অমিত হাসানের গল্প
ফুটপাতের লোকটা
দুপুরের পর থেকে লোকটাকে ফুটপাতে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। দৃশ্যটা বারান্দা থেকে দেখার পর থেকে ছটফট করছে মিহির। বাবাকে কয়েকবার বলেছে। বাবা দেখো একটা লোক ফুটপাতে শুয়ে আছে। এরকম কেউ শুয়ে থাকে? নিশ্চয়ই লোকটার কোনো সমস্যা হয়েছে।
বাবা একবার শুনলো কি শুনলো না আবার কাজে ডুবে গেল।
মিহির খুব বিরক্ত এটা নিয়ে। সে বারান্দা থেকে তাকিয়ে দেখছে লোকটা নড়াচড়া করছে কিনা। লোকটা কী মরে গেল নাকি? ভয়ে আঁতকে উঠলো মিহির।
আবার বাবাকে এসে বললো, বাবা লোকটা মনে হয় মরে গেছে। বাবার টনক নড়লো এবার। তাড়াতাড়ি বারান্দায় এসে নীচের দিকে তাকালো।
ঠিক তখনই লোকটা একটা পা নাড়িয়ে পাশ ফিরলো। মনে হচ্ছে ফুটপাত একটা বিছানা, সে বালিশে মাথা রেখে এপাশওপাশ করছে।
বাবা বললো -লোকটার মনে হয় খিদে পেয়েছে। ক্ষুধায় কাতর হয়ে ঘুমাচ্ছে।
মিহির বললো -লোকটার ঘরবাড়ি নেই। এখানে ঘুমাচ্ছে কেন?
বাবা বললো-ঘরবাড়ি সবার থাকে না। তাই কেউ কেউ রাস্তা ঘুমায়।
মিহির বললো-লোকটার কেউ নেই? তাকে কেউ খাবার দিচ্ছে না কেন?
বাবা বললো-অচেনা লোককে কেউ খাবার দেয় না।
মিহির বললো-লোকটা কী মানুষ না? মানুষ মানুষকে খাবার দেবে না কেন?
বাবা বললো-লোকটা সর্বহারা মানুষ। সর্বহারাদের কেউ দেখে না।
মিহির বললো-লোকটার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি লোকটাকে খাবার দেবো।
বাবা বললো-তুমি একবেলা খাবার দিয়ে কী করবে, পরের বেলা কে খাওয়াবে তাকে?
মিহির বললো-আমি একবেলাই খাওয়াবো। আমার খাবার থেকে ওকে একবেলা দেবো।
বাবা বললো-বেশ। তোমার ইচ্ছেই পূরণ হোক। লোকটাকে খাবার দিয়ে এসো।
মিহির একটা টিফিনবক্সে করে কিছু ভাত মাছ আর একটা পানির বোতল নিয়ে নীচে নেমে গেল। শুয়ে থাকা লোকটার পাশে বাটিটা আর বোতলটা রাখলো। লোকটা তখনো ঘুমোচ্ছে। নাক ডাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিহির তাকে ডাকার সাহস পেলো না। চুপচাপ খাবারগুলো রেখে বাসায় চলে এলো।
বাসায় এসে আবারো বারান্দায় বসে লোকটাকে দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর লোকটা জেগে উঠলো। পাশে খাবার দেখে অবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকালো। তারপর বাটি খুলে গপাগপ ভাত খেতে লাগলো। দেখতে দেখতে মিহিরের মনটা ভরে উঠল। বাবাকে এই দৃশ্যটা দেখানোর জন্য ডাক দিলো। বাবা কাজ ফেলে উঠে এসে দেখলো লোকটা হাত চেটে ভাত খাচ্ছে। মিহিরকে বললো, লোকটা যদি রাতেও এখানে থাকে, আমরা আবারো খাবার পাঠাবো। মিহিরের মুখে হাসি। মা ভাত খেতে ডাকছে। সে ছুটে গেল খাবার টেবিলে। খাবারে তার অরুচি বলে প্রতিদিন মা তাকে খাইয়ে দেয়। আজকে সে মায়ের হাত থেকে ভাতের থালাটা নিয়ে গপাগপ খেতে লাগলো। তার চোখে ওই লোকটার খাবারের দৃশ্যটা ভেসে আছে। এখন থেকে সে নিজ হাতে খেতে পারবে।
Comments
Post a Comment