অহংকারী ময়ূর- অনুবাদ: তাবাসসুম নাজ
অহংকারী ময়ূর
অনেক অনেক দিন আগের কথা। একবার পৃথিবীর সব প্রাণীরা একত্রিত হয়েছিল। অনেক গুরুগম্ভীর আলোচনা শেষে তারা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বনের পশুরা ঠিক করল যে সিংহ হবে তাদের রাজা। সমুদ্রের প্রাণীরা তিমিকে বেছে নিল আর আকাশের পাখিরা মনোনিত করল রাজহাঁসকে।
এরপর বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেল। রাজহাঁসের ঘরে জন্ম নিল এক রাজকুমারী। রাজকুমারীর পালক রাজহাঁসের চাইতেও সুন্দর আর উজ্জ্বল ছিল। রাজকুমারী যখন ছোট, তখন রাজহাঁস তাকে বলল
--- কন্যা, তুমি যা চাইবে, তোমাকে আমি তাই দিব।
বড় হয়ে রাজকুমারী বাবাকে আগের প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলল
--- বাবা, আমি আমার স্বামী নিজেই বেছে নিতে চাই।
--- বেশ তো। বলল রাজহাঁস।
রাজহাঁসের আহ্বানে রাজ্যের সব পাখিরা একে একে জড়ো হতে থাকে। ঘোষণা দেয়া হয় যে রাজকুমারী তাদের মধ্যে থেকে নিজের পছন্দমত সঙ্গী নির্বাচন করে নিবে।
দেখতে দেখতে বিল ভরে উঠল নানান প্রজাতির পাখি দিয়ে। সবার কলতান দূর দূরান্ত থেকে শোনা যেতে লাগল। তাদের মধ্যে সাদা রাজহাঁস, কালো রাজহাঁস, ঈগল, প্যাঁচা, ফিঙ্গে, চড়ুই, কোকিল, হামিংবার্ড, নীলকন্ঠি, মাছরাঙা, টিয়া, লাভবার্ড, ধনঞ্জয় সবাই ছিল।
পরদিন রাজসভায় সবাইকে একত্রিত করে রাজহাঁস রাজকুমারীকে উদ্দেশ্য করে বলল
--- কন্যা, তুমি এদের মধ্য থেকে পছন্দসই একজনকে তোমার স্বামী হিসাবে বরণ করে নাও।
রাজকন্যা তখন ঘুরে ঘুরে সবার সাথে মিলিত হতে থাকল। এতসব সুন্দর সুন্দর পাখি এসেছে। সবার সাথে পরিচিত হতে রাজকন্যার সমস্ত দিন লেগে গেল।
এরপর এল সবার মাঝ থেকে একজনকে মনোনীত করবার পালা। কিছুকিছু পাখি এত সুন্দর, তাদের চালচলন এত রাজকীয়, যে রাজকন্যা বিরাট মুশকিলে পড়ে গেল। অনেক ভেবেচিন্তে অবশেষে সে ময়ূরকে জয়ী ঘোষণা করল।
ময়ূরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত নিখুঁত ছিল। লম্বা গর্বিত গ্রীবা, পান্না সবুজ আর তুঁতে নীল পালক, মাথায় রাজকীয় মুকুট--- দেখেই রাজকুমারী মোহিত হয়ে গেল।
আমাদের দুজনকে দারুণ মানাবে, ভাবল সে।
রাজহাঁসের সামনে উপস্থিত হয়ে রাজকন্যা জানালো
--- বাবা, আমি ময়ূরকে আমার স্বামী হিসাবে বরণ করতে চাই।
রাজহাঁস তাতে সায় দিল। সবাইকে ঘোষণা করে দিল
--- তোমাদের সবাইকে আসবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। এতসব সুন্দর পাখিরা আজ সভায় উপস্থিত ছিল যে বেছে নিতে আমার কন্যার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে সে তার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। সঙ্গী হিসাবে রাজকন্যা ময়ূরকে বেছে নিয়েছে।
এসো, আমরা সবাই ময়ূরের গুণগাণ গাই।
সকলে হর্ষধ্বনি করে গান গেয়ে ওঠে। অনেকে ময়ূরকে অভিনন্দর জানাতে থাকে। বলে
--- কত ভাগ্যবান তুমি!
বেশিরভাগ পাখি ময়ূরকে কূর্নিশ করে, ওর জন্য উপহার সামগ্রী এনে দেয়।
সবার অভিনন্দন আর প্রশংসা পেয়ে ময়ূরের মাথা বিগড়ে যেতে সময় লাগল না। গর্বিত ভঙ্গীতে বুক ফুলিয়ে পেখম মেলে ধরে গলাটাকে আকাশের দিকে বাড়িয়ে ধরল সে।
কিন্তু এখানেই সে থেমে গেল না। আরম্ভ করল এক অদ্ভুত নাচ। একপায়ে নেচে নেচে বৃত্তাকারে ঘুরতে শুরু করল, সেইসাথে অহংকারী কেকা রব তুলল।
এরপরে যা করল তা আরো অশোভন। ময়ূর ভুলে গেল যে সে রাজদরবারে উপস্থিত রয়েছে। রাজহাঁস ও রাজকুমারীর সামনে দৃষ্টিকটুভাবে উপুড় হয়ে নিতম্ব ডাইনে বায়ে দুলিয়ে পেখম নেড়ে দেখাতে লাগল।
ময়ূরের কান্ড দেখে আমন্ত্রিত পাখিরা স্তম্ভিত হয়ে গেল, কিছু ফচকে পাখি খিকখিক করে হেসে ফেলল।
কান্ড দেখ ময়ূরের! রাজকন্যার হাত জিতে নিয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে আরকি!
ময়ূরের অভদ্র আচরণে রাজহাঁস প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে গেল।
--- ময়ূর! এ কেমন আচরণ তোমার? রাজকন্যা তোমাকে পছন্দ করেছে বলে কি এমন নির্লজ্জভাবে নিজেকে প্রদর্শন করতে হয়? রাজসভায় কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা দরকার, সেটা কি তুমি জানো না?
রাজহাঁসের হুংকারে ময়ূর তাড়াতাড়ি লজ্জিতমুখে সোজা হয়ে দাঁড়াল।
কিন্তু রাজহাঁস ততক্ষণে মনস্থির করে ফেলেছে। কঠিন গলায় বলতে থাকে
--- যে পাখি তালজ্ঞান রাখতে পারে না, সবার সামনে ভাড়ের মত আচরণ করে, তার সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেব না। তুমি এখন যেতে পারো। রাজকন্যার যোগ্য পাত্র তুমি না!
ময়ূরের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সে ভাবতেই পারে নি পরিস্থিতি এমনভাবে বদলে যেতে পারে। প্রচণ্ড লজ্জিত আর অনুতপ্ত হয়ে রাজহাঁসের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে ময়ূর।
কিন্তু রাজহাঁস তার সিদ্ধান্তে অটল থাকল। কিছুতেই সে ময়ূরের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবে না।
লজ্জায় ময়ূর আর মুখ দেখাতে পারে না। রাজকন্যা তো হাতছাড়া হলোই, সবার সামনে অপদস্থও হতে হল। দেরী না করে কোনোরকমে যতদ্রুত সম্ভব রাজসভা থেকে পালিয়ে গেল সে।
“অনভ্যাসের ফোঁটা কপালে চড়চড় করে।”
এরপর বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেল। রাজহাঁসের ঘরে জন্ম নিল এক রাজকুমারী। রাজকুমারীর পালক রাজহাঁসের চাইতেও সুন্দর আর উজ্জ্বল ছিল। রাজকুমারী যখন ছোট, তখন রাজহাঁস তাকে বলল
--- কন্যা, তুমি যা চাইবে, তোমাকে আমি তাই দিব।
বড় হয়ে রাজকুমারী বাবাকে আগের প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলল
--- বাবা, আমি আমার স্বামী নিজেই বেছে নিতে চাই।
--- বেশ তো। বলল রাজহাঁস।
রাজহাঁসের আহ্বানে রাজ্যের সব পাখিরা একে একে জড়ো হতে থাকে। ঘোষণা দেয়া হয় যে রাজকুমারী তাদের মধ্যে থেকে নিজের পছন্দমত সঙ্গী নির্বাচন করে নিবে।
দেখতে দেখতে বিল ভরে উঠল নানান প্রজাতির পাখি দিয়ে। সবার কলতান দূর দূরান্ত থেকে শোনা যেতে লাগল। তাদের মধ্যে সাদা রাজহাঁস, কালো রাজহাঁস, ঈগল, প্যাঁচা, ফিঙ্গে, চড়ুই, কোকিল, হামিংবার্ড, নীলকন্ঠি, মাছরাঙা, টিয়া, লাভবার্ড, ধনঞ্জয় সবাই ছিল।
পরদিন রাজসভায় সবাইকে একত্রিত করে রাজহাঁস রাজকুমারীকে উদ্দেশ্য করে বলল
--- কন্যা, তুমি এদের মধ্য থেকে পছন্দসই একজনকে তোমার স্বামী হিসাবে বরণ করে নাও।
রাজকন্যা তখন ঘুরে ঘুরে সবার সাথে মিলিত হতে থাকল। এতসব সুন্দর সুন্দর পাখি এসেছে। সবার সাথে পরিচিত হতে রাজকন্যার সমস্ত দিন লেগে গেল।
এরপর এল সবার মাঝ থেকে একজনকে মনোনীত করবার পালা। কিছুকিছু পাখি এত সুন্দর, তাদের চালচলন এত রাজকীয়, যে রাজকন্যা বিরাট মুশকিলে পড়ে গেল। অনেক ভেবেচিন্তে অবশেষে সে ময়ূরকে জয়ী ঘোষণা করল।
ময়ূরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত নিখুঁত ছিল। লম্বা গর্বিত গ্রীবা, পান্না সবুজ আর তুঁতে নীল পালক, মাথায় রাজকীয় মুকুট--- দেখেই রাজকুমারী মোহিত হয়ে গেল।
আমাদের দুজনকে দারুণ মানাবে, ভাবল সে।
রাজহাঁসের সামনে উপস্থিত হয়ে রাজকন্যা জানালো
--- বাবা, আমি ময়ূরকে আমার স্বামী হিসাবে বরণ করতে চাই।
রাজহাঁস তাতে সায় দিল। সবাইকে ঘোষণা করে দিল
--- তোমাদের সবাইকে আসবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। এতসব সুন্দর পাখিরা আজ সভায় উপস্থিত ছিল যে বেছে নিতে আমার কন্যার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে সে তার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। সঙ্গী হিসাবে রাজকন্যা ময়ূরকে বেছে নিয়েছে।
এসো, আমরা সবাই ময়ূরের গুণগাণ গাই।
সকলে হর্ষধ্বনি করে গান গেয়ে ওঠে। অনেকে ময়ূরকে অভিনন্দর জানাতে থাকে। বলে
--- কত ভাগ্যবান তুমি!
বেশিরভাগ পাখি ময়ূরকে কূর্নিশ করে, ওর জন্য উপহার সামগ্রী এনে দেয়।
সবার অভিনন্দন আর প্রশংসা পেয়ে ময়ূরের মাথা বিগড়ে যেতে সময় লাগল না। গর্বিত ভঙ্গীতে বুক ফুলিয়ে পেখম মেলে ধরে গলাটাকে আকাশের দিকে বাড়িয়ে ধরল সে।
কিন্তু এখানেই সে থেমে গেল না। আরম্ভ করল এক অদ্ভুত নাচ। একপায়ে নেচে নেচে বৃত্তাকারে ঘুরতে শুরু করল, সেইসাথে অহংকারী কেকা রব তুলল।
এরপরে যা করল তা আরো অশোভন। ময়ূর ভুলে গেল যে সে রাজদরবারে উপস্থিত রয়েছে। রাজহাঁস ও রাজকুমারীর সামনে দৃষ্টিকটুভাবে উপুড় হয়ে নিতম্ব ডাইনে বায়ে দুলিয়ে পেখম নেড়ে দেখাতে লাগল।
ময়ূরের কান্ড দেখে আমন্ত্রিত পাখিরা স্তম্ভিত হয়ে গেল, কিছু ফচকে পাখি খিকখিক করে হেসে ফেলল।
কান্ড দেখ ময়ূরের! রাজকন্যার হাত জিতে নিয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে আরকি!
ময়ূরের অভদ্র আচরণে রাজহাঁস প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে গেল।
--- ময়ূর! এ কেমন আচরণ তোমার? রাজকন্যা তোমাকে পছন্দ করেছে বলে কি এমন নির্লজ্জভাবে নিজেকে প্রদর্শন করতে হয়? রাজসভায় কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা দরকার, সেটা কি তুমি জানো না?
রাজহাঁসের হুংকারে ময়ূর তাড়াতাড়ি লজ্জিতমুখে সোজা হয়ে দাঁড়াল।
কিন্তু রাজহাঁস ততক্ষণে মনস্থির করে ফেলেছে। কঠিন গলায় বলতে থাকে
--- যে পাখি তালজ্ঞান রাখতে পারে না, সবার সামনে ভাড়ের মত আচরণ করে, তার সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেব না। তুমি এখন যেতে পারো। রাজকন্যার যোগ্য পাত্র তুমি না!
ময়ূরের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সে ভাবতেই পারে নি পরিস্থিতি এমনভাবে বদলে যেতে পারে। প্রচণ্ড লজ্জিত আর অনুতপ্ত হয়ে রাজহাঁসের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে ময়ূর।
কিন্তু রাজহাঁস তার সিদ্ধান্তে অটল থাকল। কিছুতেই সে ময়ূরের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবে না।
লজ্জায় ময়ূর আর মুখ দেখাতে পারে না। রাজকন্যা তো হাতছাড়া হলোই, সবার সামনে অপদস্থও হতে হল। দেরী না করে কোনোরকমে যতদ্রুত সম্ভব রাজসভা থেকে পালিয়ে গেল সে।
“অনভ্যাসের ফোঁটা কপালে চড়চড় করে।”
বিদেশী রূপকথার ভাবানুবাদ
Comments
Post a Comment