গল্প
মাহির রোবট
ফাহরিয়াল রহমান
আইয়াজ আর মাহির মধ্যে খুব ভাব। ওরা একে অন্যের প্রিয় বন্ধু। একই পাড়ায় থাকে, স্কুলও এক দু'জনের। আইয়াজ আর মাহি ক্লাস সিক্সে পড়ে। কিছুদিন আগে মাহিদের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। তারপর থেকে প্রায় মাহির মন খারাপ থাকে। বন্ধুদের সাথে খেলাধুলোতেও যেন উৎসাহ নেই তার। মুখ গোমড়া করে বসে থাকে চুপচাপ। মন খারাপের কারণ জানতে চাইলেই ফিচ্ফিচ্ করে কেঁদে ফেলে। প্রিয় বন্ধুর মন খারাপ আর কান্নাকাটি একদমই ভালো লাগে না আইয়াজের। কেন বন্ধুর মন খারাপ সেটা সে ঠিক ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। আজ কারণটা জেনেই ছাড়বে মনে মনে ঠিক করে মাহি কে পাকড়াও করে আইয়াজ।
- তোমার মন খারাপের কারণটা খুলে বলো আমাকে।
- কেন, আমাদের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে জানো না বুঝি?
-
সে তো পাড়ার প্রায় সবাই জানে। সে
ঘটনা নিয়ে মন খারাপ হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু সেও তো এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। আঙ্কেল-আন্টি মন খারাপ কাটিয়ে উঠেছেন। অথচ
তুমি এখনও সে ঘটনা নিয়ে মন খারাপ করে থাকছো। ওটাই কি তোমার এখনও মন খারাপের একমাত্র
কারণ, নাকি অন্য কোন ব্যাপার
আছে? আমাকে খুলে বলো। আমরা
তো বেস্ট ফ্রেন্ড ভাই!
-আব্বু আম্মুর তো তেমন বড় কিছু চুরি হয়নি। কিছু টাকা, আম্মুর গলার চেন, আংটি। কিন্তু চোর তো আমার সবচেয়ে দামি জিনিটসটাই নিয়ে গেছে।
বলেই মাহি আবার ফিচফিচ করে কান্না জুড়ে দিলো। কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
- অ্যালেক্সের মত একটা রোবট পাওয়ার লোভ তোমাদের সবার ছিল, ছিল না বলো?
বন্ধুর কথা শুনে আইয়াজ রীতিমত ধাক্কাই খেলো।
-বলো কি! অ্যালেক্স চুরি হয়ে গেছে!
কান্না জড়ানো গলায় মাহি বলে - হুম।
এবার আইয়াজের মনটাও ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। সত্যিই মাহির রোবটটা দারুণ ছিল। ওরা অনেকেই মনে মনে ওরকম একটা খেলনা রোবট পাওয়ার ইচ্ছে নিয়ে জুলজুল করে তাকিয়ে থাকতো অ্যালেক্সের দিকে। মাহির সব বন্ধুদের পরিচিত আর প্রিয় ছিল অ্যালেক্স। রোবটের নামটা মাহি রেখেছিল আদর করে। ছোটো-খাটো রোবটটা দেখতেও ছিল খুব আদুরে। কথা বলতে পারতো আর বেশ কিছু কমন কমান্ড মেনে টুকটাক কাজ করতো। অ্যালেক্সের কাণ্ডকীর্তি সত্যিই বিস্ময়কর ছিল। আহা ওরকম একটা রোবট চুরি যাওয়া সত্যিই দুঃখজনক। বন্ধু কে সান্ত্বনা দেবার জন্য আইয়াজ বলে,
-কি আর করা! তোমার মামাকে আরেকটা পাঠাতে বললেই তো
হয়।
-আম্মু দুদিন পরই অস্ট্রেলিয়ায় ফোন করেছিল বড় মামাকে। সব শুনে মামাও খুব কষ্ট পেয়েছেন। ওরকম
রোবট নাকি এখন আর পাওয়া সম্ভব না- আউট অফ মার্কেট।
অ্যালেক্সের কথা মনে করে দু'বন্ধুর মন খারাপ হয়, ওদের মধ্যে আর বেশি কথা হয় না।
স্কুলের বন্ধুরা ছাড়াও কিছু টিচার লক্ষ করেছিলেন মাহিকে। বিশেষ করে ওদের ক্লাস টিচার। আইয়াজের
কাছ থেকে সবিস্তারে সবটা জানার পরের দিন ক্লাসে এসে টিচার একটা মজার জোকস শুনালেন। পুরো ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়লো। তিনি
আবার সেটা বললেন। তাতে ক্লাসের কয়েকজন হাসলো। একই জোকস টিচার আরো একবার বললেন। এবার
সংখ্যায় আরো কম সংখ্যক হাসলো। শেষবারের মত আরেকবার বললেন টিচার জোকসটা। এবার ক্লাসের কেউ ই হাসলো না। ক্লাস টিচার তখন মাহির দিকে তাকিয়ে
বললেন,
-মাহি, তোমার রোবট সম্পর্কে আইয়াজের কাছ থেকে আমি
সবই শুনেছি। মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা নিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। তোমার
জন্য নিশ্চয়ই আরো ভালো রোবট অপেক্ষা করছে। আরো আপডেটেড রোবট আসবে বলেই হয়ত ওটা এ
মুহূর্তে আউট অফ মার্কেট। দেখো,
আমি যখন তোমাদের মজার জোকসটা প্রথমবার শোনালাম, তোমরা সবাই খুব হাসলে। পরের বার সামান্য কয়েকজন হাসলে। শেষবারে কেউ হাসলে না। কেন জানো? একই বিষয়ে বারবার হাসি আসে না, এক ঘেয়েমি চলে আসে। তাহলে একই বিষয় নিয়ে কেন মন খারাপ করে
থাকবো, কান্নাকাটি কারবো?
টিচারের সান্ত্বনা দেবার কৌশলটা খুব কাজে দিলো।
মাহির মন থেকে একটা পাথর সরে গেল বুঝি। আরো ভালো রোবট পাওয়ার আশা মাহি আর আইয়াজের মনে আনন্দ নিয়ে এলো। ওরা আবার হাসিখুশিতে মেতে উঠলো।
বেশ ভালো গল্প। কিন্তু আরেকটু বড় হলে ভালো হতো।
ReplyDeleteসুন্দর গল্প
ReplyDeleteআমার ছোটবোলায় একটা খেলনা রোবট হারিয়ে গিয়েছিল। আমি সেটার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। এই গল্পটি পড়ে আবার সেটির কথা মনে পড়ে গেল। খুব সুন্দর গল্প।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ। পুরনো স্মৃতি জাগিয়ে তুলে পাছে মনে কষ্ট দিলাম কিনা জানিনা।
Deleteতবে গল্পটা কারো ভালো লেগেছে জেনে আপ্লূত, অনুপ্রাণিত ...
"শিশু কাগজ" যখন থেকে পথ চলতে শুরু করেছে তখন থেকেই আছি এর সাথে তাইতো সময় পেলেই নতুন পুরোনো সংখ্যা গুলো পড়তে ভালো লাগে। সেই সুবাদে বেশ কিছু কমেন্ট চোখে পড়লো ...
শুভকামনা রইল।
খুব সুন্দর হয়েছে গল্পটা
ReplyDelete