হৃষিতা সেনগুপ্তার গল্প

 নিনির ঈদ


নিনির বয়স পাঁচ বছর। এ বছর সে কেজিতে উঠেছে। কেজিতে উঠলে কি হবে স্কুলে যেতে পারে নি এখনো পর্যন্ত মহামারি করোনার কারণে। এই রোগটিকে সে একদমই পছন্দ করে না। প্রথম প্রথম স্কুলে যেতে হতো না বলে খুব খুশি ছিল সে। টিভি দেখত, মোবাইলে গেমস খেলতো।


কিন্তু এখন আর এসব কিছুই ওর ভালো লাগে না। সবসময় মন খারাপ করে বসে থাকে। বাবা-মা কতকিছুই না করে তার জন্যে। কিন্তু কিছুতেই ওর মন ভরে না। ওর মন ভালো করার একটা উপায় ছিলো, না উপায় বলব না মন ভালো করে দেওয়ার একজন মানুষ ছিল। সে ছিল তার কাছের বন্ধু লিলি। কিন্তু সে আর এখানে থাকে না। তার বাবার চাকরি চলে যাওয়ায় তারা তাদের গ্রামের বাড়িতে থাকে। সেখানে তার বাবা একটা ছোটখাটো ব্যবসা করে। নিনিকে আনন্দে রাখার আরেকটি উপায় আছে সেটি হলো সে উৎসব অনুষ্ঠান বেশি পছন্দ করে। সব অনুষ্ঠানই ওর ভালো লাগে। ও ভাবছে এবার ঈদে ও অনেক আনন্দ করবে। প্রত্যেক বছর লিলির সাথে সে এই দিনটিতে অনেক মজা করে। দুই পরিবার মিলে অনেক জায়গায় ঘুরতে যায়। কিন্তু এ বছর লিলি নেই। কার সাথে ও মজা করবে।

বাবা নিনিকে বলে এবার ঈদে তোকে চারটা জামা কিনে দেব। মুখে একটু হাসি ফুটলে ও কতক্ষণ পর সেই হাসি বিষাদে পরিণত হয়। বাবা আর মা ভাবতে থাকে কী করে নিনির মুখে হাসি ফুটবে। বাবা মার্কেট থেকে আবার কয়েকটি নতুন জামা কাপড় কিনে নিয়ে আসে।ঈদের দুই দিন আগে বাবা-মা ব্যাগ গোছালে নিনি বলে তোমরা কোথায় যাচ্ছ? উত্তরে মা বলেন আমরা একটা বিশেষ জায়গায় যাচ্ছি আর তুমিও আমাদের সাথে যাবে।

নিনি ও তার ব্যাগ গোছাতে লাগল। তারা সকাল ১০ টায় তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্য রওনা হলো কিন্তু নিনি তখন ও জানে না সে কোথায় যাচ্ছে। তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেলে নিনি গাড়ি থেকে নেমে দেখে সামনে তার সেই বন্ধু লিলি দাঁড়িয়ে আছে। সে দৌড়ে গিয়ে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে।

নিনিকে দেখে লিলিও খুশি হয়ে যায়। তারা দুই বন্ধু মিলে গল্প করতে করতে বাড়িতে যায়। সন্ধ্যার আকাশে খোলা মাঠে উজ্জ্বল চাঁদ দেখে ও বলে কালকে তো ঈদ,আমরা মজা করব, অনেক খেলব, মজার মজার খাবার খাব। নিনি বলে ঈদি আমি বেশি পাব, লিলি বলে- না, আমি বেশি পাব এরকম বলতে বলতে তারা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে ও কালকের জন্য অপেক্ষা করে।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা