পৃথিকা ইসলাম বৈশালীর গল্প

কে?!

  

 


রিফা রোজ বিকালে মিমিদের বাসায় যায় । সে তার খুব ভালো বন্ধু, একদম ছো্টোবেলা থেকে । গত কয়েকদিন অবশ্য যাওয়া হয়নি, মিমি তাদের গ্রামের বাড়ি গিয়েছিল তাই । গতকাল সে ফিরেছে তাই আজকে রিফা আবার মিমিদের বাসায় যাবে।

 

বিকাল হতে না হতেই সে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে মিমিদের বাসায় দৌড়! খানিক পরে, তারা মিমির ঘরে বসে গল্প করছিল, আজকে আবার ফারিয়াও এসেছে পাশের বাড়ি থেকে।

হঠাৎ রিফার মনে পড়ল, এই কয়দিনের মধ্যে তার সাথে মজার একটা ঘটনা ঘটেছে । আবার অনেকটা ভয়েরও!

রিফা বলল, “জানিস, জানিস কী হয়েছে?”

মিমি মজা করে বলল, “হ্যাঁ জানি!”

রিফা বিরক্ত হয়ে বলল, “আরে ধুর! রাখ তোর মজা! “

ফারিয়া হাসতে হাসতে বলল, “হ্যাঁ বল বল।“

রিফা আবার বলতে শুরু করল, “আরে আমাদের বাসায় যে ছোটো স্টোর-রুম আছে না?”

মিমি বলল, “হুম, তো?”

রিফা বলল, “ওখানে আমার ছো্টোবেলার সব খেলনা রাখা আছে, একটা জিনিস খুঁজতে-“

ফারিয়া তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “এই তুই খালি জিনিস হারাস!”

মিমি হাসতে শুরু করে দিল, রিফা আরেক-দফা বিরক্ত হয়ে বলল, “তোরা আমাকে বলতে দিবি! হারাইনি মোটেও!”

“আচ্ছা, আচ্ছা বল…”

“হ্যাঁ, তো আমি আমার অনেক আগের একটা ডায়েরি খুঁজতে ওখানে ঢুকব, মা-কে জিজ্ঞেস করলাম চাবিটা কোথায়, ওই ঘরে তালা দেওয়া থাকে তো। মা বলল, কী জানি বাপু এক বছরের মধ্যেও তো মনে হয় ওঘরে কেউ ঢোকেনি, চাবিটা যে কোথায়! তারপর খোঁজাখুঁজি করে চাবিটা বের করে দিলো।“

“তারপর ডায়েরি খুঁজে পেলি?”

“আরে না শোন ভা্লো করে। আমি ঢুকেছি তো, খুঁজছি; অনেক জিনিস ঐ ঘরে, হঠাৎ শুনি কে যেন হাসছে! মনে হচ্ছে দূর থেকে আসছে, বেশ আস্তে। আমি শুনে মনে করেছি, নিচে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কারা মনে হয় হাসাহাসি করছে। ঘরটায় আবার লাইট নাই, সন্ধ্যা হয়ে আসছিল তাই হাসির কথা ভুলে গিয়ে ওখানে থেকে চলে আসছি, ভাবলাম যে পরেরদিন খুঁজব। পরের দিন সারাদিন আর মনে পড়েনি, বিকালে মনে পড়েছে, আবার খুঁজতে গিয়েছি, আবার শুনি হাসি! এবার আমি সত্যি একটু ভয় পেয়েছি।“

“তুই সত্যি শুনেছিস? ভুল না তো?”

“না আমি সত্যিই শুনেছি! আমি তখন মা-কে গিয়ে বললাম, মা বলল, ‘দ্যাখ কেউ হয়ত যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে হাসতে হাসতে, ওই ঘরে তো আর কেউ নাই!’ আমিও তখন ভাবলাম যে হয়ত, কেউ প্রতিদিন বিকালে হাঁটছে।

যাই হোক, আবার গিয়ে ঢুকেছি, তখনও হেসেই যাচ্ছে একই ভাবে! আমি তখন খুব ভয় পেয়েছি। ভূত নাকি! দৌড়ে বের হতে যাব, কিন্তু নিজেকে থামালাম। ‘ভূত বলে কিছু নাই’ মনে মনে এটা বলে, হাসিটা ভালো করে শুনলাম, খুব চেনা চেনা লাগছিল…”

মিমি আর ফারিয়া একসাথে বলে উঠল, “তারপর!”

“আমি তখন বের করার চেষ্টা করলাম যে শব্দটা কোনদিক থেকে আসছে, একটু পর বুঝতে পেরেছি যে উপরের শেল্ফ থেকে আসছে। শেল্ফের কাছে গিয়ে ভালো করে দেখি যে, আমার অনেক আগের একটা পুতুল হাসছে। ওটা হাসিরই পুতুল, সুইচ অন করলেই হাসে, সুইচটা অন ছিল। তখন সেটা বন্ধ করে দিলাম।“

মিমি নিশ্বাস ছেড়ে বলল, “তাও ভালো! আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে ভূত নাকি!”

ফারিয়া বলল, “আমিও তো ভাবছিলাম ভূত, নয়ত গবলিন!”

“আরে আমিও বোকার মতো কম ভয় পেয়েছিলাম নাকি! হিহি! আচ্ছা তুই তো দেখেছিস ও পুতুলটা মিমি আগে।“

“ও হ্যাঁ হ্যাঁ! কিন্তু ওইটা তো অনেক জোরে হাসতো?”

রিফা বলল, “হ্যাঁ কিন্তু ব্যাটারি প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে মনে হয়, তাই পারছিল না, শব্দ খুব আস্তে হচ্ছিল।“

“ও…।“

হঠাৎ ফারিয়া বলল, “আচ্ছা সব নাহয় বুঝলাম। কিন্তু তোরা কেউ নাকি অনেকদিন যাসনি ঐ ঘরে, অনেক আগে থেকে সুইচ অন করা থাকলে ব্যাটারি কি এতদিন টিকবে?”

রিফা একটু চমকে বলল, “না তো! ওটা এমনিতেই প্রায় নষ্ট ছিল!”

মিমি বলল, “সেটাই তো! তাহলে সুইচটা কে অন করল?”

ফারিয়া চোখ বড় বড় করে বলল, ”তাহলে কি…?”

ওরা কেউ কিছু বলল না আর, নীরবে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। 
 
 
 

 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা