ফাহ্‌রিয়াল রহমানের কলাম

খালামণির নলেজ বক্স




জ ভীষণ চনমন করছে মনটা। মনে হচ্ছে সবাইকে নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় গিয়ে এক ঝাঁক রঙিন প্রজাপতির মতো উড়ে উড়ে, নেচে -গেয়ে একাকার হয়ে যাই। যেখানে সুরে-ছন্দে, কথায় - রসে, প্রাণে মিলবে প্রাণ।

খুব অবাক হচ্ছো বুঝি? ভাবছো খালামণি এসব কী বকে চলছে!

আজ খালামণি যখন সরাসরি তোমাদের মাঝে তখন তোমাদের সব কৌতূহল তো মেটাতে হবে।

দাঁড়াও সে কাহিনি বলার আগে চলো যে মাধ্যমে আমরা একে অন্যকে চিনেছি জেনেছি। যে মাধ্যম আমাদের সারা পৃথিবীর নানান খবর জানায়, আমাদের কৌতূহলী মনে লুকিয়ে থাকা হাজারো প্রশ্নের উত্তর দেয়, আমাদের কে তার সঙ্গী করে নেয়। সেই খবরের কাগজ নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে নেই, মানে ইতিহাসের ঘাড়ে বসে একটু টাইম ট্রাভেল করে আসি চলো।
 
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় যে, প্রায় এক হাজার বছর আগে চীন দেশে প্রথম কাগজ দেখা যায় নাম ছিল 'জিং পাও' এর অর্থ রাজধানীর সংবাদ , যা কিনা তামা বা ব্রোঞ্জ এর ওপর খোদাই করে লেখা হতো ।
 
ইতিহাস বলে প্রথম খবরের কাগজ বা পত্রিকা ছাপার গৌরবের অধিকারী জার্মানির জোহান কারোলাস (১৬০৯)।
 
আবার কারও মতে অক্সফোর্ড গেজেট (১৬৬৫)
 
খবরের কাগজে প্রথম ছবির ব্যবহার শুরু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ।
 
আর আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম খবরের কাগজের নাম হল 'দৈনিক আজাদী' ।

এতো গেলো সর্বজনীন পত্রিকার খোঁজ ।

আমাদের শিশু-কিশোরদের জন্য প্রথম প্রকাশিত পত্রিকা ম্যাগাজিন এর খোঁজ তোমরা হয়তো কেউ কেউ জানো । কি বলতে পারবে তার নাম ? জানি কেউ না কেউ নিশ্চয়ই বলতে পারবে। 'Children's encyclopedia' (১৯০৮)

এটা শিশুদের জন্য প্রথম প্রকাশনা বটে কিন্তু বই আকারে, পত্রিকা বা ম্যাগাজিন আকারে নয়।

শুধুমাত্র শিশুদের আগ্রহের বিষয়বস্তু নিয়ে শিশুদের জন্য প্রকাশিত পত্রিকার নাম -- লিটল পেপার। যা কিনা পরবর্তীতে ট্যাবলয়েড আকারে children's newspaper হিসেবে প্রকাশিত হতে থাকে। এখন বাংলাদেশে শিশুদের জন্য নিয়মিত অনেক ধরনের মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে থাকে। যেমন--- "শিশু", "নবরুণ", "কিআ" ইত্যাদি।

অনেক কথা অনেক ইতিহাস জানা হলো ।

এবার আসি আসল কাহিনিতে আজ আমার/আমাদের ভীষণ আনন্দের দিন। কেন? মনে হয় সেটা সবাই টের পেয়ে গেছো ইতোমধ্যেই। হ্যাঁ, সেই যে পত্রিকার যাত্রা শুরু হয়েছিল এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে সে কতইনা প্রাচুর্যময়, কত বিষয়ে, কত রূপে সেজে প্রকাশিত হয় প্রতিদিন/পাক্ষিক/ মাসিক/ ত্রৈমাসিক আকারে ।

হঠাৎ করোনা নিয়ে এল বিভীষিকাময় দিন।

সব কেমন উলট পালট হয়ে গেল। দৈনিক কাগজটাও ছুঁয়ে দেখতে, পড়তে, ভয় পান কেউ কেউ। অনলাইনে পড়ার ব্যবস্থা হয়ে গেল।

বেশ বিপদে পড়ে গেল শিশুরা তারা স্কুলে যেতে পারে না, মাঠে ছুটোছুটি করে খেলতে পারেনা । নিরানন্দে দিন কাটছিলো তাদের। ওদের আনন্দহীন সময়টাকে আনন্দময় করে তুলতে "শিশু কাগজ" এলো তার পেন্সিল আর তুলির বাগান নিয়ে । যে বাগানে আমরা ফুল ফোটাই কখনো নানান রঙ্গের ছবি এঁকে, কখনো বৈচিত্র্যময় লেখালেখিতে। নিজেদের অসাধারণ সব প্রতিভা মেলে ধরছে শিশুরা একে অন্যের কাছে ।

২০২০ সালের অক্টোবরে অনলাইন শিশু পত্রিকা হিসেবে যাত্রা শুরু করে "শিশু কাগজ" । গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে আজ এক বছর পূর্ণ হয়েছে। বর্ষপূর্তির উৎসবের আমেজ আজ 'শিকা'র (শিশু কাগজ) পাতা জুড়ে। সেই আনন্দে ভাসছি আমিও, তাইতো বারবার মনে হচ্ছে শিশু পরিবারের সবাই যদি আজ করোনাহীন পরিবেশে এক হতে পারতাম।

তো অনলাইনে হয়ে যাক আমাদের বর্ষপূর্তি উৎসব। জয় হোক শিশু কাগজের। যুগে যুগে ফিরে ফিরে আসুক বর্ষপূর্তি উৎসব।

'শিকা'র সাথে জড়িত যারা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন, ঝকঝকে, বর্নিল, চমৎকার, চাওয়ার চেয়ে পাওয়া অধিক, মনের মতো এই কাগজটি যারা সব ঝক্কি-ঝামেলা সামলে প্রকাশ করে চলেছেন তাদের জন্য অফুরন্ত শুভকামনা। তোমাদের সবার জন্য ভালোবাসা ।
 
 
 



 

Comments

  1. চমৎকার লেখা। খালামণির কলামটি আমি নিয়মিত পড়ি। খুব ভাল লাগে। খালামণিকে ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  2. অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রাণিত হলাম। শিশু কাগজ কখন যে প্রচন্ড শক্তিতে আমার ভেতর সেধিয়ে গেছে টের পাইনি, টের পাই শুধু তার প্রতি ভালোলাগাটুকুকে, ভালোবাসাকে।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা