চলমান গল্প

টম এণ্ড জেরির মোবাইল ফোন

বিশেষ প্রতিবেদক



পিঠেপিঠি ভাইবোন থাকলে একটু ঝগড়াঝাটি খুনসুটি হবেই। সেইসব ঝগড়াঝাটির বিচার করতে করতে পরিবারের কর্তারা হিমশিম খান। আমাদের পরিবারেও সেরকম দুজন আছে। ধরা যাক একজনের নাম টম, অন্যজন জেরি। বাসায় প্রতিনিয়ত শুনতে হয় পারস্পরিক অভিযোগ নামা। টম বলে জেরি আমাকে মুখ ভেঙচি দিয়েছে, জেরি বলে টম আমাকে খামচি দিয়েছে। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে শুরু হয় এসব। গত কয়েক মাস স্কুল বন্ধ থাকার কারণে দুজনে বাসাতেই থাকে সারাদিন। বাসায় একসাথে খেলাধূলার পাশাপাশি দুজন দুজনের পেছনে লেগে থাকে কোন না কোন ইস্যুতে।  

মাঝে মাঝে আমি বিরক্ত হই বটে, তবে অধিকাংশ সময় এসব থেকে বিনোদনের খোরাক পাই। সেরকম কিছু ঘটনা এক এক করে বলছি। 


দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ, কিন্তু অনলাইনে ক্লাস চলে দুজনের। ছোটদের মোবাইল ধরা বারণ ছিল কদিন আগেও, কিন্তু অনলাইন ক্লাসের জন্য দুজন দুটি স্মার্টফোনের আংশিক মালিকানা পেয়েছে। একজনকে দেয়া হলো মায়ের পুরোনো ফোন, আরেকজনকে দেয়া হলো বাবার পরিত্যক্ত ফোন। আংশিক মালিকানা মানে ক্লাস শেষে দুজনেই ফোন দুটো বাবা মাকে ফেরত দেবে। কিন্তু দুজনেরই সেই ফোনে নানান ধরণের ‘প্রয়োজনীয়’ কাজ যুক্ত হয়ে যায় বলে ফোন দুটো তাদের জিম্মাতেই থাকে সারাক্ষণ। যদিও সেই ‘প্রয়োজনীয়’ কাজটা টিচারদের মেসেজ দেখা, রুটিন উল্টে পড়া ইত্যাদি হলেও বাস্তবে দেখা গেল তাদের প্রয়োজনীয় কাজ গেল ফোনের ক্যামেরার সদ্ব্যবহার। তবে ফটোগ্রাফিতে দুজনের আগ্রহ দেখে বারণ করলাম না। ঘরে বন্দী থেকে বিরক্ত হবার চেয়ে বারান্দার গাছপালা ফুল ফলের ছবি তুলে কিছুটা বিনোদন পেলে ক্ষতি কী।


টম পড়ে ক্লাস সিক্সে, জেরি ক্লাস থ্রিতে। টম উপরের ক্লাসে পড়ে বলে জেরির উপর মাঝে মাঝে খবরদারিত্ব করার চেষ্টা করে। কিন্তু জেরি তাকে মুরব্বী মানতে নারাজ। মুরব্বী হিসেবে স্বীকার না করার কারণে টম প্রায়ই ক্ষেপে থাকে জেরির উপর। সুযোগ পেলে এক আধটা  খামচি চিমটি দিয়ে সেটার শোধ নেয়।


শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে না পেরে জেরি একটা নতুন বুদ্ধি বের করলো। সেই বুদ্ধিতে টম কিভাবে নাকাল হলো সেটা বলছি। 


দুজনকে আলাদা আলাদা ফোন দেয়া হলেও দেখা যেতো একজন আরেকজনের ফোনে উঁকি দিচ্ছে। বিশেষ করে টম সুযোগ পেলেই জেরির ফোনটা নিয়ে গুতাগুতি করে। জেরির এতে তীব্র আপত্তি। সে চেঁচিয়ে বিচার দেয় মায়ের কাছে। মা ধমক দিলে টম ছেড়ে দেয় ফোন। কিন্তু পরে সুযোগ পেলে আবারো নিয়ে গুতাগুতি করে। 


আসলে জেরির ফোনটা অনেক পুরোনো হলেও সে বিভিন্ন কায়দা করে সেই ফোনের ক্যামেরার মধ্যে নানান বিচিত্র প্রযুক্তি আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দেয় টমকে। সেইসব প্রযুক্তির লোভেই জেরির ফোনটা নেবার চেষ্টা করে টম। অনধিকার প্রবেশ ঠেকাতে বাধ্য হয়ে ফোনের স্ক্রিনলক সিস্টেম চালু করলো জেরি। তাও টমকে বিরত করতে পারে না। লক করা অবস্থায়ও ফোনটা হাতে নিয়ে চেষ্টা করে কিভাবে সেই লক খোলা যায়। 


এই অবস্থায় সেদিন শোনা গেল টমের ত্রাহি চিৎকার। যেন কেউ মেরে তার হাড্ডি গুড়া করে দিয়েছে। ঘটনা কী জানতে ছুটে গেল সবাই।


এবার টমের তীব্র অভিযোগ জেরির বিরুদ্ধে। জেরি একটা বেয়াদব, একটা অসভ্য, তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হোক ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যাপার কী? টমের হাড়গোড় তো আস্ত আছে, কী এমন করেছে জেরী?


ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দেখলাম জেরির ফোনটা লক করা আছে ঠিকই, কিন্তু ফোনটা খোলার জন্য চাপ দিতেই স্ক্রিনে যে লাইনটা ভেসে উঠছে তা হলো- ‘টম একটা মাথামোটা বেকুব’। 


লাইনটা পড়ে হাসতে হাসতে আমার হেঁচকি উঠে গেল রীতিমত। টমের সাথে গায়ের জোরে না পেরে এবার প্রযুক্তির আঘাত হেনেছে জেরি। ফোনের লক খোলার চেষ্টা করতে গিয়ে টম যেন প্রতিনিয়ত ওই লাইনটা পড়তে বাধ্য হয়। ওষুধটা ঠিক জায়গাতে যে পড়েছে টমের চিৎকারে সেটা প্রমাণ হয়ে গেল।


তাতেও কী শেষ পর্যন্ত টমকে দমানো গেছে? তার উত্তর মিলবে পরের পর্বে।


Comments

  1. খুব ভালো লেগেছে টম এণ্ড জেরির কাণ্ডকীর্তি

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা