বৈশালীর বই কথা

আমার বইয়ের গল্প
পৃথিকা ইসলাম বৈশালী



বন্ধুরা জানো, এই মার্চ মাসে আমার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে! বইটির নাম “নি রি কু লা সের অভিযাত্রা”। এটা কিছুটা এ্যডভেঞ্চার কাহিনী, কিছুটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ধরনের। এখানে একটি মেয়ে নিজেই মহাকাশযান বানিয়ে ঘুরতে চলে যায়। মহাকাশে তার কিছু বন্ধু হয়, পৃথিবীতে ফিরে এসে সে, তার বোন আর বন্ধুরা মিলে একটা দুষ্ট লোককে শায়েস্তা করে। বইটা লেখার পেছনের কিছু গল্প আজ তোমাদের শোনাতে চাই।
আমি আরো ছোট থাকতে কাগজে বই লিখতাম । রঙিন কাগজ কেটে ভাঁজ করে মলাট বানাতাম, আর উপরে বইয়ের নাম লিখতাম, নিজের নাম লিখতাম। ভেতরে সাদা কাগজ ভাঁজ করে পৃষ্ঠা বানাতাম। সেখানে কিছু লিখতাম। সব একসাথে স্ট্যাপল করে নিতাম । বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকতাম, ভেতরে ছবি আঁকতাম। তখন সেটাই আমার বই হতো। তারপর আমার খুব ইচ্ছা হলো আমার একটা সত্যিকারের বই ছাপা হোক। এখন সত্যি প্রেস থেকে ছাপা চার রঙের একটা বইয়ের প্রচ্ছদে নিজের নাম দেখে আমি খুবই অবাক এবং…মানে আমার মুখে এগাল-ওগাল জোড়া হাসি যে দেখেছে সেই বুঝবে। আর কেমন মিল জানো এই বইটার প্রচ্ছদও আমার আঁকা, আর ভেতরের সব ছবিও আমিই এঁকেছি। গল্পের সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে ছবি আঁকা খুব মজার ব্যাপার।

বইটি আমি প্রথম ২০২০ সালের শুরুর দিকে লেখার কথা চিন্তা করেছিলাম। লিখতে শুরু করেছিলাম আরো কয়েকমাস পরে। বইটির চরিত্রগুলোর নাম অনেকবার বদল করেছি । প্রথমে নিশার নাম টুশি ছিল মনে হয়। তারপর আইরি। এমনকি নিশার বোনের নাম লাইরা, আমি একবার নিশার নাম লাইরা দিয়েছিলাম। যাইহোক, অবশেষে নিশা নামটাই ফাইনাল করলাম । নিশার যেই কুকুরটা আছে তার নাম আমি প্রথমে আমার কুকুর স্নো-এর নামে রেখেছিলাম । পরে অবশ্য কোকো রাখি। বইয়ের নাম তো আমি প্রথমে ঠিকই করিনি । একদম শেষে এসে প্রেসে দেওয়ার আগে ঠিক করেছি। বইটির নাম নি রি কু লা স এর অভিযাত্রা। যদি ভাল করে খেয়াল করা হয় তাহলে বোঝা যায়, নামটায় বইটির প্রায় সব চরিত্রের নামের প্রথমের শব্দটি আছে।

বইটির কাহিনী লিখতেও আমি খুব মজা পেয়েছি। আর শেষে যখন খারাপ মানুষটার শাস্তি হয় তখন সবচেয়ে ভাল লাগে। অন্য চরিত্রগুলোর নাম দিতেও মজা পেয়েছি। কুসুডিমের নাম সবচেয়ে মজার । তবে এই নামের পেছনে একটা ঘটনা আছে। একদিন সকালে আমি বারান্দায় বসে আছি। হঠাৎ একটা ফেরিওয়ালা আসলো, মাথার ঝুড়িতে কী আছে দেখা যাচ্ছিলনা। আমাদের বিল্ডিংটার সামনে গলি, সেই গলি দিয়ে ঢুকে কিছুদূর এলে আমাদের বিল্ডিং এর মেইনগেট । অন্যসব ফেরিওয়ালারা মেইনগেট পর্যন্ত আসে। এই ফেরিওয়ালাটা গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে দুইবার কুসুডিম কু..সু.. ডি…ম… বলে চলে গেল। আমি তো অবাক! কুসুডিম কী জিনিস? আমি তখন খালি চিন্তা করি, কুসুডিম বলে তো কোনো শব্দ নেই । এই লোকটা নিশ্চয় অন্যকিছু বলেছে। বেশ কয়েকদিন পর আমার মনে হলো, লোকটা আসলে কুসুডিম না, দেশি ডিম বলেছে নিশ্চয়। মানে দেশি মুরগির ডিম। কিন্তু আমার মাথায় কুসুডিম শব্দটা আটকে থেকে গিয়েছিলো। এইজন্যেই বইতে এলিয়েনের নাম কুসুডিম দিয়েছি । আমার মা আমাকে যখনই এলিয়েনের গল্প বলে, সব এলিয়েনই হয় খুব ভাল, মানুষের বন্ধু হয় তারা। এইজন্য আমার গল্পের এলিয়েনটাও খুব ভাল।

জীবনের প্রথম নিজের লেখা বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে কত ভালো লাগে সেটা বলে বোঝাতে পারবোনা!  তোমরাও চেষ্টা করতে পারো বই লিখে ফেলার।

 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা