ইরাম নায়লার গল্প : রিতার ভালো কাজ

রিতার ভালো কাজ


রিতা এবার তৃতীয় শ্রেণিতে উঠবে। কিছু দিন আগেই বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে তার। সকাল ৮ টার দিকে ঘুম ভেঙ্গে গেল রিতার। গতরাতে মিনা কার্টুন দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে গেছিল তার মনেই পড়ছে না। ঘুমের মধ্যে সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখেছে সে। স্বপ্নে সে দেখেছে মিনার মত বাসার সবাইকে সহযোগিতা করছে। তাই মনটা ভীষণ ভালো তার। রিতা ঠিক করল সে আজ একটা ভালো কাজ করবে, যা দেখে তার মা-বাবা খুশি হয়ে উঠবে। 

সে অনেক চিন্তা করে বের করল, সে কী কাজ করবে? রিতা ঠিক করল তার মা-বাবা অফিসে যাবার পর সে তার ছোট ভাইকে নিয়ে মা-বাবার ঘরটা সুন্দর করে গুছাবে। রিতার ছোট ভাইয়ের নাম আইরান, তবে রিতা তাকে আদর করে আইরা বলে ডাকে। আইরানকে ডাক দিয়ে সব বুঝিয়ে বলল রিতা। ভাই-বোনে অপেক্ষা করতে থাকে মা-বাবার অফিসে যাবার। কিছুতেই তাদের সময় কাটে না আর। একটু পর পরই শুধু ঘড়ি দেখছে আর ভাবছে মা-বাবা বের হচ্ছে না কেন! বাবা-মা বের হতেই দড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিল রিতা। রিতা বলল চল আইরা আমরা এখন কাজ শুরু করি। হ্যাঁ আপু চলো, সায় দিল আইরান।

দুই জনে ঘরের মাকড়শার জাল পরিষ্কার করে সবগুলো ফার্নিচার, জানালা, দেওয়াল ঘড়ি, ওয়ালম্যাট ইত্যাদি ঝাড়া-মুছা করল। তারপর বুয়াকে বলল ঘর ঝাড়– দিয়ে মুছে দিতে। রিতা তার দাদীকে গিয়ে বলল সুন্দর একটা বিছানার চাদর দিতে। দাদী বলল চাদর কী করবি? রিতা তার সব কথা দাদীকে জানালো। পেপার পড়তে পড়তে দাদা বলল, গুছানো শেষ হলে আমাদের জানাস, দেখব কেমন করে গুছিয়েছিস। ঠিক আছে দাদা বলে রিতা চাদর নিয়ে দৌড় দিল। বুয়ার কাজ শেষ হতেই রিতা ঘরে ঢুকে বালিশের কাভার চেঞ্জ করে টান টান করে বিছিয়ে দিল চাদরটা বিছানার উপর। দরজা-জানালার পর্দাগুলো আইরানকে ঠিক করতে বলে সে নিজে ড্রেসিং টেবিল গুছাতে লাগল। পর্দা ঠিকঠাক করে আইরান বলল, আপু আর কী করব? এরপর রিতা ও আইরান কাপড়ের হ্যাংগার স্ট্যান্ড গুছালো, বেড রুম সোফা, বেড সাইড টেবিল, মোবাইল চার্জার ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানে সাজিয়ে রাখল।

ঘরের সব কাজ শেষ করেও ওরা ভাবছে আর কী করা যায়। হঠাৎ করে রিতা বলল, আইরা ড্রয়িং রুমের কাঁচের নতুন ফুলদানিটা বেড সাইড টেবিলের উপর রাখলে কেমন হবে? আইরান বলল, খুব সুন্দর লাগবে আপু! যা নিয়ে আন আইরা, রিতা বলল। উত্তেজনায় দৌড় দিয়ে আনতে গেল আইরান আর নিয়ে ফেরার সময় আইরানের হাত থেকে ফুলদানি পড়ে ভেঙ্গে গেল। ইসসস! করুণ গলায় বলে উঠল আইরান। ভাইকে সান্তনা দিল রিতা। দাদা-দাদীকে ফুলদানি ভেঙ্গে যাবার কথা জানালো। দাদী বলল, এতো দামি ফুলদানিটা ভেঙ্গে গেল! তোদের মা খুব রেগে যাবে। দাদা বলল, তোদের মা কে আপাতত কিছু বলার দরকার নাই আমি এখনই নতুন একটা ফুলদানি কিনে আনছি।

দাদা নতুন ফুলদানি কিনে দিল তবুও রিতা ভাবে বকা তো খেতেই হবে। আর মার কাছে এখন গোপন করলেও মা পরে ঠিক জানতে পারবে। তাতে মা আরও বেশি রাগ করবে। তাই মাকে আজ বলাটাই ভালো হবে। মা অফিস শেষে বাসাতে ফিরে ওদের দেখে জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের চেহারা এমন কেন? কী হয়েছে তোমাদের? রিতা কোনো কথা না বলে বেড রুমের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করল। মা ঘরে ঢুকে তো অবাক! বলল, এতো সুন্দর করে কে সাজালো আমার রুম? মায়ের ভালো লাগা দেখার পরেও রিতা-আইরান চুপ করে আছে। মা বুঝতে পারে এটা তার বাচ্চাদের কাজ।

মা বলল, এতো সুন্দর করে ঘরটা সাজিয়েছ তোমরা তারপরেও এমন ভীত হয়ে আছো কেন? তখন রিতা ফুলদানি ভেঙ্গে যাবার কথা মাকে বলল। শুনে মা কিছু সময় চুপ করে থাকল। তারপর মা বলল, ফুলদানিটা আমি খুব পছন্দ করে কিনেছিলাম তাই ভেঙ্গে গেছে জেনে মন খারাপ লাগছে। কিন্তু তোমরা আমাকে খুশি করার জন্য এত সব করেছ এটাই আমাকে অনেক বেশি আনন্দ দিচ্ছে। মা দুই জনকে বুকে জড়িয়ে ধরে তাদের ভয় দূর করে বলল, কিছু করতে গেলে কিছু ক্ষতি হতেই পারে কিন্তু তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালো কিছু করার চেষ্টা করাটা।


[ইরাম নায়লা, চতুর্থ শ্রেণি, শিমুল মেমোরিয়াল স্কুল, রাজশাহী]

Comments

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা