁটে বেড়াচ্ছে। একটি নয় দুটি। ভয়ে শাফিনের মুখ বন্ধ হয়ে গেল। বুকটা শুকিয়ে গেছে। চিৎকার করার শক্তিও উবে গেছে। 

শিহান রিশাদের গল্প

Image
হারানো ঘড়ি রহ্স্য-৩   তারপরের দিন সকাল। সজল সেখানেই আছে। বড়রা এখন সবাই একসাথে থানায় যাচ্ছে। রাতের বেলা তার মা সজল আর রতনকে বলে দিয়েছিল যে তামিমকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। ওর মা জানে না যে সজল আর রতন এটা জানতো । সজল ও সেটা বলেনি । ছোটরা ছাড়া সবাই থানায় গেল। যারা গেল না তাদের মধ্যে কেউ বড় নয়। তারা হল সজল, রতন আর অরিক। ওরা একসাথে বসলো। সজল বলল, “ ওদের ঠিকানা যেহেতু জেনে গেলাম তাহলে ওই জায়গাটার সামনে দিয়ে ঘুরে আসলে ভালো হয়। তাই না? ” রতন আমতা আমতা করে বলল, “ যেতেই হবে? না গেলে হয় না? ” সজল বলল, “ ভয় পেয়েছো নাকি? ভয় পেলে তোমার যেতে হবে না। ” কথাটি শুনে রতনের একটু আপমান লাগলো। তাই সে বলল, “ আমি ভয় পেয়েছি এটা তোমাকে কে বলল? ” “ তোমার কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে। ” সজল এবার অরিকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “ কারা কারা যেতে চাও? ”

প্রজ্ঞা মৌসুমীর গল্প

Image
ওরাংওটাং ও দেয়ালঘড়ি তুতুলের জ্যাঠুর বেজায় রাগ। তুতুলরা হয়তো ব্যাট-বল নিয়ে উঠোনে খেলছে। জ্যাঠু কোত্থেকে গুরুম করে এসে বলবে- 'এই হচ্ছেটা কি ওরাংওটাংয়ের দল!’ এতদিনে তুতুলরা জেনে গেছে- ওরাংওটাং হলো লেজ ছাড়া লাল রঙের বানর, ইংরেজী বানান Orangutan । তুতুলরা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসে। সব ভাইবোনরা মিলে অনেক মজা করে, ধানক্ষেতে লুকোচুরি খেলে, আম বাগানে দৌড়ুয়, নৌকো চড়ে, দুপুরে পুকুর পাড়ে রোদ পোহানো কচ্ছপ ধাওয়া করে, লিচু গাছে উঠে লিচু চুরি করে। তবে জ্যাঠু দেখলেই বলবে- ‘এই ওরাংওটানের দল পড়তে বস! শুধু দুষ্টুমি!' ছু্টিতেও বই পড়তে ভালো লাগে কারো!