ফারিহা শাহরিনের গল্প
কেহেতু
কেহেতু শব্দটা জিনিয়ার নিজের আবিষ্কার। স্কুল থেকে ফেরার পর সে তার আবিষ্কারের কাহিনি বলতে বলতে কানের পোকা বের করে ফেলেছে সবার। ক্লাস থ্রির একটা মেয়ে এত কথা বলতে পারে সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ষান্মাসিক পরীক্ষায় খারাপ করার পর বন্ধুরা তাকে নিয়ে ক্লাসে হাসাহাসি করেছিল তারও শোধ নেয়া হয়ে গেছে আজ। ম্যাডাম বলেছে জিনিয়া এক বিশেষ রকমের জিনিয়াস। তাকে শব্দবিজ্ঞানী উপাধি দেয়া হয়েছে শিরিন ম্যাডামের পক্ষ থেকে।
যেহেতু শব্দটি শেখানোর সময় কেহেতু শব্দটি আবিষ্কার করে জিনিয়াস জিনিয়া। সে বলে যেহেতুর অর্থের মতো কেহেতুর একটা অর্থ আছে। যেহেতু শব্দের অর্থ হলো ‘যে কারণে এমন হলো’।
একইভাবে হিসেব করে জিনিয়া মনে করলো ‘কার জন্য এমন হলো’ বাক্যটি সংক্ষেপে কেহেতু হতে পারে। কেহেতু শব্দ দিয়ে সে একটা বাক্য রচনাও করে ফেললো। যেমন- ‘কেহেতু নাদিম’ বললে বোঝাবে নাজিমই এই ঘটনার জন্য দায়ী। নাদিমের কারণে এমনটি হলো।
বিষয়টি নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক হাসাহাসি হলো। ক্লাস টিচার কিছুতে মানতে রাজী নন এমন উদ্ভট ধারণা। তখন প্রিন্সিপ্যাল শিরিন ম্যাডাম ক্লাসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি হৈ চৈ শুনে থেমে দাড়ালেন। তারপর ক্লাসে ঢুকে জানতে চাইলেন এসব কী হচ্ছে। তখন ক্লাস টিচার ব্যাপারটা তাঁকে বুঝিয়ে বললেন। তারপর বললেন জিনিয়া একটু বোকা, তাই এমন একটা উদ্ভট কথা বলেছে। তিনি জিনিয়াকে শাসন করছেন যেন এরকম বোকামি আর না করে।
কিন্তু শিরিন ম্যাডাম একটু ভাবলেন, তারপর বললেন- জিনিয়াকে খানিক পরে আমার ঘরে পাঠান তো।
একথা শুনে জিনিয়ার আত্মরাম খাঁচাছাড়া। নিশ্চয়ই কঠিন বকুনি দেবেন প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম। জিনিয়া ক্লাস টিচারের সাথে বুকের ভেতর ধুপপুক করতে থাকা ভয় নিয়ে তাঁর কক্ষে ঢুকলো। তারপর ভয়ে ভয়ে তাকালো ম্যাডামের দিকে। ভীষণ কড়া এই ম্যাডাম। যদিও কখনো বকা দেয়নি। কাউকে মারতে দেখেনি সে। তবু তাঁকে দেখলেই কেন যেন ভয় লাগে।
-তুমি কী আমাকে ভয় পাচ্ছো জিনিয়া?
-(জিনিয়া চুপ)
-তুমি কী কোনো অপরাধ করেছো?
-(জিনিয়া চুপ)
-আমি তোমাকে কত পছন্দ করি তুমি সেটা জানো?
-(জিনিয়া ছলছল চোখ তুলে তাকালো)
-আমার কাছে এসো
-(জিনিয়া ঘামতে ঘামতে কাছে গেল)
-শোনো বোকা মেয়ে। তোমার নতুন শব্দ আবিষ্কারে আমি খুব খুশী হয়েছি।
-আ.. আ.. আমি ম্যাডাম….(জিনিয়া তোতলাচ্ছে)
-তুমি খুব বুদ্ধিমতি। তোমার মধ্যে সৃজনশীলতা আছে। তুমি যুক্তি দিয়ে ভাবতে পারো। তোমার নতুন শব্দটা আমি নিলাম। আজ থেকে তুমি আমাদের শব্দবিজ্ঞানী।
-(জিনিয়া এবার ভ্যাঁ করে কেঁদেই ফেললো)
শিরিন ম্যাডাম উঠে এসে জিনিয়াকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন- এখন তুমি ক্লাসে যাও।
এইভাবে আমাদের জিনিয়াস জিনিয়া শব্দবিজ্ঞানী হয়ে বাসায় ফিরে এলো। বাবা অফিস থেকে ফিরলে এটা নিয়ে আরেক দফা হাসাহাসি হলো। তারপর ব্যাপারটা মিটে গেল।
কিন্তু ঝামেলা লাগলো পরদিন। স্কুলে যাবার জন্য তৈরি হয়ে তার ছোটভাই কেজি পড়ুয়া আদিব সকালে গলায় অতিরিক্ত জোর দিয়ে ডাক দিলো- ‘কেহেতু, জলদি রেডি হও স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে!’।
আবিদের পিঠে একটা মোক্ষম কিল বসানোর জন্য সে ছুটে গেল। কিন্তু আদিব ততক্ষণে বাবার পেছনে লুকিয়ে গেছে।
স্কুলে পৌঁছানোর পর হলো দ্বিতীয় মুশকিল। ক্লাসে ঢুকতেই সব বন্ধুরা একসুরে বলে উঠলো - ‘কেহেতু এসে গেছে!’
শব্দবিজ্ঞানী হয়ে এভাবে বিপদে পড়ে গেল জিনিয়াস জিনিয়া। আজকে সে ম্যাডামের কাছে গিয়ে বলবে সে আর কেহেতু ডাক শুনতে চায় না। তার শব্দবিজ্ঞানী হবার শখ মিটে গেছে।
শব্দবিজ্ঞানী হয়ে এভাবে বিপদে পড়ে গেল জিনিয়াস জিনিয়া। আজকে সে ম্যাডামের কাছে গিয়ে বলবে সে আর কেহেতু ডাক শুনতে চায় না। তার শব্দবিজ্ঞানী হবার শখ মিটে গেছে।
ভালো লাগলো
ReplyDelete