অহনা সরকারের গল্প
আমার স্বপ্নপূরণের দিন
ফ্রেব্রুয়ারি মাসের ২৫ তারিখ।
সেদিন ছিল আমার স্বপ্নপূরণের দিন, রাজশাহী থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার পালা। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি আমরা। রাতে গিয়ে পৌঁছাই ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে। সেখান থেকে আবার ট্রেনে উঠে ভোরে চট্টগ্রাম পৌঁছাই। সেখানে আমরা একদিনে পতেঙ্গা বীচ,
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার ও ফয়েজ লেক পরিদর্শন করি। পরদিন ভোরে বাসে উঠে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হই। বাসে যাবার সময় আমি খুবই উত্তেজিত ছিলাম।
কক্সবাজারে নেমে,
গেলাম সমুদ্র সৈকতে। আমাদের থাকার জন্য বুকড হোটেল ছিল সৈকতের খুবই কাছে। সেখানকার রুম থেকেই সমুদ্র সৈকত দেখা যায়। সমুদ্রের গর্জন শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম সকলে। সেখান থেকে হোটেলে যেতে ইচ্ছে করছিল না! আমরা হোটেলে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করলাম। রুমে ব্যাগ রেখে দৌড়ে চলে এলাম সমুদ্র সৈকতে। সেখানে আমরা স্নান করলাম আর পেলাম অনেক শামুক-ঝিনুক। সমুদ্রের পানি রোদে ঝলমল করছিল। প্রথমে আমি ভয় পাচ্ছিলাম সমুদ্রে নামতে, সমুদ্রের ঢেউয়ে কয়েকবার পড়ে যেতে নিয়েছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে আমার ভয় কেটে গেল। সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কায় খুব আনন্দ পাচ্ছিলাম। সেখান থেকে উঠতেই ইচ্ছে করছিল না।
আমরা দুপুরে খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। তারপর আবার সমুদ্র সৈকতে এলাম। চারদিক ঘুরে দেখলাম। দেখতে পেলাম সূর্যাস্তের সেই অপরূপ দৃশ্য। সন্ধ্যে হলো। রাত পর্যন্ত সেখানেই বসে রইলাম। তারপর আমরা হোটেলে ডিনার করে আমাদের রুমে চলে যাই। আমরা খুব ক্লান্ত ছিলাম। তাই বিছানায় যাবার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ি। পরদিন সকাল বেলা সৈকতে গিয়ে আমরা বালু দিয়ে খেলি ও ঘোড়ায় চড়ি। সেখান থেকে গেলাম ইনানী বীচে। সেখানে গিয়ে দেখলাম ফায়ারিং চলছে। তাই নেমে দেখতে গেলাম না আর। সেখানে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। আমি ঘোড়ার মতো শব্দ করার কথা ভাবলাম এবং ঘোড়ার মতো করে ডাকার চেষ্টা করলাম। ডাক দিতেই ঘোড়াটিও ডেকে উঠল। ঘোড়াটি হয়তো ভেবেছে যে অন্য কোনো ঘোড়া ডেকেছে। এটি দেখে সকলে হেসে উঠল। আমারও খুব হাসি পেয়েছিল।
সেখানে দেখতে পেয়েছিলাম সাম্পান নামক নৌকায় জেলেদের মাছ ধরার অপরূপ দৃশ্য। সেখানে বইছিল বাতাস। বাতাসে বেশ ভালো লাগছিল। সেখান থেকে গেলাম হিমছড়ি। হিমছড়িতে গিয়ে পাহাড়ে চড়েছিলাম। সেখানে সিঁড়ি থাকায় খুব সহজেই পাহাড়ে চড়তে পেরেছিলাম। সিঁড়ি প্রথমে শেষই হচ্ছিল না। যখন চূড়ায় পৌঁছে গেলাম, তখন একদিকে দেখতে পেলাম সমুদ্র ও অন্য পাশে আরও অনেক পাহাড়। সেই দৃশ্য দেখে সকলেই অভিভূত হলাম। নেমে আমরা সবাই আইসক্রিম খেলাম।
সেখান থেকে গেলাম বৌদ্ধ মন্দির এবং দেখতে পেলাম ১০০ ফুট সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তি। বিকালে সেখানে থেকে আমরা আমাদের হোটেলে ফিরে গেলাম। তারপর আমরা গিয়েছিলাম রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডে। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই অনেক ধরনের সামুদ্রিক মাছ। যেমন: গোল্ডেন ফিস, ব্ল্যাক ও হোয়াইট টাইগার, রাজ কাঁকড়া, অক্টোপাস। এছাড়াও দেখতে পেলাম হাঙ্গরের বাচ্চা। দেখে তো সবাই অবাক। আগে আমি শুধু টিভিতেই হাঙ্গর দেখেছি। এখানে এসে আমি জীবিত হাঙ্গর দেখতে পেলাম। আমাদের ফিরতে ফিরতে প্রায় ৭/৮ টা বেজে গিয়েছিল। তারপর আমরা ডিনার করে রুমে গেলাম। ঘুমোতে ঘুমোতে প্রায় ১২টা বেজে গেল।
পরদিন আমরা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠি এবং সকালের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ি। আমরা আগে থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে রেখেছিলাম। গাড়িতে চড়ে ২-৩ ঘন্টার মধ্যে আমরা পৌঁছে যাই টেকনাফে। সেখান থেকে আমরা একটি জাহাজে উঠে পড়ি, আমরা নাফ নদী দিয়ে এগিয়ে যাই। সেখানে আমরা গাঙচিল দেখতে পাই। আমরা তাদের চিপস খাওয়াই। নদীতে ছাড়তে না ছাড়তেই গাঙচিলেরা ঠোঁট দিয়ে চিপস নিয়ে যাচ্ছিল। আমরা ধীরে ধীরে সমুদ্রে ঢুকি। তারপর পৌঁছাই সেন্টমার্টিন।
প্রথমে যাই প্রবাল দ্বীপ। সেখানে দেখতে পাই প্রবাল পাথর। সেখানে ডাবের পানি পান করি। তারপর আমরা চলে যাই সেখান থেকে। আমাদের জাহাজ আবার ছেড়ে চলে যায়। আমরা সন্ধ্যায় টেকনাফে পৌঁছাই। আবার গাড়িতে চড়ে চলে যাই কক্সবাজার। আমরা ৮টার দিকে সমুদ্র সৈকতে যাই। সেখানে একটু দূরেই বেশ কিছু দোকান ছিল। আমরা চকলেট, আচার ও টুপি কিনেছিলাম। এছাড়াও কিনেছি কিছু মুক্তোর মালা। আচারগুলো ছিল খুবই সুস্বাদু। পরদিন আমরা যাই লাবনি পয়েন্ট। সেখানে আমরা সমুদ্র সৈকত দেখি। এরপর আমরা কেনাকাটা করতে যাই। আমরা ব্রেসলেট, মালা, শঙ্খ, মাথার ব্যান্ড প্রভৃতি কিনি। তারপর আমরা দুপুরের খাবার খেলাম। আর এরপর সবাই ঘোড়ার পিঠে চড়ি। আমরা টাট্টুঘোড়া দেখেছি তখন। ঘোড়াটি আকারে ছোট ছিল।
সমুদ্র সৈকতের পাশেই ছিল এক ধরনের গাড়ি। আমরা সেটিতে চড়েছিলাম। ঘুড়ি কিনে বাতাসে উড়াতে বেশ ভালো লেগেছিলো। তারপর আমরা আর একটি জায়গায় যাই। সেখানে অনেক বড় বাজার ছিল। আমরা প্রথমে কিনলাম মুক্তোর গয়না যেমন: মালা, চুড়ি, ব্রেসলেট ইত্যাদি। তারপর আমরা চকলেটের দোকানে যাই। আমরা সেখান থেকে দুই ধরনের প্যাকেট চকলেট নিলাম। প্রথমটি ছিল চকলেট ফ্লেভার অন্যটি ছিল স্ট্রবেরি ফ্লেভার। আমরা আচারের দোকান থেকে আমের আচার, জলপাইয়ের আচার,
বড়ই এর আচার কিনলাম এবং সেখান থেকে এক ধরনের বড়ইও কিনলাম। এটি খেলে বোঝাই যায় না যে এটি টক না মিষ্টি। কেনাকাটা শেষে আমরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ফিরে যাই। তারপর হোটেলে ব্যাগ রেখে নিচে এসে বসে থাকি। রাতে আমার মনটা ভালো ছিল না। কারণ রাত পেরোলেই যাওয়ার সময় এসে যাবে। মনটা খারাপ করেই ঘুমোতে হলো। পরদিন ভোরে উঠে রেডি হলাম। সমুদ্র সৈকতকে বিদায় জানিয়ে বাসে উঠলাম। তারপর ট্রেনে উঠলাম। রাজশাহী পৌঁছে শেষ হলো আমার এই ভ্রমণ কাহিনী।
(অহনা সরকার: পঞ্চম শ্রেণি, সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী)
Comments
Post a Comment