স্মৃতি ১৯৭১ - নার্গিস আফরোজ বানু
একাত্তরের স্মৃতি
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জীবনের এমন এক
অধ্যায়, যার কথা একটি দিনের জন্যেও ভোলা যায়না। তোমরা জানো নিশ্চয়ই, আমাদের বাংলাদেশ সবসময়
এই নামে পরিচিত ছিলনা। ভারতবর্ষে অত্যাচারী ইংরেজদের
শাসনের অবসানে পাকিস্তান নামে যে দেশটি সৃষ্টি হয়, তাতে ছিল পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তান নামে দুটি অংশ। আমরা ছিলাম এই পূর্ব পাকিস্তানের বা পূর্ব বাংলার মানুষ।
কিন্তু স্বাধীন দেশের অংশ হলে কী হবে, পূর্ব পাকিস্তানের
মানুষের ভাগ্য ছিল খুবই খারাপ। তারা নতুন করে নির্যাতনের শিকার হলো পশ্চিম পাকিস্তানী
শাসকদের হাতে, যারা ছিল মূলত অবাঙ্গালী। বাঙ্গালীদের এরা খুব হীন চোখে দেখতো। সেই পশ্চিম পাকিস্তানীদের
হাত থেকে রেহাই পেতে বাঙ্গালীকে আবার হাতে তুলে নিতে হলো অস্ত্র।
সে অস্ত্র হাতে তুললো এদেশের সৈন্য, পুলিশ, কৃষক, শ্রমিক সব শ্রেণীর মানুষ। পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশে পরিণত করার যে যুদ্ধ সেই যুদ্ধকেই বলে মুক্তিযুদ্ধ। সব যুদ্ধই কষ্টের, ক্ষতির, মানবতা ধ্বংসকারী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধও ছিল খুব ভয়াবহ। পাকিস্তানীরা এমন বর্বর অত্যাচার করেছিল বাঙ্গালীদের উপরে যে সারা বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল- চারিদিকে উঠেছিল প্রতিবাদের ঝড়- গায়ক, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিকরা এই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। সেই মুক্তিযুদ্ধের নিজের কিছু স্মৃতি তুলে ধরছি। পরে লিখবো আমার দেখা সেই সব শিশুদের কথা যারা যুদ্ধে বাবা-মা আত্মীয় স্বজন সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল।
আমার
আব্বা ছিলেন সরকারী চাকুরীজীবী। যুদ্ধের নয় মাস তিনি চাকুরীতে যোগ দেননি। অর্থাৎ
মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিলেন। এখানে আর একটি কথা মুক্তিযুদ্ধকে প্রায় সব
বাঙ্গালী সমর্থন করলেও কিছু কিছু লোক পাকিস্তানের পাঠানো সেনাবাহিনী, যারা বাঙ্গালী জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ব্রত নিয়ে এসেছিলো
তাদের সমর্থনে কাজ করেছিলো, ইতিহাসে তারা আল-বদর, আল-শামস, শান্তি কমিটি, রাজাকার
এসব নামে পরিচিত।
আমরা
আব্বার কর্মস্থল ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলাম দাদার বাড়ি, আমাদের গ্রামের বাড়ি।
গিয়েছিলাম একেবারে নিঃস্ব হয়ে। আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো, সব কিছু লুটপাট
করা হয়েছিলো। নিজেদের ভাড়াবাসা ছেড়ে পালিয়ে দূরের একটা গ্রামে কয়েকদিন কাটিয়ে বহুকষ্টে
গরুর গাড়িতে করে আমরা পৌঁছেছিলাম দাদারবাড়ি।
যুদ্ধের
নয়টা মাস আমাদের কাটাতে হয়েছে খুব কষ্টের জীবন। খাবারের অভাব, কাপড়ের অভাব ছিল
নিত্য সাথী। ক্ষুধা কী জিনিস বুঝেছিলাম সেই সময়ে। আব্বারা দুইভাইই
তখন দাদার আশ্রয়ে। জমিজমার ফসল যা ছিল অল্প সময়ে শেষ হয়ে গেলো। সাথে কাপড়-চোপড় যে টুকু এনেছিলাম অল্প সময়ে
ছিঁড়তে শুরু করলো। ঘরে খাবার নাই, পরনে কাপড় নাই অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিলো।
আমরা যে গ্রামে
ছিলাম তার কাছাকাছিই ছিলো পাকিস্তানী মিলিটারি ক্যাম্প। গ্রামের লোকজন ফসল
ফলাতে ভয় পেতো, হাটে বাজারে যেতে ভয় পেতো
, অবস্থা এতটাই করুণ। তবে সেই সময় এই দেশের মানুষেরা
হয়ে উঠেছিলো অসম্ভব কোমল হৃদয়। চেনা অচেনা সবার প্রতিই তারা
বাড়িয়ে দিয়েছিলো সাহায্যের হাত। আমরাও এরকম সাহায্য পেয়েছিলাম
দাদাবাড়ি আসার পথে। সকালে সামান্য কিছু খেয়ে গাড়িতে উঠেছিলাম। আমার ভাইবোনেরা তখন ছোট। তারা একসময় ক্ষুধায় কান্না জুড়ে
দিলো। ঐ সময় একটি পরিবার আমাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে অত্যন্ত আদর করে
দুপুরের ভাত খাইয়ে দিয়েছিলো। মনে হয়েছিলো আমরা প্রাণ ফিরে
পেয়েছিলাম। ঐ পরিবারের কর্তা জানালেন তিনি রাস্তায় লোক রেখে
দিয়েছেন তারা আমাদের মত অসহায়দের তাঁর বাড়িতে নিয়ে এসে অন্তত একবেলা যেন খাইয়ে দেয়। আমরা যখন যাই তখনও ঐ বাড়িতে বহু লোক খাচ্ছিলো। এভাবে কতজনকে কতভাবে
সাহায্য করেছিলো সোনার বাংলার মানুষেরা। গ্রামের অনেকেই আমাদেরকে শীতের
সময় লেপ-কাঁথা দিয়ে সাহায্য করেছিলো।
আমাদের তবু
মাথার উপরে ছাদ ছিলো, রাতে ঘুমানোর মত জায়গা
ছিলো (অনেকের তাও ছিলোনা), যদিও গাদাগাদি
ঠাসাঠাসি- নিজেদের বাড়ির লোকই- সব মিলিয়ে
প্রায় পঁচিশ জনের মত। তার উপরে হঠাৎ আসা আশ্রয় প্রার্থী
বা আত্মীয় স্বজন।
ছোটদের ক্ষুধার
কান্না বড়দের অসহায়ত্ব সব মিলিয়ে এক নারকীয় অবস্থা। শুধু এইটুকুই না। মাঝেমাঝেই পাড়ার ছেলেরা খবর আনে আজ রাতে মিলিটারি আক্রমণ হতে পারে। এইসব খবর শুনে কত রাতে বাড়ি থেকে পালিয়েছি- গ্রামের পাশে আখক্ষেতে ধানক্ষেতে কখনোবা খোলা মাঠে ভয়ে ত্রাসে সারা রাত কাটিয়েছি।
আমার ফুফুর
বাড়ি ছিলো দাদার বাড়ির কাছেই। মাঝখানে এক শাখা নদী। কতরাত এই নদী পায়ে হেঁটে (পানি অল্প ছিলো, বড়জোর গলা পানি) পার হয়েছি। শীতের রাতে ঠাণ্ডায় বরফ হয়ে ফুফুর বাড়ি পৌঁছেছি মিলিটারির ভয়ে।
দাদার বাড়ি
থেকে কয়েক মাইল দূরে ছিলো হিন্দুপাড়া। মাঝে মাঝে দেখতাম ঐ পাড়ার লোকজন
দলবেঁধে এসে দাদার বড় বাঁশ বাগানে আশ্রয় নিয়েছে।
এত কষ্টের
মধ্যেও কিছু কিছু ভাল লাগাও ছিলো। মাঝে মাঝেই শুনতাম মুক্তিযোদ্ধারা
অমুক ব্রিজ উড়িয়ে দিয়েছে, অমুক জায়গা দখল করেছে। মাঝে মাঝে শুনতাম কান ফাটানো শব্দ, শুনতাম মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজ উড়ালো, মিলিটারি ক্যাম্প
আক্রমণ করেছে, ভাল লাগতো। মাঝে মাঝে খবর আসতো
মৃত্যুর –মনটা বিষাদিত হয়ে যেতো। রাজাকারেরা অনেক সময় মিলিটারিদের সংগী সাথি হয়ে গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দিত, দূরে থেকে তাকিয়ে দেখতাম এইসব নিষ্ঠুরতা- এই সব আগুন। যুদ্ধের সময় আমরা একটু নিরাপদে
ছিলাম একটা কারণে। আমার দাদার বাড়ির তিন পাশেই ছিলো নদী, মিলিটারিরা নদীকে ভয় পেত। হয়ত সেকারণেই যুদ্ধের
নয় মাসে আমাদের গ্রাম আক্রান্ত হয়নি।
দাদাবাড়ির
বৈঠকখানার সামনে ছিলো একটি বড় বাঁশের মাচা। বিকেল হতে না হতেই সেই মাচা ভরে
যেত গাঁয়ের লোকে। কেউবা হাতে করে নিয়ে আসতো মাদুর, পিঁড়ি-টুল। বাড়িতে ছিল দুটি
রেডিও। দাদা-চাচারা সেই রেডিও
ছেড়ে দিতেন। সবাই শুনতো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান, চরমপত্র, জল্লাদের দরবার। শুনতে শুনতে উজ্জীবিত হয়ে উঠতো সবাই।
গ্রামের অনেক
মহিলাও আসতেন। তারা বৈঠকখানার আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনতেন। তখন মনে কোন ভয় থাকতোনা। মনে হতো এই বুঝি স্বাধীনতার খবর
এসে গেলো। আমার দাদী ছিলেন এসব অনুষ্ঠানের নিয়মিত শ্রোতা। চরমপত্রের কথা শুনে মাঝে মাঝেই বলে উঠতেন,- “এই আস্যা গেল স্বাধীনতা। ভয় নাই আর।“ তাঁর খুশির সীমা থাকতোনা। অনেক সময় গ্রামের
লোকদের বলতেন দাঁড়া দাঁড়া স্বাধীনতা আসুক চার আনা সের চাউল খাবি। ঐ বৈঠক শেষ হতো রাত সাড়ে দশটায় দেবদুলাল বাবুর ‘সংবাদ পরিক্রমা’ শুনে। আজ ভাবি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র লোকে শুনতো ঘরের মধ্যে দরজা লাগিয়ে। আমার গ্রামের মানুষ সাহসী বটে। এই সময়টকু আমাদের কাছে মনোরম
হয়ে উঠতো।
যাক মুক্তিযুদ্ধের
কথা লিখতে গেলে তো হয়ে যাবে ইতিহাস। এবারে বলি যুদ্ধের শিকার কয়েকটি
শিশুর কথা। যাদের কথা ভুলবোনা এ জীবনে।
নাম না জানা দুটি শিশুঃ যুদ্ধের পর একদিন আমার এক বান্ধবী বাসায় বেড়াতে এলো। মনটা খুব খারাপ। বললো কলেজে মন খারাপের একটা কারণ ঘটেছে। এক শিক্ষিকা দুটি ছোট বাচ্চা নিয়ে এসেছেন। এদের বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার, মা অধ্যাপিকা। তারা মারা পড়েছেন সপরিবারে। ছেলে দুটো বেঁচে গেছে কোনরকমে। যুদ্ধকালীন সময়ে তারা সেই শিক্ষিকার কাছেই ছিলো। বহু চেষ্টা করেও তাদের পরিবারের কারো খোঁজ পাওয়া যায়নি। কোন আত্মীয়ও না, কেউ দত্তকও নিতে চায়নি। তাঁর নিজের অবস্থাও এখন খারাপ। তাই কলেজে এদের নিয়ে এসেছেন যদি কেউ এদেরকে কাজের ছেলে হিসাবে বাসায় রাখতে চায়। দুইভাই একজন আরেকজনকে ধরে কান্নাকাটি আরম্ভ করায় আমার বান্ধবী সেখান থেকে চলে এসেছে সেই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে।
নুরেশাঃ নুরেশার মা যুদ্ধের আগে আমাদের বাড়িতে কাজ করতো। নুরেশা মায়ের সাথেই আসতো। সুন্দর দেখতে। দুই তিন বছর বয়স। মজার মজার কথা বলতো। আমরা ভালোও বাসতাম বাচ্চাটাকে। যুদ্ধের পর তার মা-কে যখন জিজ্ঞেস করলাম, নুরেশা কোথায়? জবাবে নুরেশার মা হাহাকার করে কেঁদে উঠলো। নুরেশাকে পাকসেনারা তার মায়ের সামনেই গাছের সাথে আছড়ে আছড়ে মেরে ফেলেছে।
একটা কথা
বলতে ভুলে গিয়েছি বাংলাদেশের বিজয় পতাকা ওড়ার সাথে সাথে আমরা চলে এলাম আব্বার চাকুরীস্থলে। উঠলাম ফেলে যাওয়া সেই পুরাতন ভাড়া বাড়িতে। উঠেই আর এক বুক হাহাকার
আর কান্না। কিছু নেই। কয়েকটা পুড়ে যাওয়া
কাঠখণ্ড ছাড়া।
অচেনা এক মেয়েঃ দাদাবাড়ি থাকাকালীন সময়ে একদিন বাজার ফেরত কিছু লোক বললো- তারা একটি মিলিটারি ভ্যান দেখেছে রাস্তায়। যে ভ্যানে একটা ১৫/১৬ বছরের মেয়ে চেয়ারে বসা। মুখে কাপড় বাঁধা, হাত পিছনে বাঁধা, আর কয়েকজন মিলিটারি অদম্য উল্লাসে হৈ চৈ করছে। শুনে মেয়েটির জন্য খুব কষ্ট হয়েছিলো।
শফিঃ একদিন
আব্বা বাজার করে ফিরেছেন। হঠাৎ আমার ছোটভাই কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ঢুকলো। কি হয়েছে কিছুই বলেনা শুধু কাঁদে। পরে জানা গেল আব্বার বাজার বয়ে
এনেছে যে মিনতী- যুদ্ধ শুরুর আগে সে ছিলো তার বন্ধু
এবং ক্লাশমেট। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে সে এখন মিনতীগিরি করে, কুলির কাজও করে, স্টেশনেই থাকে। মা বললেন, “ওকে খেয়ে যেতে বলো”। শুনেই সে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড় । বড় ঘরের ছেলে সে। মানুষের দয়া নিতে অভ্যস্থ নয়। আব্বা মন খারাপ করে বললেন, পয়সাটাও নিলোনা।
নিলুঃ একদিন
সন্ধ্যেবেলায় আমাদের বাড়ি এলো সুন্দর ফুটফুটে একটি মেয়ে। আমার ছোটবোন লাফিয়ে
উঠলো ওকে দেখে। ওর পুরাতন খেলার সাথী। কিন্তু মেয়েটির মন
খারাপ। সে এদেশ থেকে চলে যাচ্ছে, ওর বাবা-মাকে মিলিটারিরা মেরে ফেলেছে। কেউ নাই। এক ভদ্রলোক ওকে কুড়িয়ে পেয়ে আশ্রয় দিয়েছেন। যুদ্ধের সময়টা ঐ ভদ্রলোকের কাছেই ছিল। আজ তিনি পাকিস্তান চলে যাচ্ছেন। সাথে করে ওকেও নিয়ে যাচ্ছেন। কেন পাকিস্তানে যাচ্ছেন তা আমার
জানা হয়নি, কারণ তিনি দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাচ্চাটি মা-কে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ
কাঁদলো। মেয়েটা ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে আবদার করেছিল
যে এই বাড়িতে একটু যাবো- আমার বন্ধু আছে। তাই উনি নিলুকে নিয়ে এসেছেন ।
এমন ঘটনা
বহু বহু শিশুর ক্ষেত্রে ঘটেছে। যুদ্ধে যে শুধু বড়রাই বা
মহিলারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা নয়, এমন অসংখ্য শিশু পরিবার-পরিজন হারা হয়েছে। বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে বা তাদের
বাধ্য করা হয়েছে দুর্বিষহ জীবন যাপনের। এদের কথা জীবনে ভুলবোনা। ভুলতে পারিনা। কী হয়েছে ওদের, ঐ দুইভাই, ঐ মেয়েটি যাকে মিলিটারিরা নিয়ে
গেলো, আর একজনকে পাকিস্তানে নিয়ে গেলো। কোথায় তারা, কী হয়েছে তাদের ভাগ্যে। কষ্ট হয়। বড় কষ্ট হয়। যুদ্ধটাই তো কষ্টের। তারপরেও সান্ত্বনা, শান্তি, ভাললাগাও আছে। দেশতো স্বাধীন হয়েছে, পেয়েছি পতাকা, পেয়েছি নিজের ভাষা। কৃতজ্ঞতা আল্লাহর কাছে।
(এই
লেখাটিতে ইচ্ছা করেই আব্বার কর্মস্থল বা দাদার গ্রামের নাম উল্লেখ করলাম না। কারণ এরকম ঘটনা গোটা বাংলাদেশের, বলতে গেলে বাংলার প্রতিটা জায়গার।)
Comments
Post a Comment