ফাহ্‌রিয়াল রহমানের কলাম

 খালামণির নলেজ বক্স 



আজকে তোমাদের সঙ্গে একটু অন্যরকম আড্ডা দেব ভাবছি।

ইনাইনা আর আইনানের গেমস প্রীতির ব্যাপারটা বেশ ভাবনায় ফেলেছে আমাকে।

ইনাইনার মতো তুখোড়, নিয়মনিষ্ঠ, ভালো ছাত্রী যখন মোবাইল বা ল্যাপটপে একটু বেশি সময় ব্যয় করে ভিডিও গেমসের পেছনে তখন বিষয়টি একটু চিন্তার বটে।

একটু আধটু খেলা যেতেই পারে তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু যখন সময়ের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং শুধুমাত্র যুদ্ধ -হানাহানির বিশেষ গেমগুলো বাচ্চাদের প্রিয় হয়ে ওঠে তখন বেশ ভাবনার বিষয়।

জানি অনেকেই হয়তো ভিডিও গেমস পছন্দ করো ঘরে বসে এ খেলাতেই বেশি অভস্ত্য। আর তোমাদের এই অভস্ত্যতা বাড়ার পেছনে আছে নানান কারণ যেমন, খেলার মাঠ নেই, ঘরবন্দী জীবন, খেলার সাথী নেই, চমকপ্রদ সব গেমস প্রলুব্ধ করছে তোমাকে সাথে বন্ধুরা আরো। অনেক কারণে দিন দিন ভিডিও গেমস আসক্তি বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি যেটার অভাব তাহলো সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা।

এখন কথা হলো ইনাইনা বা আইনান বাসায় চমৎকার পরিবেশে বড় হচ্ছে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চাও চলছে তাহলে ওরা কেন ভিডিও গেমসে ঝুকে পড়লো কেনইবা ওয়ার গেমস বেশি পছন্দ করছে?

এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি ওদের মা-বাবার সাহায্য নিয়েছি একটা সন্তোষজনক উত্তর বোধহয় পেয়েছি আমরা।

সেটা হলো ওদের খেলার মাঠ নেই, মাঠ থাকলেও যোগ্য খেলার সাথী নেই। বেশির ভাগ বন্ধুরা যেখানে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও গেমস নিয়ে গল্প করে সে গল্পে ওরা শরীক হতে পারে না। হয়তো ভিডিও গেমস না খেলায় তথাকথিত স্মার্ট বাচ্চারা ওদের খ্যাৎ বলছে। যদিও ইনাইনাকে সেটা বলার সাহস হবে না কারো। ইনাইনা বা আইনান চায় না ওদের বন্ধুদের সঙ্গে দুরত্ব তৈরি হোক।

আর তাই বন্ধুদের পছন্দের গেমস খেলতে শুরু করে। খেলতে খেলতে খুব মজা পেয়ে যায় নিজেদের বেশ যোদ্ধা যোদ্ধা মনে হয়।

ইনাইনা ও আইনানকে একেবারে খেলতে নিষেধ না করে বরং ঠিক কোন ধরনের গেমস ওদের জন্য ভালো হবে, কতটা সময় খেলবে, কোন খেলার কী প্রভাব পড়তে পারে এগুলো বুঝিয়ে বলেছি। আরো বেশি করে ছবি আকাঁ, গান বা নাচ বা যে কোনো কিছু শেখা যা ওদের ভালো লাগে। একটু দৌড়াদৌড়ি করা, ব্যাডমিন্টন, টেনিস, ভলিবল, বাস্কেটবল, ফুটবল ও ক্রিকেট জাতীয় খেলায় অংশগ্রহন করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছি।

ওরাও ওদের বন্ধুদের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে। যুদ্ধের গেম না খেলে বরং মেধা বুদ্ধি বাড়ে এরকম খেলাই ভালো। শুরুতেই আমরা ওদের বোঝার চেষ্টা করেছি। ওদের ধীরে ধীরে বোঝানোর চেষ্টা করেছি ভালো মন্দ চিত্র তুলে ধরেছি বলে ওরা আস্তে আস্তে সহিংসতা, আক্রমনাত্মক, হিংসাত্মক ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলো ধরতে পেরেছে।যদি ওরা এই খেলায় বেশি আসক্ত হয়ে পড়তো তবে ঐ পথ থেকে ওদের ফেরানো বেশ কষ্টকর হয়ে যেতো।

আজকাল বিভিন্ন জায়গায় শোনা যায় কিশোর গ্যাংস্টারদের নানা কাহিনী। এগুলো একদিনে তৈরি হয়নি। হতে পারে নানাবিধ সহিংসতা মূলক ভিডিও গেমস খেলতে খেলতে একসময় নিজেরা জড়িয়ে পড়ে নেতিবাচক ক্রিয়াকলাপে।

খালামণি গেমস নিয়ে কেন এত কথা বলছে ব্যাপারটা তো নিশ্চয় এতক্ষণে বোঝা হয়ে গেছে তোমাদের । হ্যাঁ, আমি চাই তোমরা ইনাইনা আর আইনানের মতো করে পরিষ্কারভাবে এ বিষয়টা বোঝো। খেলা করবে অবশ্যই । খেয়াল রাখতে হবে সেটাতে যেন পরিপূর্ণভাবে তোমার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটে।
 
অনেক বেশি ভারি আড্ডা হয়ে যাচ্ছে। চলো যে ভিডিও গেমস নিয়ে এত কথা তার সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক।

# ভিডিও গেমসের জনক বলা হয় রাল্ফ এইচ ব্লেয়ার কে।

তবে আধুনিক ভিডিও গেমসের জনক শিজেরু মিয়ামোটো কে।

# প্রায় ৪০ বছর হলো ভিডিও গেমের বয়স।

# বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও গেমের তালিকায় গুগলের তথ্য অনুসারে এই মুহূর্তে এক নম্বরে আছে--

"মাইনক্রাফট", এছাড়াও সিএসগো, ফোর্টনাইট এবং পাবজি।

আমার পছন্দের কিছু শিক্ষামূলক গেমসের নাম বলি এবার:


# বিগ ব্রেইন একাডেমি :

বিগ ব্রেইন একাডেমি শিশুদেরকে নানা ধরনের সমস্যা সমাধান করার জন্য দিয়ে থাকে। শিশুরা যে স্কোর করতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে গেমসটি শিশুদের মস্তিষ্কের ওজন বা ভর পরিমাপ করে থাকে। শিশুরা নিজেরা বা অন্য কোনো বন্ধুর বিপরীতে খেলতে পারে।


# মাই ওয়ার্ড কোচ:

এখানে নতুন শব্দ শেখার মাধ্যমে শিশুর শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। একাধিক খেলোয়াড়ের জন্য এখানে চারটি গেমস এবং 6 টি অনুশীলনী রয়েছে যা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিকে সম্পন্ন করতে হবে।

এখানে ভিন্ন ভিন্ন চারজন ভার্চুয়াল শিক্ষক রয়েছে। বিদেশি কোন ভাষা শিখতে চাইলে বিদেশি কোচ তাদের সেই ভাষা শেখাবেন।


# ইউ ড্র স্টুডিও :

এই গেমটি যখন অঙ্কনের অবস্থায় থাকে, তখন নানা ধরনের ইফেক্টস, নানা আকৃতির ব্রাশ এবং রং ব্যবহারের মাধ্যমে ছবি আঁকতে পারে । আঁকা উকির কাজ শেষে তারা তা সংরক্ষণ বা সেভ করতে পারে।


# লিটল বিগ প্লানেট:

এই গেমটি শিশুর মনে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে।


# মিস্টার পেন্সিল সেভস ডুডলবার্গ:

শিশুরা এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আকার শনাক্ত করতে পারে এবং ডুডলবার্গ শহর রক্ষার জন্য মিস্টার পেন্সিল চরিত্রকে সহায়তা করতে ছবি আঁকতে সাহায্য করে।


# সিভিলাইজেশন:

এই গেমটি শিশুদের তাদের কৌশল, কূটনীতি, পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে। শিশুরা তাদের সভ্যতা তৈরি বোন প্রসারে সম্পদ সংগ্রহ করবে। যদি শিশুর মৃত্যু এলাকায় তাদের প্রয়োজনীয় সম্পদ না পায় তবে তাকে অন্য লোকেদের নিকট থেকে সেগুলো কিনে নিতে হবে এবং সে বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। খেলোয়াড়েরা বিশ্ববিদ্যালয়, বাজার, শস্যভান্ডার, ব্যাংক, কারখানা এবং আরো অনেক কিছু তৈরি করবে।


# ম্যাজিক স্কুল বাস :

শিশুদেরকে বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে শিক্ষাদানের দিকে দৃষ্টি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই গেমটি।

Comments

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা