গুল-এ-আফরোজের গল্প

 মোবাইল চোর



প্রায় প্রতি রাতেই চোর আসে শাফিনদের বাসায়। বাবা মা দুজনই চিন্তিত এটা নিয়ে। শাফিন যে ঘরে ঘুমায় সে ঘরে দুটো জানালা। রাতে শোবার আগে মা শক্ত করে জানালা বন্ধ করে দিয়ে যায়। অথচ প্রতি সকালে জানালার একটা পাল্লা খোলা পাওয়া যায়। একদিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে শাফিন দেখতে পেলো জানালার পাশে কার যেন ছায়া হেঁটে বেড়াচ্ছে। একটি নয় দুটি। ভয়ে শাফিনের মুখ বন্ধ হয়ে গেল। বুকটা শুকিয়ে গেছে। চিৎকার করার শক্তিও উবে গেছে। 


আরেকদিন দেখা গেল জানালার পর্দা সরিয়ে টর্চ জ্বেলে কী যেন খুঁজছে। শাফিন নড়তেও সাহস পেল না চোরের সাহস দেখে। সে নিঃশ্বাস বন্ধ করে পড়ে থাকলো চুপচাপ। তার মুখের ওপর টর্চ এসে পড়লো একসময়। চোর বোধহয় নিশ্চিত হয়ে নিল সে ঘুমিয়ে আছে। আরো কিছুক্ষণ পর। জানালা দিয়ে লম্বা চিকন একটা লাঠি ঢুকে পড়লো। লাঠির আগায় কী যেন একটা বাধা। বিছানা থেকে তিন ফুট উঁচু দিয়ে শাফিনের শরীর পার হয়ে লাঠিটা বিছানার পাশে রাখা ওয়াড্রোবের দিকে চলে গেল। আড়চোখে সে দেখলো ওয়ারড্রোবের ওপর রাখা একটা মোবাইল ফোন রুমালের মধ্যে টপাটপ পেড়ে  নিল। বেশ কয়েকটা ফোন আছে ওখানে। শাফিনই রেখেছে কয়েকদিন আগে। তারপর লাঠিটা আস্তে করে পিছলে বেরিয়ে গেল। মোট পাঁচবার লাঠিটা আসা যাওয়া করলো। চোরেরও খাটনি কম হলো না। 


চোখের সামনে দিয়ে মোবাইল ফোনগুলো এভাবে চলে যেতে দেখে শাফিনের মধ্যে ভয়ের বদলে খিকখিক জাতীয় একটা হাসি বেরিয়ে গেল। তাহলে এই ব্যাপার। এই ফোনগুলো চুরির মতলবেই গত কয়েকদিন ঘোরাঘুরি। যাক আজকে শেষ হবে মিশন। চোরকে মনে মনে টা টা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো শাফিন। 


ওগুলো ছিল বাসার নষ্ট মোবাইল ফোন। একটা গবেষণার কাজে এখানে রাখা আছে। বাবার কলিগ ইঞ্জিনিয়ার আংকেল ওখানে কী একটা ডিভাইস দিয়ে ফোন লোকেটর বানাবার চেষ্টায় আছেন। ফোনটা কোথায় আছে যন্ত্রটা আংকেলকে জানিয়ে দেবে। ওগুলো কেউ ধরলেই জেগে উঠে এবং ক্যামেরা সচল হয়ে যায়।


মোবাইল চোরদের ধরা পড়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।


Comments

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা