আহমেদ খান হীরকের গল্প

 কেশবতীর বিবাহ



এক যে ছিল রাজা। রাজার ছিল সুন্দরী এক কন্যা! কন্যার নাম কেশবতী। কেশবতী কন্যার হলো বিয়ের বয়স। রাজা ডাকল রাজঘটককে। ঘটকমশাই ও ঘটকমশাই! কন্যার যে বিয়ে দিতে হয়!
ঘটক বলল, চিন্তা কী!

এই না বলেই রাজঘটক তার ইয়াব্বড় ল্যাপটপটা খুলে ফেলল। ভেতর কত্ত পাত্রের ছবি!
ক্ষিররাজ্যের ক্ষির রাজপুত্র তো মিষ্টিপুরের চমচম রাজপুত্তুর!
ফজলি শহরের আমজাদা তো রুইনগরীর একেবারে চ্যাংড়া ট্যাংড়াকুমার!
 
শত শত রাজপুত্তুর... কিন্তু কেশবতীর মুখে রা নেই। একটু হাসিও নেই। নাহ, কাউকেই তো পছন্দ হলো না!
রাজঘটক বলল, সর্বনাশ!
রাজা বলল, সর্বনাশ!
পুরো রাজ্য বলল, সর্বনাশ!
তাহলে কি কেশবতীর বিবাহ হবে না!
 
তখনই শোনা গেল চিঁহিঁহিঁ আওয়াজ। সবাই অবাক হয়ে দেখল কেশবতী তার টগবগে ঘোড়ায়। ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে সে। রাজা বলল, কোথায় চললে মা?
 
কেশবতী বলল, পাত্র খুঁজতে বাবা। না পেলে আর ফিরবোই না!
 
কত যে মাঠ পেরোল ঘাট পেরোল কেশবতী... নদী পেরোল, পেরিয়ে এল জঙ্গল আর বন! বনের ভেতর কত্ত পশু পাখি... সবাই কেশবতীকে জায়গা করে দিলো। বন পেরোতেই কেশবতী দেখল এক কাঠবেড়ালিকে। ওকে দেখেই কাঠবেড়ালিটা বলে উঠল, হেই! শুনছ! তুমি তো দেখি বেজায় সুন্দরী! তোমার সঙ্গে ফুলকুমারকে যা মানাবে না!
ফুলকুমার কে?
এই দেখ, চেনো না? এখান থেকে তের নদী পেরোলে যে তেপান্তর, ওইখানেই পাবে তাকে! ফুলের ভেতর ফুলকুমার! ওখানে গিয়ে ওকে যদি ছুঁতে পারো তুমি তাহলে সে তোমার হবে!
ঘোড়া ছোটাল কেশবতী... টগবগ টগবগ...
 
এক নদী দুই নদী করে একে একে শেষ হলো তেরটা নদী। আর তের নদীর পরেই বাগান... লাল নীল হলুদ কমলা ফুলের বাগান... এত এত ফুল! কেশবতীর চোখ জুড়িয়ে গেল। মন হারিয়ে গেল। আর তখনই দেখল হাজার হাজার ফুলের ভেতর সবচেয়ে বড় একটা সূর্যমুখীর ভেতর বসে আছে ফুলকুমার!
 
বাহ! ফুলের মতোই তার শোভা! কী সুন্দর হাসি... সবার চাইতে সুন্দর! কাঠবেড়ালির কথা মতো কেশবতী গেল ফুলকুমারকে ছুঁতে! কিন্তু অমনি ফুলকুমার উঠে গেল মগডালে!
কী হলো এটা? কেশবতী গেল রেগে। ছুঁতে গেল আবার! কিন্তু এবার আরো উঁচুতে উঠে গেল ফুলকুমার। ভীষণ রেগে গেল কেশবতী!
 
আমি তোমাকে ছুঁতে পারব না?
 
ওপর থেকে ফুলকুমার বলল, খুব পারবে! কিন্তু তার আগে তো হাত পরিস্কার করতে হবে!
আমার হাত তো পরিস্কারই, দেখ, কেমন ঝকঝকে তকতকে!
পরিস্কার দেখালেও পরিস্কার থাকে না হাত। চোখে দেখা যায় না এমন জীবানু থাকে। সেই জীবানু থেকে ভয়ানক সব অসুখ!
তাই নাকি?
হুম। আগে হাত ধোও। সাবানপানি দিয়ে কচলে কচলে... আঙুল নখ সব আলাদা করে... পুরো বিশ সেকেন্ড... কত সেকেন্ড?
বিশ সেকেন্ড।
হুম। ভালো করে সাবানপানি দিয়ে হাত ধুয়ে হাতটা শুকনো কাপড় দিয়ে মুছলেই তুমি আমাকে ছুঁতে পারবে কেশবতী কন্যা!
 
ফুলকুমার যা বলল কেশবতী ঠিক তাই তাই করল। সাবানপানি দিয়ে হাত পরিস্কার করে শুকনো কাপড় দিয়ে হাতটা মুছে নিলো। আর তখনই কেশবতীর কেশে একটা ফুল পড়ল টুপ করে। কেশবতী হেসে উঠল। সেই হাসি ছড়িয়ে পড়ল সারা রাজ্যে! সাথে সাথেই বিবাহের সানাই বেজে উঠল।





Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা