Posts

স্মৃতি একাত্তর - শাওন মাহমুদ

Image
  অলৌকিক মানুষ আমাদের অন্ধকার সময়ে এক মুঠো অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী মানুষ ছিল। তাঁদের সবার ছিল অপার্থিব গুণাবলী। কেউ কবিতা লিখতেন ,  গান বাঁধতেন ,  সুর তুলতেন ,  গান গাইতেন ,  সংবাদ কুড়াতেন ,  চিকিৎসা করতেন ,  শিক্ষা বিলাতেন ,  ঘর বানাতেন ,  নাটক লিখতেন ,  চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেন ,  সবুজ ভালোবাসতেন ,  রাজনীতি করতেন। সেই সময়ে এঁরা সবাই একটা বিষয়ে দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ ছিলেন ,  দেশকে ভালোবেসে দেশ স্বাধীন করবার সংকল্পের বিশ্বাসে অনঢ় অবস্থান।  ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু হয়েছিল তাঁদের আনাগোনা। ষাট দশকের আন্দোলন ,  মুক্তিযুদ্ধ উত্তরকাল এবং যুদ্ধচলাকালীন সময়ে তাঁরা এক হয়ে শত্রুর সাথে লড়াই করবার জন্য অদৃশ্য শক্তিশালী ঢাল সৃষ্টি করেছিলেন। যে যার পথে থেকেই তাঁরা এক ধারায় বাহিত হয়েছিলেন ,  দেশকে স্বাধীন করবার প্রত্যয় জলের নদীতে। যে যার মতন দায়িত্ব পালন করে ,  এক দৃঢ় লক্ষ্যে সফল হবার পরই আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম ব-দ্বীপ। যদিও জোরপূর্বক প্রস্থান করতে হয়েছিল তাঁদের। বীরের বেশে তাঁরা সেই অদৃশ্য ঢালের আড়ালে আম...

গল্প - হুমায়ূন কবীর ঢালী

Image
ঘুড়ি উড়ছেই এক. সকাল থেকে অপুর কোনো খোঁজ নেই। সেই যে সাতসকালে দুটো রুটি খেয়ে বেরিয়েছে ছেলেটা ,  বেলা গড়িয়ে বিকেল ,  সন্ধ্যা হয় হয় ,  তবু বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। মাঠ থেকে যে গরু-বাছুর আনতে হবে সেই কথাও বেমালুম ভুলে গেছে। গোয়ালঘরে বাঁশের খুঁটিতে গাভীটাকে বাঁধতে বাঁধতে ভাবল মাসুদা বেগম। গাভীটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে একমাসের বাছুর লালু। লালু নামটা অপুরই দেয়া। প্রথম যেদিন লালু পৃথিবীর বুকে পা রাখল ,  অপুর কী আনন্দ! সেদিনই অপু তার মাকে বলেছিল ,  মা ,  আমি ওর নাম রাখলাম লালু। বেশ তো তোর যা খুশি রাখ। আজ থেকে লালু আমার সাথী। ওকে নিয়ে তোমাদের একটুও ভাবতে হবে না। সেই থেকে লালুর দেখাশোনার ভার অপুর ওপর পড়ল। লালুর সাথে অপুর বেশ ভাব। চমৎ কার   বন্ধুত্ব।   কেউ   কাউকে   না   দেখে   একদিনও   থাকতে   পারে   না।   সকাল   হলেই   লালু   অপেক্ষায়   থাকে   কখন   অপু   আসবে।   মায়ের   সাথে   তা কে মাঠে নিয়ে যাবে। যেতে যেতে অপুর সাথে দুষ্টুমি করবে। লাফালাফি ,  ছুটোছুটি ,  লুটোপুটি ...

গল্প - মাহবুব আজাদ

Image
 কুঞ্জরা আর গুঞ্জরা “কুঞ্জরা একটা ছোট্ট হাতির ছানা...।” গল্পটা এভাবেই বলতে গেলাম আমার খুঁতখুঁতে ছোট্ট ভাগ্নে ঘুতুমকে। কিন্তু গল্পের প্রথম চরণ আমার মুখ থেকে মাটিতে পড়ার আগেই সে তার ডান হাতের তর্জনী তুলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বাম হাতের তর্জনী তুলে তার চশমাটা নাকের ডগা থেকে দুই সেন্টিমিটার ঠেলে ওপরে তুললো। এই বয়সেই ঘুতুমের চোখে কেন এমন পেল্লায় চশমা, আমি জানি না। কিন্তু আশেপাশে যা কিছু ঘটছে, সব কিছুর খুঁতই ঘুতুমের সে চশমার কাচে ধরা পড়ে। আর তখনই সে তর্জনী তুলে সবকিছু থামিয়ে প্রশ্ন করতে থাকে। “ছোট্ট হাতির ছানা, নাকি হাতির ছোট্ট ছানা?” ছোট্ট ঘুতুমের মুখে এমন প্যাঁচ-কষানো প্রশ্ন শুনে আমার মাথাটাই ঘুরে ওঠে। কিন্তু আমার বয়স চল্লিশ আর ঘুতুমের বয়স নয়, তাই ভয় পাই না। বলি, “কুঞ্জরার মা-ও বেশ ছোটখাটোই যদিও, কিন্তু তাকে ছোট্ট হাতি বলা চলে না। তোর কথাই সই, কুঞ্জরা এক হাতির ছোট্ট ছানা।” এবার ঘুতুমের চশমা স্বস্তির বাষ্পে একটু ঝাপসা হয়ে ওঠে। সে তর্জনীটা আস্তে আস্তে নামিয়ে আনে। আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গল্প ধরে সামনে আগাই। “কুঞ্জরা থাকে এক পাহাড়ি জঙ্গলে। সে জঙ্গল এক দেশে শুরু হয়ে আরেক দেশ ফুঁড়ে অ...

গল্প - নিলয় নন্দী

Image
  টিনের সানাই টিনের সানাইটা গবা যে কীভাবে পেয়েছিল সেটা এখন আর কেউ ঠিক করে বলতে পারে না। ঘোষালদের বাড়ির মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবার পরে বাজনাদাররা সব বাজনা-টাজনা গুছিয়ে নিয়ে চলে গেল। সেই সময় ফেলে গেল আধভাঙ্গা এই সানাইটা। ভুল করে রেখে গেল নাকি ইচ্ছে করেই ফেলে গেল সেটা বলা মুশকিল। গ্রামের অনেকেই বলে গোয়াল ঘরের পাশে শামিয়ানার কাপড় গুছিয়ে রাখার সময় জিনিসটা গবা কুড়িয়ে পেয়েছিল। বাজনাদারদের সঙ্গে ফাই ফরমাস খাটবে বলে যে ছোকড়াটা এসেছিল , সানাইটার মাথা একটু ভেঙ্গে যাওয়াতে সে ওটা ফেলে চলে যায়। গবা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ঘষে মেজে খুব কষে ফুঁ দিতে দিতে শেষপর্যন্ত সেটা থেকে আওয়াজ বের করে ফেলল। তারপর তার সানাই বাদনের চোটে শাজানপুর গ্রামবাসী সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। মাসখানেকের মধ্যে গ্রামে তার নাম হয়ে গেল সানাই গবা! গবা কিন্তু মোটেও এই সানাই থেকে কোন গানের সুর বের করতে পারে না। সেই নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথাও নেই। সানাইয়ে যে আওয়াজ হয় সেটুকুই যথেষ্ট। ধানক্ষেতের মাঝখানে গিয়ে গবা গায়ের জোরে সানাইয়ে এক ফুঁ দেয়। সেই উদ্ভট শব্দে ভয় পেয়ে সেদিন কাকপক্ষীতেও আর ক্ষেতের ধারে কাছে আসে না। জমির মালিক হয় তো খুশি হয়ে গবাকে ...

একাত্তরের গণহত্যা - হাসান মোরশেদ

Image
মুক্তিযুদ্ধ : গবেষণা ও অনুসন্ধান এইখানে শুয়ে আছেন শহীদ অজিত চক্রবর্তী   ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে।   শায়েস্তাগঞ্জের কাছাকাছি  হবিগঞ্জ সদর উপজেলার চক্রমনাত গ্রাম। এই গ্রামের সামনে দিয়েই তখন হবিগঞ্জ-বাল্লা রেল লাইন চালু ছিলো। হিন্দুপ্রধান এ গ্রামে প্রায়ই পাকিস্তান আর্মির ছোট ছোট দল এসে হানা দিতো মুলতঃ নারী নির্যাতনের উদ্দেশ্যে।  এদিকে তখনও মুক্তিবাহিনীর সংগঠিত প্রতিরোধ শুরু হয়নি।  পাক আর্মির অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামের মানুষেরা- হিন্দু মুসলমান সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন ,যার যা আছে তাই নিয়েই প্রতিরোধ গড়বেন।  এরকম আরেকদিন পাকিস্তান আর্মির কয়েকজন সৈনিক এসে হিন্দু পাড়ায় ঢুকে নারী নির্যাতন করে ফিরে যাবার সময় গ্রামের মানুষেরা লাঠি, শাবল, লাঙ্গল হাতে নিয়ে তাদেরকে তাড়া করেন। গ্রামবাসীর সামনে ছিলেন স্থানীয় সুকড়িপাড়া হাইস্কুলের ছাত্র অজিত চক্রবর্তী। আর্মিরা রেললাইন ধরে দৌড়ে গিয়ে একটা ব্রীজের পাশে পজিশন নিয়ে গুলীবর্ষন শুরু করে। অজিত  সহ কয়েকজন ভয় না পেয়ে সামনে এগিয়ে গেলে, অজিত গুলীবিদ্ধ হন...