ধারাবাহিক গল্প
হারানো ঘড়ি রহস্য-১
শিহান রিশাদ
রাত সাড়ে নয়টা বাজে। সজল এই মাত্র খেতে বসলো। তার ঘুম ঘুম লাগলেও সে সেটা প্রকাশ করছে না। বড়রা বড়দের বিষয় নিয়ে কথা বলছে।
সে একটি গ্রাস মুখে দিয়ে রতনকে জিজ্ঞেস করলো,“ তোমার বেড়ানো কেমন হলো?”
রতন সজলের মামাতো ভাই। বয়সে সজলের চেয়ে ১ বছরের বড়। রতন দাদার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল চারদিন আগে।
সে বলল, ‘‘ভাল বেড়িয়েছি তবে..... ”
সজল বলল, “তবে কি?”
রতন ভাতের একটা গ্রাস মুখে দিয়ে চিবাতে চিবাতে বলল, “একটা জিনিস সন্দেহ লাগছে।”
“কি জিনিস?”
রতন আশেপাশে তাকিয়ে একটু ভেবে বলতে শুরু করলো আস্তে আস্তে- “রাতের বেলা দরজা জানালা বন্ধ করে সবার আগে ঘুমিয়ে ছিলাম। তাই সকাল বেলা আমার সবার আগে ঘুম ভাঙলো। এখন উঠব নাকি পরে উঠবো চিন্তা করে তখনই উঠে গেলাম। উঠে হাত মুখ ধুয়ে দরজা খুলতে গিয়ে আবিস্কার করলাম দরজাটি একটু করে খোলা। আমি খুব অবাক হলাম। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে আমি দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে ছিলাম। এবার আমি বাসার চারদিকে তাকালাম। দেখলাম বাসার সবকিছু আছে তবে কেমন যেন ওলট-পালট। বাসার কেউ একজন এগুলো করতে পারে কিন্ত সেটা করে আবার সে সেটা গুছিয়ে রাখার কথা। আমি সবকিছু গুছিয়ে নিলাম। সবাই ওঠার পর আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'মা, রাতের বেলা আমি ঘুমিয়ে যাবার পর তোমরা কি করেছিলা?’
মা বলল, 'তুমি ঘুমিয়ে যাবার পর আমরা খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। কেন?'
'আমি গতকাল একটু আগে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তো। রাতে তোমরা আর কিছু করেছিলে কিনা তাই জিজ্ঞেস করছি।'
ঠিক এই সময় মার ফোন এল। মা ফোনে কথা বলতে বলতে চলে গেল। আামার পুরো ব্যাপারটি বলা হলো না।
রাতের বেলা আমার নানান কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমাতে দেরি হয়ে গেল। তবুও বিচিত্র কারণে সকালবেলা আমার সবার আগে ঘুম ভাঙলো। আমি দ্রুত উঠে দেখতে গেলাম বাসার কি অবস্থা। দেখলাম সব কিছু ঠিক আছে। তাই আমি নিশ্চিন্ত হলাম।
নাস্তা করে একটু বাইরে ঘুরতে যাওয়ার আগে আবিষ্কার করলাম আমার ঘড়িটি নেই। ঘড়িটি আমার কাছে তেমন আহমরি কিছু নয় তবুও আমি কেন জানি অনেকক্ষণ ধরে খুঁজতে লাগলাম। কোথাও খুঁজে পেলাম না। শেষ পর্যন্ত ঘড়ি ছাড়াই গেলাম।”
ঠিক এই মূহুর্তে রতন থামলো কারণ সজলের মা বলল, “না খেয়ে এখানে কি চলছে?”
সজল বলল, “কিছু না মা।”
মা বলল, “তাহলে কূটুর কুটুর এগুলো কি বলছিস?”
“রতন কেমন বেড়িয়েছে তা বলছিলাম।”
জবাব শুনে মা আবার তাদের নিজেদের আলাপে ফিরে গেল।
সজল রতনকে আস্তে আস্তে বলল, “ঘড়িটা কি পেয়েছিলে?”
রতন বলল, “না। তবে এটাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।”
“তাহলে সন্দেহটা কি?”
“সন্দেহটা হল আমার ঘড়িটিতে তো তেমন কিছু নেই যে এটা চুরি করতে হবে।”
“তুমি ঠিক বলেছ। তবে আমার মনে হয় এখানে আরেকটি ব্যাপার আছে। কারণ একদিন বাসা ওলোট-পালোট করলো এবং তার পরের দিন তোমার ঘড়িটি নিয়ে গেল।”
“তুমি ঠিক বলেছ। তবে এখন এটা নিয়ে ভেবে কাজ নেই। কালকে ভাববো। আমরা তো আর আজকে চলে যাচ্ছি না।”
তারপর সজল খেয়েদেয়ে ঘুমাতে চলে গেল।
পরদিন সকাল বেলা সজল পত্রিকা পড়তে গিয়ে একটা খবরের দিকে চোখ গেল যেখানে উপরে বড় বড় করে লেখা, ‘আকাশ থেকে পতিত রহস্যময় বস্তু।’
নিচে ছোট ছোট করে লেখা আছে, ‘একদল বিজ্ঞানী আকাশ থেকে মাটিতে পড়া একটি বস্তুকে খুঁজছে। হঠাৎ আরেক দল অপরিচিত লোককেও এটি খুঁজতে দেখা গেছে। তাদের আগে কেউ দেখেনি। তবে যারা দেখেছেন তারা সেই অপরিচিত লোকগুলোক নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেছেন। যারা যারা এই অদ্ভুত লোকগুলোর কাছে গেছে তাদের কারো সাথেই ভালো ব্যবহার করেননি। তারা সবাই হলুদ জামা পরে ছিল। তার কারণটি কী কেউ জানে না........’
তার নিচে ছোট ছোট করে আরো কিছু লেখা। এটি পড়ে সজল তেমন পাত্তা দিল না। কিছুক্ষণ পর রতনের ঘুম ভাঙলো। রতন আর সজল একসাথে খেতে বসলো। মা তাদের খাবার দেবার পর মার ফোন বেজে উঠলো। মা রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিলেন দেখে সেটা শুনতে পায়নি। সজল বলল, “মা, তোমার ফোন এসেছে।”
মা ফোনটি ধরার জন্য রুমে যাওয়ার পর সজল যখন রতনকে যখন কিছু বলতে চাচ্ছিল তখন মা রুম থেকে বের হয়ে এলেন। মাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে যে মা একটি জিনিস শুনে খুব ভয় পেয়েছেন। সজল জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে মা?”
মা নিজেকে সামলে বলল, “কিছু না।” তবে গলার স্বর শুনে সজল ও রতন বুঝতে পারলো কিছু একটা জিনিস হয়েছে যেটা মোটেও ভালো নয়। তারপর বাবার রুমে চলে গেল মা। সজল আস্তে আস্তে উঠে রুমের দরজায় কান লাগালো। একটু একটু করে শুনতে পেল বাবা ভয় পাওয়া গলায় বলল, “কি হয়েছিল?”
মা বলল, “জানি না। তামিমের মা বলছে ১৫ মিনিট আগের ঘটনা। তারপরে আর কিছু বলেনি।”
তারপরে আরো কিছুক্ষণ ধরে আলাপ চলল। সেগুলো শুনে সজল চমকে উঠলো। তামিমকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। তামিম হলো রতনের মামাতো ভাই। রতন যখন গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ছিল তখন তামিমও সেখানে গিয়েছিল। সজল দ্রুত রতনকে বলতে চলে গেল। রতন সবকিছু শুনে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর মা ও বাবা বাইরে যাওয়ার জন্য যখন প্রস্তুত হচ্ছিলো তখন সজল আর রতনের বুঝতে বাকি রইল না যে মা এবং বাবা কোথায় যাচ্ছে। তারা থানায় যাচ্ছে। তবে তারা যেন বুঝতে না পারে সেজন্য সজল বাবাকে জিজ্ঞেস করল, “বাবা, তোমরা কোথায় যাচ্ছো?”
উত্তরে বাবা বললেন, “সেটা তোদের জানার দরকার নেই। তোরা চুপ করে খা।”
তারা চুপচাপ খেতে খেতে ভাবতে লাগলো ব্যাপারটা আসলে কী?
[চলবে...]
..........................................
[শিহান রিশাদ: চতুর্থ শ্রেণী, ফুলকি সহজপাঠ বিদ্যালয়]
চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমার ঘড়িটাও দেখতে এরকম কিনা
ReplyDeleteভালো। আমার পড়তে ভালো লেগেছে কিন্তু
ReplyDeleteএত রহস্যময় কাহিনী জমে উঠেছে, পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম!
ReplyDeleteরহস্যময় একটা ঘটনা!
ReplyDelete