দেবদ্যুতি রায়ের গল্প
এক ছোট্ট শহরের ছোট্ট পাড়ায় থাকে পূর্ণা নামের আট বছরের এক ভীষণ মিষ্টি মেয়ে। সে রোদ আর বৃষ্টি ভালোবাসে, সবুজ গাছপালা দেখতে ভালোবাসে আর ভালোবাসে সারাদিন প্রজাপতির মতো ছোটাছুটি করে বেড়াতে।
পূর্ণা এখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মিতুল, পপি, রানা আর জুয়েল ওর খুব ভালো বন্ধু। আগে ওরা পাশাপাশি বসে ক্লাস করে আর ক্লাসের ফাঁকে অনেক গল্প করত। টিফিনের সময় ওরা একজন আরেকজনের সঙ্গে নিজেদের টিফিন ভাগাভাগি করে খেত। স্কুলের সবুজ মাঠে ওরা অন্যদের সঙ্গে বিভিন্ন খেলাধুলা করত। এখন কেন তারা এগুলো করতে পারে না সে কথা জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে প্রায় এক বছর আগের সময়ে।
পূর্ণা এখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মিতুল, পপি, রানা আর জুয়েল ওর খুব ভালো বন্ধু। আগে ওরা পাশাপাশি বসে ক্লাস করে আর ক্লাসের ফাঁকে অনেক গল্প করত। টিফিনের সময় ওরা একজন আরেকজনের সঙ্গে নিজেদের টিফিন ভাগাভাগি করে খেত। স্কুলের সবুজ মাঠে ওরা অন্যদের সঙ্গে বিভিন্ন খেলাধুলা করত। এখন কেন তারা এগুলো করতে পারে না সে কথা জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে প্রায় এক বছর আগের সময়ে।
গত বছর, ও যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত তখন এক ছুটির দিনে পূর্ণা মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছিল। এমন সময় ওর দাদু সেখানে এসেছিলেন। পূর্ণার মনে হয়েছিল দাদুর খুব মন খারাপ। সে দাদুকে জিজ্ঞেস করেছিল- দাদু, তোমার কী হয়েছে? তোমার মন খারাপ কেন?
দাদু তখন ওকে বলেছিলেন- পূর্ণা সোনামণি, তুমি কি জানো এক ভয়ঙ্কর অসুখ শুরু হয়েছে চীনে?
পূর্ণা সে সময় জানত চীন একটা দেশের নাম কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর অসুখটা সম্পর্কে ও তখনও কিছুই জানত না। দাদুর কাছে তাই সে তখন সেই অসুখ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল।
দাদু বলেছিলেন- চীন দেশের একটা জায়গার নাম উহান। সেখানে এক নতুন ভাইরাস পাওয়া গেছে। এই ভাইরাসের নাম করোনা ভাইরাস। ২০১৯ সালে এই ভাইরাসের জন্ম বলে এর আরেক নাম কোভিড-১৯।
পূর্ণা ভাইরাস শব্দের অর্থ জানত না। তবু সে দাদুর কাছে জানতে চেয়েছিল যে করোনা ভাইরাস এত ভয়ঙ্কর কেন। তখন দাদু ওকে বলেছিলেন, এই ভাইরাসে শরীরে ঢুকলে মানুষ খুব দ্র্রুত জ্বর আর সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হয়। সাধারণ জ্বর, সর্দি কাশির চাইতে মানুষ অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে আর কেউ কেউ এই অসুখে মারাও যায়।
দাদুর কথা পূর্ণা তখন তেমন বুঝতে পারেনি না। ওর মা একজন নার্স। সেবার ওর মা ছুটিতে বাড়ি এলে ও মায়ের কাছে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। ওর মা ওকে জানিয়েছিল যে এই ভাইরাসটি তখনো নতুন আর খুব দ্রুত সে নিজেকে বদলে ফেলতে পারে। সে কারণে ভাইরাসটি সম্পর্কে তখন পর্যন্ত তেমন ভালো জানা যায়নি। তবে এটি খুব ছোঁয়াচে আর এতে আক্রান্ত হলে মানুষ খুব অসুস্থ হয়ে যায়, মারাও যেতে পারে।
এর কয়েকদিন পর দাদু বাইরে থেকে এসে জানালেন করোনা ভাইরাসটি চীন থেকে আরো অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষেরা যখন অন্য কোনো দেশে গেছে তখন সে দেশে তাদের থেকে আরো অনেক মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবেই করোনা ভাইরাসটি তাদের দেশেও ঢুকে পড়েছে। এ কথা শুনে দিদার সাথে সাথে পূর্ণারও খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল।
এরও বেশ কিছুদিন পরে পূর্ণার মা বাড়ির সবাইকে ডেকে একদিন জানালো যে গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি করোনা রোগীর হাঁচি আর কাশি থেকে ছড়ায়। আর তা যদি কারো চোখ, নাক বা মুখে ঢুকে যায়, তাহলে সেও আক্রান্ত হয়ে যায়। সে কারণে মা সবাইকে তখন বললো বাইরে যাবার সময় অবশ্যই মাস্ক পরে যেতে হবে যেন কারো হাঁচি কাশি তাদের আক্রান্ত করতে না পারে আর বাইরে থেকে ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে যাতে কোনোভাবেই হাত থেকে নাক, মুখ আর চোখে জীবাণু ঢুকে যেতে না পারে।
ওর মা আরো জানিয়েছিল যে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই ‘সামাজিক দূরত্ব’ মেনে চলতে হবে। পূর্ণা জানতে চাইলো ‘সামাজিক দূরত্ব’ কী। মা ওকে বুঝিয়ে বললো ‘সামাজিক দূরত্ব’ হচ্ছে একজনের থেকে অন্যজন কমপক্ষে তিন ফুট দূরে থাকা।
কয়েক দিন পরে করোনার জন্য পূর্ণাদের স্কুল ছুটি হয়ে গেল। কারণ তত দিনে করোনা ভাইরাস দেশে বেশ ছড়িয়ে পড়েছে আর সে কারণে সরকার ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে। পূর্ণা মায়ের কাছ থেকে জেনেছে লকডাউন মানে হলো একেবারেই জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়া। সেবার কিন্তু ছুটি পেয়ে পূর্ণার খুব আনন্দ হয়েছিল। ওর মনে হয়েছিল এবার বেশ কিছুদিন স্কুলের পড়া আর পড়তে হবে না, কী মজা! সেবার লকডাউনের সময় দাদু, দিদাও বাড়ি থেকে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিল। শুধু মায়ের হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ হলো না কারণ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয়। মায়ের জন্য মন খারাপ হলেও পূর্ণার ঘরে বসে বসে কার্টুন দেখতে বেশ ভালোই লাগত।
পূর্ণা ভেবেছিল করোনা ভাইরাস কিছুদিনের মধ্যেই চলে যাবে আর ওদের স্কুলও খুলে যাবে। কিন্তু সেসবের কিছুই হলো না। এক বছরের বেশি সময় কেটে গেছে। ওদের দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে তুলে দেয়া হয়েছে পরীক্ষা ছাড়াই। তবু এখনো ওদের প্রতিটি দিন প্রায় একই রকম করে কাটে। মাঝেমাঝে লকডাউন অবশ্য থাকে না কিন্তু ওদের স্কুল আর খোলেনি। দাদু দিদারা বাড়ির বাইরে যায় না, ওরও কারো সাথে খেলতে যাওয়া হয় না, স্কুলে যাওয়া হয় না- সব মিলিয়ে ওর খুবই মন খারাপ করতে লাগল। মা যখন ছুটিতে এক সপ্তাহের জন্য বাড়ি আসে, শুধু সে সময় ওর খুব ভালো লাগে। মায়ের কাছে শুয়ে ও অনেক গল্প শোনে।
তারপর একদিন মায়ের কাছেই পূর্ণা জানতে পারল অনেক দেশে করোনার জন্য টিকা আবিষ্কার হয়েছে। আরো অনেক দেশে নতুন টিকার জন্য গবেষণা চলছে। পূর্ণার খুব ভালো লেগেছিল সে কথা জেনে। মা ওকে জানিয়েছিল যে সবাইকে টিকা দেয়া গেলে করোনা নামের অসুখটি হয়তো চলে যাবে। তখন ও আবার স্কুলে যেতে পারবে। তখন সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
একদিন পূর্ণার দাদু, দিদা আর মা করোনার টিকা নিলো। সেদিন ওর খুব আনন্দ হয়েছিল। যদিও মা ওকে বলেছে যে এখনো পৃথিবীর সব মানুষকে টিকা দিতে অনেক দেরি। আর প্রায় সবাইকে টিকা দিতে না পারলে এই অসুখটি যাবে না। সে কথা শুনে পূর্ণার আবার মন খারাপ হয়েছিল। সারাদিন ঘরের ভেতর থাকতে ওর ভালো লাগে না বলে মা সেবার ওকে ছবি আঁকার অনেক কাগজ আর রং কিনে দিয়েছিল। পূর্ণা সেই কাগজ আর রং দিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকতে শুরু করেছে। খুব সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকে ঘরের দেয়াল ভরিয়ে ফেলেছে সে।
এই তো কিছুদিন আগে পূর্ণাদের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। দাদুর মোবাইল থেকে সে ক্লাস করা শুরু করেছে। অনেকদিন পর মিতুল, পপি, জুয়েল, রানা, নদী, পার্থদের দেখে ওর খুব আনন্দ হয় এখন। শিক্ষকরা ক্লাসের পড়া শেষে ওদের কিছু বাড়ির কাজ করতে দেন। পূর্ণা খুশি মনে বাড়ির কাজ করে। অনেকদিন পর স্কুলের পড়া পড়তে পেরে ওর খুব ভালো লাগছে।
ওকে কেউ কিছু না বললেও পূর্ণা কিন্তু একটা ব্যাপার খেয়াল করেছে। ওদের বাড়িতে রান্না করতে আসত যে মীনা দিদি, সে এখন আর আসে না। কিন্তু দিদা তার জন্য চাল, ডাল আর খাবার পাঠিয়ে দেয়্। আরো অনেককে দাদু, দিদা, মা সবাই টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করে। পূর্ণার এই ব্যাপারটি খুব ভালো লাগে।
পূর্ণাকে মা বলেছে, করোনা ভাইরাস কবে পৃথিবী থেকে চলে যাবে তা কেউ জানে না। হয়তো এই ভাইরাসটি এক সময় এই রকম মহামারী আকারে থাকবে না। তত দিন পর্যন্ত এই সামাজিক দূরত্ব আর ছোটখাট নিয়মগুলো ঠিকঠাক মেনে চলতে হবে। আর এই সময়ে মন ভালো রাখার জন্য নিজের প্রিয় কাজগুলো করতে হবে। যতটা পারা যায় মানুষ আর পশুপাখির উপকার করতে হবে।
তারপর একদিন মায়ের কাছেই পূর্ণা জানতে পারল অনেক দেশে করোনার জন্য টিকা আবিষ্কার হয়েছে। আরো অনেক দেশে নতুন টিকার জন্য গবেষণা চলছে। পূর্ণার খুব ভালো লেগেছিল সে কথা জেনে। মা ওকে জানিয়েছিল যে সবাইকে টিকা দেয়া গেলে করোনা নামের অসুখটি হয়তো চলে যাবে। তখন ও আবার স্কুলে যেতে পারবে। তখন সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
একদিন পূর্ণার দাদু, দিদা আর মা করোনার টিকা নিলো। সেদিন ওর খুব আনন্দ হয়েছিল। যদিও মা ওকে বলেছে যে এখনো পৃথিবীর সব মানুষকে টিকা দিতে অনেক দেরি। আর প্রায় সবাইকে টিকা দিতে না পারলে এই অসুখটি যাবে না। সে কথা শুনে পূর্ণার আবার মন খারাপ হয়েছিল। সারাদিন ঘরের ভেতর থাকতে ওর ভালো লাগে না বলে মা সেবার ওকে ছবি আঁকার অনেক কাগজ আর রং কিনে দিয়েছিল। পূর্ণা সেই কাগজ আর রং দিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকতে শুরু করেছে। খুব সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকে ঘরের দেয়াল ভরিয়ে ফেলেছে সে।
এই তো কিছুদিন আগে পূর্ণাদের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। দাদুর মোবাইল থেকে সে ক্লাস করা শুরু করেছে। অনেকদিন পর মিতুল, পপি, জুয়েল, রানা, নদী, পার্থদের দেখে ওর খুব আনন্দ হয় এখন। শিক্ষকরা ক্লাসের পড়া শেষে ওদের কিছু বাড়ির কাজ করতে দেন। পূর্ণা খুশি মনে বাড়ির কাজ করে। অনেকদিন পর স্কুলের পড়া পড়তে পেরে ওর খুব ভালো লাগছে।
ওকে কেউ কিছু না বললেও পূর্ণা কিন্তু একটা ব্যাপার খেয়াল করেছে। ওদের বাড়িতে রান্না করতে আসত যে মীনা দিদি, সে এখন আর আসে না। কিন্তু দিদা তার জন্য চাল, ডাল আর খাবার পাঠিয়ে দেয়্। আরো অনেককে দাদু, দিদা, মা সবাই টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করে। পূর্ণার এই ব্যাপারটি খুব ভালো লাগে।
পূর্ণাকে মা বলেছে, করোনা ভাইরাস কবে পৃথিবী থেকে চলে যাবে তা কেউ জানে না। হয়তো এই ভাইরাসটি এক সময় এই রকম মহামারী আকারে থাকবে না। তত দিন পর্যন্ত এই সামাজিক দূরত্ব আর ছোটখাট নিয়মগুলো ঠিকঠাক মেনে চলতে হবে। আর এই সময়ে মন ভালো রাখার জন্য নিজের প্রিয় কাজগুলো করতে হবে। যতটা পারা যায় মানুষ আর পশুপাখির উপকার করতে হবে।
পূর্ণা তাই ছবি আঁকে, গল্পের বই পড়ে, দাদু-দিদা আর মায়ের সঙ্গে গল্প করে, টিভিতে কার্টুন দেখে, ওদের ছাদের গাছগুলোয় জল দেয় আর ওদের পোষা বেড়াল টুকির সঙ্গে খেলে। ও মনে মনে খুব করে চায় করোনা ভাইরাস যেন খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় আর ওদের হাসিখুশি দিনগুলো আবার ফিরে আসে। মা ওকে বলেছে যে করোনা মহামারী কমে গেলে ওরা পাহাড় দেখতে যাবে। পূর্ণা ঠিক করেছে ও এবার একটা খুব সুন্দর পাহাড়ের ছবি আঁকবে।
Comments
Post a Comment