ফাহ্‌রিয়াল রহমানের কলাম


খালামণির নলেজ বক্স 


কোভিড কমে আসায় ২০২২ সালটা কিছুটা স্বস্তি নিয়ে শুরু হলেও সারা বিশ্ব জুড়ে সময়টা কেমন যেন অন্য রকম যাচ্ছে। কোথাও থম মেরে আছে তো কোথাও উদ্বেগ, উৎকন্ঠা আর একটু শান্তির আশায় প্রার্থনার জমিনে। কোনো দেশ যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে আছে। কোনো দেশ গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে পর্যুদস্ত। কিছু দেশ আবার আধিপত্য বিস্তারে ব্যস্ত। এই হলো আমাদের বিশ্বের বর্তমান অবস্থা।

বিশ্ব ছেড়ে আসি আমার প্রিয় স্বদেশে; সেখানেও অস্থিরতা।করোনার তান্ডবের পর ডেঙ্গু তারপর বন্যা,আরো কত-শত বিপদ আপদ।খুব একটা ভালো নেই সাধারণ মানুষ।

আচ্ছা বড়দের নানা অস্থিরতার আঁচ কি তোমরা টের পাও?

আমি যেমন ছোট বেলায় আব্বু-আম্মুর নীরব ঝগড়ার ঝাঁজটা আম্মুর মধ্যে মাঝে মাঝে বেশ টের পেতাম। এই যেমন অহেতুক আমাদের বকাঝকা বা একটু বেশি করে পড়া ধরা আরো কতকিছু! হা হা হা!

দেখ! এই কথায় আমার এখন শৈশবের বর্নিল সব ঘটনার কথা মনে পড়ছে। কত মজার ছিলো সেসব দিন। কী অনাবিল আনন্দের! আর ছোট থেকেই আমার অভ্যাস একটা বই পড়া শুরু করলে সেটা শেষ না করা পর্যন্ত অন্য কোনো কাজে মন দিতে পারিনা। নিজের ক্লাসের বই, গল্পের বই ছাড়াও ভাই বোনদের ক্লাসের বইও সমান আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। এজন্য ছোট থেকে আমাকে আঁতেল বলে খ্যাপাতো ভাই বোনেরা। যে কোনো ভালো বই পড়তে আমি খুব ভালোবাসি।

চলো অস্থির পৃথিবীকে পাশ কাটিয়ে আমরা শান্তির পৃথিবী বা বলতে পারো ধ্যানমগ্ন দুনিয়া থেকে ঘুরে আসি।

হুমম! ঠিক ধরে ফেলেছ খালামণি বইয়ের দুনিয়ার কথা বলছি। বই সংক্রান্ত মজারু কিছু জেনে নেই, চলো।

-বেশিরভাগ গবেষক মনে করেন এই দুনিয়ার সবচেয়ে প্রাচীনতম বই বা গ্রন্থ হলো -- ভেদ (বেদ)।

-ইতিহাসের সর্বপ্রাচীন গ্রন্থগারটি 'রাজা আসুরবানিপাল' এর প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগার। খ্রিস্টপূর্ব ৬৬৮ - ৬২৬ অব্দে তার পিতামহ সেনা চেরির কর্তৃক যে সংগ্রহের সূচনা হয়েছিল উক্ত সংগ্রহের সঙ্গে আরো অনেক সংগ্রহ সংযোজন করে 'আসুরবানিপাল' তার রাজধানী তে হাজার হাজার মাটির চাকতি সমৃদ্ধ গ্রন্থকারটি গড়ে তুলেছিলেন। সে আমলে কাগজ আবিষ্কৃত হয়নি।

-"আমেরিকান লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস" পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্রন্থাগার। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত।

-ব্রিটিশ সরকারের ঘোষণা মতে মানব রচিত প্রথম বই হল "গিলগামেশ" (কোন ধর্মগ্রন্থ বাদে)। এই বইটি প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় টেরাকোটার ওপর লিখিত হয় প্রায় ৩৫০০ বছর আগে ।এটি একটি কাল্পনিক উপন্যাস।

-১৪৫৪ সালে একজন জার্মান ব্যক্তি পৃথিবীর প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত করেন। ব্যক্তির নাম জোহান্স গুটেনবার্গ। সেই ছাপাখানায় প্রথম ছাপা হওয়া বই "গুটেনবার্গ বাইবেল' পৃথিবীর প্রথম ছাপা বইয়ের মর্যাদা পায়। ৪.১৮×৩৭২ মিটার এবং পৃষ্ঠার সংখ্যা ৩৪৬ বইটি এ যাবৎ সবচেয়ে বড়। এর একটি পৃষ্ঠা উল্টাতে ছয় জন লোকের প্রয়োজন হয়। বইটির ওজন ১,৪২০ কিলোগ্রাম। বইটি তৈরি করেছেন একাত্তর বছর বয়সী হাঙ্গেরির বেলা ভার্গা।

-পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজনক বই হিসেবে বিবেচনা করা হয় -- "মেরি কুড়ি'র" "ল্যাবরেটরি নোটবুক" বইটিকে।

-পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রহস্যময় বই কোনটি জানো ? "দি ভয়ানিচ সানস্ক্রিপ্ট "। পোল্যান্ডের একজন ব্যবসায়ী আলফ্রেড ভয়ানিজ প্রথম এই বইটি উদ্ধার করেন।

-তোমরা শুনলে চমকে উঠবে শয়তানও কিন্তু বই লিখেছে ! ইতিহাস আমাদের সেরকমই বলে। বইটির নাম হল কোডেক্স গিগাস(বড় বই) বা শয়তানের বাইবেল।এর পেছনের কাহিনীটাও তোমাদের বেশ চমকে দেবে।

বহুদিন আগের কথা। এক খ্রিস্টানপাদ্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় সন্ন্যাসের ব্রত ভাঙ্গার দায়ে। তো সে মৃত্যুদন্ড মওকুফ করার জন্য রাজার কাছে অনুরোধ করে এবং বদলে সে এমন এক বই লিখে দেওয়ার ওয়াদা করে যেখানে জগতের সকল জ্ঞান লিপিবদ্ধ থাকবে। শর্ত হলো তাকে এক রাতের মাঝে বইটি লিখে শেষ করতে হবে। মাঝরাতে এসে বুঝতে পারে সে বইটি লিখে শেষ করতে পারবে না। তাই সে প্রার্থনায় মগ্ন হয়। কিন্তু সেই প্রার্থনা সে স্রষ্টার কাছে করে না । সে প্রার্থনা করে শয়তানদের রাজপুত্র লুসিফার এর কাছে। সে লুসিফার এর কাছে অনুরোধ করে বইটি লিখে দেবার জন্য। বদলে সে তার আত্মা লুসিফার কে দিয়ে দেবে। লুসিফার বাইবেল ওল্ড টেস্টামেন্ট, নিউ টেস্টামেন্ট এবং আরো কিছু মধ্যযুগীয় বিখ্যাত লেখকদের বইকে একত্রিত করে একটি বই লিখে এবং পাদ্রি শয়তানের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বইয়ের মাঝে শয়তানের একটি ছবি এঁকে দেয়। পাত্রী বইটি সকাল হবার আগে রাজাকে লিখে দিতে সার্থক হয়। কিন্তু কারাগার থেকে বের হবার সাথে সাথেই সে শুনতে পায় শয়তানের বীভৎস হাসি। শয়তান আসে তার আত্মাকে জব্দ করতে।

-এবার তোমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট উপন্যাসটির নাম বলবো । যা মাত্র ছয়টি শব্দে লিখা হয়েছিল। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের লেখা " For sale; baby shoes, never worn." "বিক্রির জন্য; শিশুর জুতা, ব্যবহৃত নয়।"

উপন্যাসটির ভাবার্থ হল বাচ্চার জন্য জুতা কেনা হয়েছিল। তবে সেই বাচ্চাটি পৃথিবীর আলো দেখেনি। মায়ের গর্ভেই শিশুটির মৃত্যু হয়। ৬ শব্দের গর্ভে মারা যাওয়ার শিশুর জন্য মায়ের অনুভূতি।

-আরেকটি উপন্যাস নিয়েও বেশ বিতর্ক আছে। অগাস্টো মন্টেরোসোর লেখা "The dinosaur"

"When he awoke, the dinosaur was still there.

-বই সম্পর্কিত গা ছমছমে একটা তথ্য জেনে রাখতে পারো--

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা চারটি আইনের বই আছে।

ভিক্টর হুগোর "লা মিজারেবল" বইয়ে একটি দীর্ঘ বাক্য আছে বেশি না, মাত্র ৮২৩ শব্দের!

বই সম্পর্কে এত কিছু জানতে জানতে মাথাটা আবার ধরে আসছে না তো? আরো আরো মজার অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবে। আজ না হয় এখানেই থামি।

ও হ্যাঁ শেষটাতেও একটু জেনে নেই বিশ্ব বই দিবস হচ্ছে-- ২৩ শে এপ্রিল।

Comments

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা