বাদুর কেন রাতেই শুধু ওড়ে



ভাষান্তর: নাহার তৃণা


বনের ইঁদুর আর বাদুরের মধ্যে ভারি বন্ধুত্ব। যখনই সুযোগ পায় দুই বন্ধু গপ্পো করতে বসে। রোজ ওরা একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও করে। এত বন্ধুত্ব থাকার পরও বাদুর মনে মনে ইঁদুরকে হিংসে করতো। ইঁদুর মাটিতে কেমন দিব্যি ছুটে বেড়ায়। সে বেচারী সেটা পারে না। বাদুরটা কিন্তু এটা ভেবে দেখেনি, সে পাখি না হয়েও পাখির মতো উড়তে পারে ইঁদুর সেটা পারে না। আর ওসব নিয়ে ইঁদুরটার কোনো দুঃখও নেই। বাদুরকে সে সত্যিই বন্ধুর মতো ভালোবাসে। বন্ধুকে কেউ হিংসে করে নাকি!
বন্ধু বাদুরের হাতের রান্নার প্রশংসায় ইঁদুর পঞ্চমুখ। পালা করে ওরা রোজ বাড়ি থেকে স্যুপ তৈরি করে আনে। যেদিন বাদুরের পালা থাকে, ইঁদুর অধীর হয়ে অপেক্ষা করে কখন সে বাদুরের তৈরি মজাদার স্যুপ খাবে। প্রতিবারই বাদুরের তৈরি স্যুপ খেয়ে ইঁদুর অনেক অনেক প্রশংসা করে। একদিন খাওয়া শেষে কৌতূহলের সাথে ইঁদুর জানতে চাইলো , “প্রতিবার তোমার স্যুপ খেতে এত্ত মজাদার হয় কীভাবে?”
 
বাদুর বেশ ভাব দেখিয়ে বললো, “রান্নার সময় আমি প্রতিবার ফুটন্ত পানিতে নেমে নিজেকে খানিক সিদ্ধ করি। আমার মাংস তো খুব সুস্বাদু, তাই আমার তৈরি স্যুপ খেতে অত্ত মজাদার হয়।”
 
তারপর সে তার বোকা ইঁদুর বন্ধুকে বললো, দাঁড়াও ব্যাপারটা তোমাকে বরং দেখাই, তাহলে বুঝতে সুবিধে হবে। এই বলে সে একটা হাঁড়ি ভরতি পানি নিয়ে এলো। ইঁদুরকে বোঝালো হাঁড়িতে গরম পানি রয়েছে। এরপর বাদুর হাঁড়ির ভেতর লাফ দিয়ে কিছুক্ষণ থাকার পর উঠে এলো। দুপুরের খাওয়ার সময় বাদুর যে স্যুপ হাজির করলো তা কিন্তু সে আগেভাগেই তৈরি করে রেখেছিল। ইঁদুর স্যুপ খেয়ে যথারীতি বাহবা দিলো।
 
বাড়ি ফিরে গিয়ে ইঁদুর তার বউকে বললো, এবার সে তার বন্ধু বাদরের মতো স্যুপ তৈরি করবে। সেজন্য সে তার বউকে চুলায় এক হাঁড়ি পানি চাপাতে বললো। বউ ইঁদুরের কথা মতো কাজ করলো। তারপর সে হাতের অন্য কাজ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এদিকে চুলার উপর হাঁড়ির পানি টগবগ করে ফুটতে শুরু করেছে।

ইঁদুর তখন করলো কী ঝপাং করে ওই ফুটন্ত পানিতে ঝাঁপ দিলো। বউ বেচারী জানতেও পারলো না। স্যুপ তৈরি কতদূর এগিয়েছে খোঁজ নিতে এসে দেখে ফুটন্ত পানিতে তার ইঁদুর স্বামী সিদ্ধ হচ্ছে। ততক্ষণে বেচারি মরে গেছে।
 
কার বুদ্ধিতে এমন সর্বনাশ হয়েছে বুঝতে আর বাকি রইল না ইঁদুর বউয়ের। রাগে দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে সে বনের রাজার কাছে গিয়ে বিচার দিলো। ইঁদুর বউয়ের কাছ থেকে দুর্ঘটনার সবটা শুনলেন রাজামশাই। তারপর যার কুবুদ্ধিতে ঘটনাটা ঘটেছে সেই বাদুরটাকে জেলে বন্দি করার ঘোষণা দিলেন। চারিদিকে বাদুরের খোঁজে, খোঁজ খোঁজ রব পড়ে গেল। বনের সবাই বাদুরের খোঁজে নেমে পড়লো। কিন্তু কোত্থাও পাজিটার দেখা পাওয়া গেল না। যাবে কীভাবে? রাজার ঘোষণা শুনে

বাদুর প্রাণের ভয়ে গভীর বনের ভেতরে গিয়ে লুকিয়ে ছিল যে! বাদুরটা ভালোই বুঝতে পারলো দিনের আলোতে বাইরে বের হলে তার আর রক্ষে নেই। সবাই মিলে তাকে কচুকাটা করবে। বাদুর বাধ্য হলো তার স্বভাব পালটে ফেলতে। এরপর থেকে রাতের অন্ধকারে খাবারের খোঁজে চুপিচুপি বের হতে লাগলো।
 
এখন বুঝতে পারলে তো কেন কখনও দিনের বেলাতে বাদুরকে দেখা যায় না?




Comments

  1. খুব পেরেছি। ভাল লিখেছেন মহাশয়া।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা