ফাহ্রিয়াল রহমানের গল্প
গলি'র সিন্ডারেলা
লুদমিলার কয়েকজন বন্ধু এবং কাছের কিছু আত্মীয় স্বজনকে বলা হয়েছে , তারা সবাই চলে এসেছে মোটামুটি। হৈ হুল্লোড় আর লুকোচুরি খেলায় মেতে আছে ছোটরা, বড়রা আড্ডায়। বড়দের আড্ডার মাঝে সবচেয়ে বিপদে আছেন লুদমিলার বড় ফুপি। ইয়া মোটাসোটা বিপুলাকার মানুষ হওয়ায় বাচ্চারা তাদের লুকানোর নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে তাকে। তার পেছনে এসে লুকাতে বেশ মজা পাচ্ছে। একসাথে দুই তিন জনে এসে তার ফাঁকে ফোকরে লুকানোর চেষ্টা করছে, শাড়ির আঁচলে একজন তো তার পেছনে দুজন। আড্ডারত অনেকেই বেশ মজা পাচ্ছে, মুখ টিপে হাসছেন তারা।
অন্যদিকে ফুপি একটু বিব্রত বোধ করছেন আবার একই সাথে বাচ্চাদের দুষ্টুমি উপভোগ করছেন। এরমাঝেই লুদমিলার আম্মু সবাইকে ডাক দিলেন --- বাচ্চারা সবাই টেবিলে চলে এসো কেক কাটার সময় হয়ে গেছে। কেক কাটার পর তোমরা পাবে গুডি ব্যাগ । মুহূর্তেই ম্যাজিক, বাচ্চারা যে যেখানে লুকিয়েছিল সবাই দৌড়ে চলে এলো টেবিলের কাছে যার জন্মদিন সে ছাড়া ।
সবাই তো অবাক "কি ব্যাপার লুদমিলা কোথায়! উফফ ও সব সময় টাফ জায়গায় লুকায় ,ওর নতুন ড্রেস নষ্ট হয়ে যাবে বলে হয়ত বার হচ্ছে না।" লুদমিলার বেস্ট ফ্রেন্ড রুমাইসা ক্ষোভ ঝরা কন্ঠে বলে ওঠে। রুমাইসা সহ আরো কয়েকজন মিলে লুদমিলাকে খুঁজতে চলে গেল। এদিকে আসলেই লুদমিলা খুবই জটিল একটা জায়গায় লুকিয়ে আছে , ওদের বড়সর বাড়িটায় লুকানোর প্রচুর জায়গা আছে। সহজে কেউ ওকে খুঁজে বের করতে পারবেনা। সেটা ও এই মুহূর্তে চাচ্ছেও না।
আধা ঘন্টা আগে রেবা খালা ওদের বাসা থেকে নিজের বাসায় গেছে জয়িতাকে ঠিকঠাক করে নিয়ে আসার জন্য।
দশ পনেরো মিনিটের মধ্যে নিশ্চয়ই ওরা চলে আসবে। পরশুদিন জয়িতা বারবার লুদমিলা কে অনুরোধ করে গেছে ওকে ছাড়া যেন কিছুতেই কেক কাটা না হয় , ওর খুব শখ আপুর কেক কাটা দেখবে। সেও কথা দিয়েছে ওকে। এরইমধ্যে লুদমিলার সমবয়সী জাইনা ওর মেজো ফুপির মেয়ে সবার আগে দেখে ফেলল ওকে। ---"এই যে এখানে কেবিনেট এর পিছনে আমি ধরে ফেলেছি।" হাত ধরে টানাটানি করতে করতে সবাইকে চিৎকার করে জানান দেয়। "আমাদের তো খেলা শেষ এখন কেক কাটার সময় আর তুমি লুকিয়ে আছো ? এসো তাড়াতাড়ি এসো।" রুমাইসা রাগ ঝাড়লো লুদমিলার ওপর। বাচ্চারা সব হই হই করে উঠলো, "এবার কেক কাটা হবে হুররে ।" সবার টানাটানিতে লুদমিলা কেক কাটার টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়। ছোটদের সবাইকে ঠিকমতো দাঁড় করিয়ে দিলেন খালা আর ছোট ফুপি। এর মধ্যে চলে এলো জয়িতা। লুদমিলার ইশারায় দৌড়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো ওদের সাথে। সবাইকে নিয়ে মহাসমারোহে কেক কাটা হলো, শুধু মেজ ফুপি ও চাচ্চু রইলেন দাদুর ঘরে। মেজ ফুপি না থাকায় মনে মনে খুশি হলো লুদমিলা। কেক কাটার পর ছোটরা গুডি ব্যাগ পেয়ে মহাখুশিতে ব্যাগের ভেতর কি কি খেলনা আছে কে কি পেয়েছে তাই মিলিয়ে নেয়। খাবার খাওয়ার আগে আরেক পর্ব খেলার জন্য সবাই গোল হয়ে হাত ধরে দাঁড়ায় ।
সবাই তো অবাক "কি ব্যাপার লুদমিলা কোথায়! উফফ ও সব সময় টাফ জায়গায় লুকায় ,ওর নতুন ড্রেস নষ্ট হয়ে যাবে বলে হয়ত বার হচ্ছে না।" লুদমিলার বেস্ট ফ্রেন্ড রুমাইসা ক্ষোভ ঝরা কন্ঠে বলে ওঠে। রুমাইসা সহ আরো কয়েকজন মিলে লুদমিলাকে খুঁজতে চলে গেল। এদিকে আসলেই লুদমিলা খুবই জটিল একটা জায়গায় লুকিয়ে আছে , ওদের বড়সর বাড়িটায় লুকানোর প্রচুর জায়গা আছে। সহজে কেউ ওকে খুঁজে বের করতে পারবেনা। সেটা ও এই মুহূর্তে চাচ্ছেও না।
আধা ঘন্টা আগে রেবা খালা ওদের বাসা থেকে নিজের বাসায় গেছে জয়িতাকে ঠিকঠাক করে নিয়ে আসার জন্য।
দশ পনেরো মিনিটের মধ্যে নিশ্চয়ই ওরা চলে আসবে। পরশুদিন জয়িতা বারবার লুদমিলা কে অনুরোধ করে গেছে ওকে ছাড়া যেন কিছুতেই কেক কাটা না হয় , ওর খুব শখ আপুর কেক কাটা দেখবে। সেও কথা দিয়েছে ওকে। এরইমধ্যে লুদমিলার সমবয়সী জাইনা ওর মেজো ফুপির মেয়ে সবার আগে দেখে ফেলল ওকে। ---"এই যে এখানে কেবিনেট এর পিছনে আমি ধরে ফেলেছি।" হাত ধরে টানাটানি করতে করতে সবাইকে চিৎকার করে জানান দেয়। "আমাদের তো খেলা শেষ এখন কেক কাটার সময় আর তুমি লুকিয়ে আছো ? এসো তাড়াতাড়ি এসো।" রুমাইসা রাগ ঝাড়লো লুদমিলার ওপর। বাচ্চারা সব হই হই করে উঠলো, "এবার কেক কাটা হবে হুররে ।" সবার টানাটানিতে লুদমিলা কেক কাটার টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়। ছোটদের সবাইকে ঠিকমতো দাঁড় করিয়ে দিলেন খালা আর ছোট ফুপি। এর মধ্যে চলে এলো জয়িতা। লুদমিলার ইশারায় দৌড়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো ওদের সাথে। সবাইকে নিয়ে মহাসমারোহে কেক কাটা হলো, শুধু মেজ ফুপি ও চাচ্চু রইলেন দাদুর ঘরে। মেজ ফুপি না থাকায় মনে মনে খুশি হলো লুদমিলা। কেক কাটার পর ছোটরা গুডি ব্যাগ পেয়ে মহাখুশিতে ব্যাগের ভেতর কি কি খেলনা আছে কে কি পেয়েছে তাই মিলিয়ে নেয়। খাবার খাওয়ার আগে আরেক পর্ব খেলার জন্য সবাই গোল হয়ে হাত ধরে দাঁড়ায় ।
ঠিক তখনই জাইনা মহা একটা আবিস্কার করে ফেলেছে এমন ভাবে চিৎকার করে, "আরে এটা তো লুদমিলার জুতা! আমার আর ওর একইরকম জুতা কিনেছিলাম থাইল্যান্ড থেকে। লুদমিলা এটা সেই জুতা না ?" লুদমিলা দ্রুত মাথা নেড়ে হ্যাঁ বাচক উত্তর দেয়। জুতা ছেড়ে এবার চোখ পরলো জয়িতার জামার উপর । "ওমা জুতার সাথে মিলিয়ে তোমার আম্মু আমাদের দুজনের জন্য যে জামা কিনেছিলেন এটা তো সেই জামা !" জয়িতার হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চারা তাড়াতাড়ি ওর হাত ছেড়ে একটু দুরত্বে দাঁড়ায়। কি বুঝলো ওরা কে জানে ! জয়িতা জাইনার কথার চেয়েও বেশি আঘাত পেল বাচ্চাদের কাণ্ড দেখে। প্রাণবন্ত হাসিখুশি ফুটফুটে বাচ্চাটা কেমন প্রাণহীন ফ্যাকাশে চোখে তাকায় লুদমিলার দিকে। এরইমধ্যে মেজো ফুপি হাজির। এসেই চোখ পড়ল জয়িতার উপর, ওকে উনি এই বাসায় দুএকবার দেখেছিলেন। "এই তুমি এখানে কি করছ? তোমার মায়ের কাছে যাও।" জয়িতা কাঁদতে কাঁদতে ছুটে চলে গেল মায়ের কাছে। "তুমি তো এবার নয় পেরিয়ে দশে পড়েছো কাদের সাথে মিশতে হয় কাদের সাথে মিশতে হয় না ভালো মতো বোঝানো হয়েছে নিশ্চয়ই, বুয়ার মেয়ের সাথে কেউ খেলে!" রাগত স্বরে লুদমিলার দিকে তাকিয়ে বললেন। অপমানে ক্ষোভে ছোট লুদমিলা কখনো যা করেনি আজ তাই করলো। ফুপির কথার উত্তর দিল " রেবা খালা কোন বুয়া না আম্মুর স্কুলের আয়া। আম্মুকে অনেক ভালবাসেন তাই মাঝে মাঝে বাসায় আসেন আম্মুকে সাহায্য করতে সেটাতো তুমি জানো।" "ওই হলো বুয়া আয়া সবই এক।" লুদমিলা আর কথা বাড়ায়না, সে ভালো মত জানে ওনাকে কেউ কখনো কিছু বোঝাতে পারে না। উনি যেটা বুঝবে সেটাই ঠিক।
আবারও সবাই গোল হয়ে হাত ধরে দাঁড়ায়, লুদমিলাও হাত ধরলো কিন্তু তার হাত দুটো ছিল প্রাণহীন ।
বাকিটা সময় জয়িতা কিচেনের বারান্দার এককোণে দাঁড়িয়ে ছিল। বারবার দুহাতে চোখ মুছেছে আর অন্ধকার আকাশের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থেকেছে। একবারের জন্যও আর উঁকি দেয়নি। পায়ের জুতা জোড়া খুলে রেখেছে এক পাশে। খালি পায়ে দাঁড়িয়ে ঠায় । আট বছর বয়সেই সমাজে শ্রেণী বৈষম্যের ব্যাপারটা যেন বেশ বোঝা হয়ে গেছে তার। শুধু সমাজের আর দশজনের সাথে মিলাতে পারে না লুদমিলাদের পরিবারটিকে। আন্টি, আঙ্কেল, লুদমিলা,দাদু সবাই কত আদর করে ওকে। ওর নামটাও রেখেছেন আন্টি। 'জয়িতা' অর্থ সংগ্রামী নারী -- বারবার বুঝিয়েছেন ওকে। পরশুদিন যখন লুদমিলা ওর জন্মদিনে পরার জন্য সুন্দর গোলাপি রঙের পার্টি ড্রেস দিলো তখন আন্টিই জুতা জোড়া দেয়ার কথা বলেছিলেন। লুদমিলার অনেক জামা জুতা পরেছে সে। কিন্তু জন্মদিন উপলক্ষে গোলাপি রঙের পার্টি শু আর পার্টি ড্রেস পেয়ে সে যারপরনাই খুশি হয়েছিলো। কিছুক্ষণ আগে মায়ের কেনা গোলাপি ক্লিপ দিয়ে সুন্দর করে চুল বেঁধে পার্টি ড্রেস আর সু পরে নিজেকে সবচেয়ে সুখী শিশু মনে হচ্ছিল তার। অথচ ঐ ঘটনার পর মুহূর্তে বিপরীত ভাবনায় নোনা পানি ঝরতে থাকে চোখ বেয়ে ।
আন্টি দুই একবার খোঁজ নিয়েছেন জয়িতার খাওয়া হয়েছে কিনা। মা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি জোর করে খাওয়াতে ও পারেনি তাকে। সবশেষে সবাই চলে গেলে জয়িতারা বিদায় নেয়। বিদায় নেবার সময় জয়িতা জুতাজোড়া রেখে লুদমিলাকে বলে যায় "আপু তোমার জুতা জোড়া রেখে গেলাম। আম্মুর হাতে পরে ড্রেসটাও পাঠিয়ে দিব। তুমি অন্য কাউকে দিয়ে দিও এগুলো আমি আর পরবোনা ।"
জয়িতাকে খালিপায়ে যেতে দিতে চাইছিল না লুদমিলারা কিন্তু নাছোড়বান্দা জয়িতা কিছুতেই আর লুদমিলার জুতা পরবে না। মায়ের হাত ধরে জয়িতা খালি পায় হেঁটে যায়। লুদমিলা কান্নাভেজা চোখে তাকিয়ে থাকে একজন ছোট্ট 'জয়িতা'র পথের দিকে।
Heart touching story , Indeed.
ReplyDeleteHeart touching story , Indeed.
ReplyDelete