বোকা শৈশব - ৪
অন্য স্কুলে ক্লাস করা
হারুন রশীদ
শৈশবের তৃতীয় বোকামি। ক্লাস থ্রিতে ওঠার পর আমি একা একা স্কুলে যেতে শুরু করি। নিজের ক্লাসে বসে ক্লাস করার চেষ্টা করি।
সেই সময় আমার সাথে বন্ধুত্ব হলো আমাদের এক প্রতিবেশী ছেলের সাথে। মাহফুজ নাম তার। ওর বাবা আমার বাবার বন্ধু ছিলেন। মাহফুজ পড়তো ক্লাস ফোরে। তবে অন্য একটা স্কুলে। আমি আগ্রাবাদ কলোনী স্কুলে, সে পড়তো পাশের টিএণ্ডটি কলোনী স্কুলে। সে বলতো তাদের স্কুলে নাকি অনেক মজা। ইচ্ছে মতো ক্লাসে আসা যাওয়া করা যায়। কেউ বারণ করে না। টিচারেরা বকা দেয় না। ওদের স্কুলে ক্লাস নেন আপা। আপা খুব ভালো। কখনো বেত মারেন না। তখনো আমি জানতাম না স্কুলের মহিলা শিক্ষকদের আপা বলে ডাকে। আমি বোকার মতো বিশ্বাস করলাম যে আপা হলেন মাহফুজের বড় বোন, তিনি ওই স্কুলের শিক্ষক। তাই এত স্বাধীনতা। আমার স্কুল আতংকের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল বেত হাতে মাস্টার। আমাদের স্কুলের সব শিক্ষক ক্লাসে আসতেন চিকন একটা বেত হাতে নিয়ে। সেই বেতের ব্যবহারও হতো সময় সময়। আমি নিজে কখনো বেত্রাঘাতের শিকার না হলেও আতঙ্কটা ছিল পুরোদমে।
মাহফুজ একদিন আমাকে প্রস্তাব দিলো তাদের স্কুলে ক্লাস করার জন্য। নতুন একটা অভিজ্ঞতা দেয়ার জন্য লোভ দেখালো। একদিন সকালে আমি সত্যি সত্যি নিজের স্কুলে যাবার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলাম মাহফুজের সাথে ওদের স্কুলে। দুই স্কুল পাশাপাশি। মাঝখানে একশো ফুটের একটা রাস্তা। ওদের স্কুলে গিয়ে খুব চমৎকৃত হলাম। দেখলাম খুব স্বাধীন একটা স্কুল। ক্লাসের সামনে পেছনে দুটো দরজা। ছেলে মেয়েরা যখন খুশি ক্লাসে ঢুকছে। যখন খুশি বেরুচ্ছে। সামনের দরজা দিয়ে ঢুকছে কেউ পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়েও যাচ্ছে। কেউ কাউকে কিছু বলছে না। এত স্বাধীন একটা জায়গায় এসে আমি প্রায় দিশেহারা।
মাহফুজ আমাকে নিয়ে পেছন দিকের একটা বেঞ্চিতে বসলো। ঘন্টা পড়তেই ক্লাস শুরু। আপা এসে রোলকল করতে শুরু করলেন। আমি যে বহিরাগত একজন আছি, সেটা আপার চোখেই পড়লো না। ছেলেমেয়ে গিজগিজ করে বসেছে, কে কার দিকে খেয়াল করে। আপা পড়াচ্ছেন আপার মতন, আর ছাত্রছাত্রীরা কেউ খেলছে, কেউ শুনছে, কেউ গপ্প করছে। আমি একটু ভয়ে আছি। যদি ধরা পড়ি কী হবে। মাহফুজ অভয় দিলো ভয়ের কিছু নেই। আপা খুব ভালো। আমি তখনো বিশ্বাস করে আছি ওটা মাহফুজের বড় বোন জাতীয় কেউ হবেন, তাই ভয়ের কিছু নেই।
মাহফুজ একদিন আমাকে প্রস্তাব দিলো তাদের স্কুলে ক্লাস করার জন্য। নতুন একটা অভিজ্ঞতা দেয়ার জন্য লোভ দেখালো। একদিন সকালে আমি সত্যি সত্যি নিজের স্কুলে যাবার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলাম মাহফুজের সাথে ওদের স্কুলে। দুই স্কুল পাশাপাশি। মাঝখানে একশো ফুটের একটা রাস্তা। ওদের স্কুলে গিয়ে খুব চমৎকৃত হলাম। দেখলাম খুব স্বাধীন একটা স্কুল। ক্লাসের সামনে পেছনে দুটো দরজা। ছেলে মেয়েরা যখন খুশি ক্লাসে ঢুকছে। যখন খুশি বেরুচ্ছে। সামনের দরজা দিয়ে ঢুকছে কেউ পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়েও যাচ্ছে। কেউ কাউকে কিছু বলছে না। এত স্বাধীন একটা জায়গায় এসে আমি প্রায় দিশেহারা।
মাহফুজ আমাকে নিয়ে পেছন দিকের একটা বেঞ্চিতে বসলো। ঘন্টা পড়তেই ক্লাস শুরু। আপা এসে রোলকল করতে শুরু করলেন। আমি যে বহিরাগত একজন আছি, সেটা আপার চোখেই পড়লো না। ছেলেমেয়ে গিজগিজ করে বসেছে, কে কার দিকে খেয়াল করে। আপা পড়াচ্ছেন আপার মতন, আর ছাত্রছাত্রীরা কেউ খেলছে, কেউ শুনছে, কেউ গপ্প করছে। আমি একটু ভয়ে আছি। যদি ধরা পড়ি কী হবে। মাহফুজ অভয় দিলো ভয়ের কিছু নেই। আপা খুব ভালো। আমি তখনো বিশ্বাস করে আছি ওটা মাহফুজের বড় বোন জাতীয় কেউ হবেন, তাই ভয়ের কিছু নেই।
দুপুরে স্কুল ছুটি হলো। বাড়ি ফেরার পথে মনে পড়লো আমার খাতা তো খালি। বাসায় গিয়ে যদি মা খাতা চেক করে তাহলে ধরা পড়ে যাবো। খাতায় কিছু একটা লিখে নিয়ে যেতে হবে। মাহফুজও সেই পথ বাতলে দিল। সে তাদের বাসায় নিয়ে গেল। ওখানে বসে আমার খাতায় কয়েকটা অংক করতে দিল। আমি বানোয়াট অংকগুলো খাতায় তুলে ভালোমানুষের মতো বাসার দিকে রওনা হলাম।
বাসায় পৌঁছে মায়ের জেরার মুখে পড়লাম। এতক্ষণ লাগলো কেন আজকে। থতমত খাওয়া চেহারা নিয়ে বললাম একটু দেরী হয়ে গেছে। মাহফুজ ওদের বাসায় নিয়ে গেছিল। মা আমার চেহারা দেখে কিছু একটা আঁচ করে নিল। তারপর আমার খাতা বই বের করে যখন দেখলো খাতায় এলোমেলো কিছু অংক করা আছে, তখনই বুঝে নিল কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। তারপর বেদম জেরার মুখে ধরা পড়ে গেলাম। আজ স্কুল ফাঁকি দিয়েছি। তারপর পিঠের উপর দিয়ে যা গেল তা আর কহতব্য নয়। জীবনে আর কখনো স্কুল চুরি করবো না বলে প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম সেদিন।
Comments
Post a Comment