লুৎফর রহমান রিটনের ছড়া

একটি 'শাদা-কালো' ছড়া



সাবরিনাদের দুইটা বেড়াল একটা কালো একটা শাদা,
নরম নরম সিল্কি পশম একটা দিদি একটা দাদা।
সারাক্ষণই মিয়াও মিয়াও সাবরিনাদের কোলটি ঘেঁষে,
সাবরিনারাও করতে থাকে কচলা কচলি, ভালোবেসে।
দুইটা বেড়াল খুব আদুরে খুব পছন্দ খাদ্যি-খাবার,
যেটাই পাবে লাফিয়ে খাবে চাকুম চুকুম করবে সাবাড়।
পরস্পরের বন্ধু, তবু-- খেলনা নিয়ে কাড়াকাড়ি,
সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাতে চলবে ওদের মারামারি।
এক সঙ্গে লাফায় ঝাঁপায় এক সঙ্গেই ঘুমায় জাগে,
কেউ জানে না কখন খাতির কখন ওদের ঝগড়া লাগে!
দুই বেড়ালের আলাপ সালাপ কেউ না বুঝুক আমি বুঝি,
ডিকশনারীর পাতায় পাতায় শব্দগুলোর অর্থ খুঁজি।
বাংলা ভাষায় 'ম্যাঁও অভিধান' কেউ লেখেনি, লিখবো আমি,
বেড়াল-কথন সত্যি মজার ভাবনাগুলোও অনেক দামি।
'খাওয়া' এবং 'ঘুমের' পরে 'মানুষ' ওদের সবচে প্রিয়,
তাই মানুষের কাছে এসে লেজ নাড়িয়ে মিয়ঁ মিয়ঁ...
সাবরিনাদের দুইটা বেড়াল কেবল করে বকর বকর
ওদের কথার রেলগাড়িটা চলতে থাকে ঝকর ঝকর।
সেদিন ওদের কথাবার্তায় কান পেতেছি আড়াল থেকে,
কালো বেড়াল প্রশ্ন করে শাদাটাকে সামনে ডেকে--
''আমি কালো তুমি শাদা আচ্ছা দিদি কও তো দিদি--
এইটা কেমন অবিচার গো! কেমন বিধান কেমন বিধি?''
দিদি বললো, ''মন খারাপের ব্যাপার তো নয়, শোনো দাদা--
এই পৃথিবীর সকল কিছুর ঢং আলাদা রঙ আলাদা।
রঙ আলাদা হলেও কিন্তু সবার একই অনুভূতি
এই পৃথিবীর সকল ফুলের আলাদা রঙ সুবাস দ্যুতি।
সেই কারণেই পৃথিবীটা এত্তো রঙিন ঝলোমলো
নইলে এমন ভালো লাগতো? মজা লাগতো? তুমিই বলো!
কোনটা তুমি কোনটা আমি বুঝতো কি কেউ চিনতো কি কেউ?
তাই পৃথিবীর সমুদ্দুরের আলাদা রঙ আলাদা ঢেউ।
রঙ আলাদা, শনাক্তে তাই খুব সহজেই যাচ্ছে বলা--
কোন বেড়ালের ডাকটা কেমন, কার কী রকম গানের গলা!
আলাদা রঙ বলেই কিন্তু যাচ্ছে চেনা তোমায় আমায়
প্রজাপতিও এক হয় না, আলাদা হয় রঙিন জামায়।
এই পৃথিবী বর্ণালি খুব তাই তো এতো মধুর লাগে
বিচিত্র রঙ তাই তো প্রিয় ভালোবাসায় অনুরাগে।
কতো সুন্দর এই পৃথিবীর রাতের আঁধার ভোরের আলো!
কারণ আমরা এক রঙা নই আমরা দু'জন শাদা-কালো।''
----------------

[ ছড়াটা উৎসর্গ করছি প্রীতিভাজন তিন ছড়াবন্ধু আনজীর লিটন, সারওয়ার উল ইসলাম এবং মিহির কান্তি রাউতকে।]
অটোয়া ১১ ডিসেম্বর ২০২০
 
 
 
 

 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা