শিহান রিশাদের গল্প

হারানো ঘড়ি রহ্স্য-৩

 


তারপরের দিন সকাল। সজল সেখানেই আছে। বড়রা এখন সবাই একসাথে থানায় যাচ্ছে। রাতের বেলা তার মা সজল আর রতনকে বলে দিয়েছিল যে তামিমকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। ওর মা জানে না যে সজল আর রতন এটা জানতোসজলও সেটা বলেনিছোটরা ছাড়া সবাই থানায় গেল। যারা গেল না তাদের মধ্যে কেউ বড় নয়। তারা হল সজল, রতন আর অরিক। ওরা একসাথে বসলো। সজল বলল, ওদের ঠিকানা যেহেতু জেনে গেলাম তাহলে ওই জায়গাটার সামনে দিয়ে ঘুরে আসলে ভালো হয়। তাই না?

রতন আমতা আমতা করে বলল, যেতেই হবে? না গেলে হয় না?

সজল বলল, ভয় পেয়েছো নাকি? ভয় পেলে তোমার যেতে হবে না।

কথাটি শুনে রতনের একটু আপমান লাগলো। তাই সে বলল, আমি ভয় পেয়েছি এটা তোমাকে কে বলল?

তোমার কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে। সজল এবার অরিকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কারা কারা যেতে চাও?

দেখা গেল অরিক ও রতন যেতে রাজি হয়েছে। সজল বলল, তাহলে সবাই চলো।

 

কাজেই ওরা বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলো রতন দেখলো সজল দড়ি, ছুড়ি,পাথরসহ আরো কিছু একটা ব্যাগের ভেতর ঢুকাচ্ছে। সেটা দেখে রতন জিজ্ঞেস করল, সজল তুমি ব্যাগে কি ঢুকাচ্ছো?

সজল বলল, তুমি দেখতে পাচ্ছো না?

অরিক এবার সজলের দিকে তাকালো। আর জিজ্ঞেস করলো, দড়ি, ছুড়ি, পাথর এগুলো কেন ঢুকাচ্ছো?

সজল বলল, যদি এটা সত্যি হয় যে হলুদ জামা পরা অদ্ভুত লোকেরা তামিমকে কিডন্যাপ করেছে তাহলে খালি হাতে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। তাই না?

অরিক বলল, হ্যাঁ"

রতন সজলকে জিজ্ঞেস করলো, বিজ্ঞানি আর ওই অদ্ভুত লোকের মধ্যে কি প্রতিযোগিতা হচ্ছে?

সজল রতনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল, হঠাৎ করে এটা জিজ্ঞেস করছো কেন?

রতন বলল, পত্রিকার মধ্যে খবরটা দেখনি? যে বিজ্ঞানিদেরকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

সজল বলল, বুঝেছিকোন লড়াই হচ্ছেনা। হলুদ জামা পড়ে থাকে যারা আমার মনে হয়না ওদের এটি খোঁজার কোনো পারমিশন দিয়েছে আমার মনে হয় ওই লোক গুলো টাকার লোভে এগুলো করছে। যারা সত্যিকারের বিজ্ঞানি তারাই সত্যি সত্যি এটি খুঁজছে।

আচ্ছা।

হাঁটতে হাঁটতে ওরা দেয়াল ঘেরা একটি চার তালা বিল্ডিং এর সামনে পৌঁছালবিল্ডিংটির সামনে মাঠের  দেয়ালের মাঝে গেট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া আছে। সজল আর অরিক সেটার চারদিকে ঘুরলো। ঘুরে কিছু পেল না। রতন সজলকে জিজ্ঞেস করল, “সজল, বড়দের কেউ ঘরে এসে যদি দেখে আমরা কেউ নেই তাহলে তারা কি বলবে?

সজল কিছু বলার আগেই অরিক বলে উঠলো, বড়রা আসতে আসতে দেরি হবে। যদি তাড়াতাড়ি আসে তাহলে সেটা হবে দুপুরের পরে

সজল বলল, এটা নিয়ে চিন্তা করছো কেন? তামিম কতো বিপদে আছে এটা একবার চিন্তা করো।

অরিক বলল, ইশ। যদি কোন ভাবে তামিমকে উদ্ধার করা যেতো।

রতন বলল, বড়রা তো পুলিশকে জানাতে গিয়েছে। পুলিশরা নিশ্চই ধরে ফেলবে।

সজল বলল, কোন ভাবে যদি গেটটা পার হওয়া যায় তাহলে ভেতরটা দেখা যেতে পারে

অরিক বলল, সজল তুমি না দড়ি এনেছিলে? সেটা দিয়ে পার হওয়া যাবে না?

সজল বলল, হ্যাঁ। কিন্তু দড়িটা ধরে রাখার জন্য ওখানে কেউ নেই

অরিক বলল, রতন, তুমি গেটের নিচের ফাঁক দিয়ে হাত ঢাকিয়ে দেখ তো বাঁধার মতো কিছু আছে নাকি।

রতন গেটে নিচে ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দেখলো কিছু আছে নাকি দেখলো একটি হুকের মতো কি একটা আছে। দড়িটা যদি গেটের উপর ছুড়ে মেরে ওখানে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে হুকের মতো জিনিসটার সাথে বেঁধে নেওয়া যাবে। রতন হাত বের করে সজলকে বলল, একটা দড়ি ছুঁড়ে মেরে ওদিকে নিয়ে নিয়ে গেলে সেটা গিঁট বেঁধে ওঠা যাবে।

সজল বলল, দড়িটা তো বাতাসের জন্য ওত উপরে উঠতে পারবে না।

অরিক বলল, দড়ির সাথে পাথর বেঁধে দিলে মনে হয় উঠতে পারবে।

সজল বলল, চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। তবে সাবধানে শব্দ ছাড়া করতে হবে।

সজল তার ব্যাগ থেকে পাথর ও দড়ি বের করলো (দড়িটিতে আগে থেকে প্রত্যেক ৪ ইঞ্চিতে গিঁট বাঁধা ছিল।) পাথরটি দড়ির সাথে বেধে এটি অরিককে দিল। অরিক তার সর্বচ্চো  শক্তি দিয়ে এটি ছুঁড়ে মারলো। পাথরটি গেটের উপর লেগে একটু শব্দ করে খোলা জায়গাটির ভেতরে পড়লো। ভাগ্য ভালো কেউ আসলো না। রতন গেটের নিচে হাত ঢুকিয়ে দড়িটি পাথরসহ হুকটিতে বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করে দেখলো। দেখলো এটি পাথরের জন্য ঢুকছে না। তাই সে সজলকে বলল, সজল তোমার ব্যাগ থেকে ছুরিটা দাও তো।

সজল তার ব্যাগ থেকে ছুরিটা বের করে রতনকে দিল। রতন সেটি দিয়ে দড়ি দিয়ে বাঁধা পাথরের উপর দড়িটি কেটে দিল। তারপর দিয়ে সেখানে কয়েকটি গিঁট ভাল করে বেঁধে দিল। তারপর দড়ির আরেক প্রান্ত হুকটিতে বেঁধে দিল যাতে একদিকে উঠলে অন্যদিকে পিছলে না যায়। রতন অরিক কে আগে যেতে বলে কারণ অরিকের শক্তি সবচেয়ে বেশি। এবার অরিক দড়িটি ধরে প্রথম গিঁটটির উপর পা দিল। আর হাতের সবচেয়ে কাছের গিঁটের মধ্যে এক সেকেন্ডের জন্য হাতের উপর শরীরের সব ভার দিয়ে পায়ের উপরের গিঁটটিতে পা রেখে শরীরের ভারটি হাত থেকে ছেড়ে পায়ের উপর দিল। এরপর হাতটি তার উপরের গিঁটে হাত দিল। এরকম করে সে উপরে উঠতে লাগলো। উঠতে উঠতে একসময় গেটের উপরে উঠে গেল। এবার গেটের বাহির থেকে সজল ও রতন দড়িটা তাদের সর্বচ্চো শক্তি দিয়ে টেনে রাখলো যাতে অন্যদিকে অরিক নিচে নামতে পারে। কিছুক্ষণ পর গেটের ভেতর লাফ দেওয়ার একটা শব্দ শোনা গেল। তারপর দেখা গেল গেটের নিচ থেকে অরিকের হাত বের হয়ে নড়তে লাগলো। এটা থেকে বোঝা গেল অরিক তাদের উপরে উঠতে বলছে। তাই তারপর রতন উঠতে লাগলো। এরপর সজল উঠতে লাগলো। সে যেরকম ব্যাপারটা সোজা ভেবেছিল আসলে সেটা এত সোজা না। এটা করতে গেলে অনেক শক্তি খরচ করতে হয়। আরেকটা সমস্যা হলো গিঁট বাঁধা থাকলেও এখানে নিজের ওজনের জন্য হাত পিছলে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সজল নিচে নামতে পারলো। নামার পর রতন সজলকে বলল, আমরা যদি এখানে তামিমকে না পাই তাহলে কি হবে?

সজল জবাব দিল, যদি না পাই তাহলে আবার পালিয়ে চলে আসবো। আর পালিয়ে আসার জন্য উপায় এখানে কেউ আসার আগে এখন খুঁজে নিতে হবে।

সজলের কথায় সায় দিয়ে রতন ও অরিক চারদিকে তাকিয়ে দেখলো মাঠের মধ্যে অনেক কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এর মধ্যে চিপসের প্যকেট থেকে শুরু করে সিগারেট, গাড়ির টায়ার, কার্পেট, বোতল, ইত্যাদি। এগুলো কোথা থেকে আসে কে জানে। এখান থেকে কয়েকটা জিনিস নেয়া যেতে পারে। তবে প্রস্তাতির জন্য সবার আগে কোনো কিছু আগে খুঁজতে হবে। তাই তিনজন মিলে কয়েকটা জিনিস খুঁজতে লাগলো। তেমন কিছু না পেলেও একটা বোতল, গোল ইলেস্টিক আর একটা বিশাল বড় ফিতা পেলএগুলো অস্ত্র হিসেবে মোটামোটি ভালো ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর ওরা বিল্ডিংটার কেনো জালানা আছে নাকি খুঁজলো। উত্তর দিকে খোঁজার পর ভেতরে ঢোকার দরজাটি পেলো। দরজায় কোন দারওয়ান নেই। মনে হয় চা খেতে গিয়েছে। দরজায় তালা মারা। দরজার উপরের তলা থেকে সব তলায় জালানা আছে। দ্বিতীয় তলার জানালাটা খোলা। জানালার পাশে পাইপ উঠে গেছে। পাইপ দিয়ে ওঠা সম্ভব কিনা দেখলো। তবে হাত দিয়ে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা দেখে আর ওঠার চেষ্টা করল না। তাই তিনজন যখন চিন্তা ডুবে আছে তখন সজল হঠাৎ একজনকে দেখে চিৎকার করতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিল। কারণ মানুষটি হচ্ছে তামিম। রতন ও অরিকও তামিমকে দেখে ফেলেছে। রতন তামিমের কাছ থেকে জানতে চাইল সে কিভাবে পালিয়ে এসেছে। তামিম ফিসফিস করে বলল, এখন সেটা বলার সময় নেই। আমাদের ধরে ফেললে বিপদ।

সবাই গেট দিয়ে বের হবার জন্য যখন প্রস্তুত হচ্ছিল তখন সজল ব্যাগ থেকে পাথর, ছুড়ি, ফিতা বের করে পকেটে যতটুকু জায়গা হয ততটুকু নিয়ে নিল। হঠাৎ কিছু বোঝার আগে পাঁচ বা ছয়জন হলুদ রঙের জামা পরা লোক এসে চেপে ধরে ফেলল। পালানোর চেষ্টা করেও কোন লাভ হল না।

Comments

  1. পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম!

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা