গল্প - তাবাসসুম নাজ
কংকা ও বুবুন
--- বাবা।
--- হু।
--- বাবা!
--- বল, মা। শুনছি। ভাত খেতে খেতে বাবা বলল।
--- মেলা দেখতে যাব, বাবা।
বাসার আশেপাশে কোথায় যেন মেলা বসেছে। গতরাত থেকে গান আর হৈচৈ এর শব্দ ভেসে আসছে।
--- মেলা? তুমি মেলায় যেতে চাও? আগে তো কখনো চাও নি। হাসতে হাসতে বাবা বলল।
--- এখন চাই, বাবা। আমাদের ক্লাসের মৌলী মেলায় গেল, কত মজা করল, কত কী খেল, কত কী কিনল। আমিও মেলায় যাব, বাবা।
--- বেশ তো যাওয়া যাবে। কাল ছুটির দিন। কাল যাব। তোমার মাকে বল যেন দিনটা ফ্রি রাখে।
বাবা হাসতে হাসতে মা’কে ঠাট্টা করে বলল।
--- কংকা, মুখে খাবার নিয়ে কথা বলতে হয় না। কতবার তোমাকে বলতে হবে, বল তো? মা কংকা’কে মৃদু বকা দিল।
কংকা কোঁত করে খাবার গিলে ফেলে বলল
--- মা, কাল কিন্তু আমরা মেলায় যাচ্ছি।
--- কংকা! এভাবে খাবার গিলে ফেলতে হয়? ঠিকমত চাবিয়ে খেতে হয়, বলেছি না?
বাবা তাড়াতাড়ি করে মধ্যস্ততা করে।
--- আচ্ছা, আর গিলে ফেলবে না কংকা। এখন থেকে ঠিকমত চাবিয়ে খাবে, ঠিক আছে? নাহলে খাবার হজম হতে অসুবিধা হয়। কিন্তু কাল মেলায় যাচ্ছি আমরা।
মা
হাসতে
হাসতে
বাবা’কে ঠাট্টা করল।
--- তা আর যাব না? মেয়ে বলল আর ওমনি বাবাও ছুটল।
সত্যি, কংকার বাবাটা এত ভালো। অফিস থেকে ফিরেই দরজায় হাঁক দিবে
--- কই আমার কংকামণি কোথায়?
তারপর একসাথে কার্টুন দেখবে। পড়াশুনাও একসাথে করবে। আর রাতে বাবার কাছে গল্প না শুনলে তো কংকার ঘুমই আসবে না।
মা
মাঝেমাঝে
বলে---
এত
প্রশ্রয়
দিও
না
তো। বাচ্চা বিগড়ে যায়।
কিন্তু বাবা বলে--- বাচ্চাদের অনেক আদর দিতে হয়। ওরা যেন বোঝে পৃথিবীর কোনো এক কোণে ওরা নিশ্চিন্ত আর নিরাপদে থাকবে।
--- আচ্ছা? তাহলে শাসন করা মানা?
--- শাসন অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু ভালোভাবে বুঝিয়ে বলে। মারধর বকাবকি করে না। বাবা শান্তভাবে বলেছে।
বাবা সত্যি সত্যি ওকে কখনো বকাবকি করেনা, মারধর তো দূরের কথা। কংকা কোনো ভুল করলে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলে। সেজন্য কংকাও এমনকিছু করে না যাতে বাবা মা মনে কষ্ট পেতে পারে। বিশেষ করে বাবা।
পরদিন সুন্দর জামা জুতা পরে মা বাবার হাত ধরে কংকা মেলা দেখতে গেল। ছোট মেলা। শহরতলীর মেলা বলে আধুনিক উপকরণ কম। কিন্তু তাতে কংকার মজা কিছুমাত্র কম হল না। বাবাও যেন আজ বেশিরকম উদার। কংকা যা চাইছে, সবকিছুতেই হ্যাঁ বলছে।
--- বাবা, নাগরদোলায় চড়ব।
কংকা আর বাবা নাগরদোলায় চড়ে বসল। দেখে মা বলল
--- বাহ! তোমরা চড়বে। আর আমি বুঝি বসে থাকব?
ওমনি সেও চড়ে বসল।
কংকা বলল--- বাবা, কটকট শব্দ করছে, এ খেলনাটা কী সুন্দর!
ওমনি বাবা ওকে সেটা কিনে দিল।
--- বাবা, এটা কী মিষ্টি?
--- এটাকে বলে গজা। আর এটা কদমা।
তো
সেগুলিও
খাওয়া
হল। তারপরে চটপটি তো ছিলই।
সবকিছু দেখে, খেয়ে, চড়ে কংকা যখন ফিরে আসছিল, তখন গেটের কাছে বেলুনআলাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল।
কী
সুন্দর
রঙ
বেরঙের
গ্যাস
বেলুন। আকাশে একঝাক ফুল ফুটে রয়েছে যেন।
--- বাবা, দেখেছ। বেলুন!
বাবা কংকাকে চারটা বেলুন কিনে দিল। গোলাপী, হাল্কা নীল, হাল্কা সবুজ, আর সাদা।
মা
একটু
আপত্তি
করেছিল।
--- এতগুলি?
--- আহা থাক না। মেয়েটা একদিন একটু শখ করেছে।
হাতে সুতায় বাঁধা বেলুন নিয়ে কংকা ফিরে এল। কী উত্তেজনা! কালই মৌলীকে সবকিছু তারিয়ে তারিয়ে বলতে হবে। ইশ। আজকের রাত কংকা কেমন করে পার করবে? সময়ই যে কাটছে না!
বিকেলে বাসায় এল তাদের কাজের সাহায্যকারী আসমা। সাথে কংকার বয়সী এক মেয়ে। আসমাকে মা আজ ছুটি দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আসমা এসেছে মেয়েকে দেখিয়ে নিয়ে যেতে। মেয়ে এতদিন গ্রামে নানীর কাছে থাকত। আজ এসেছে।
মা
ফ্রিজ
থেকে
কেক
বের
করে
মেয়েটাকে
খেতে
দিল।
কেক
খেয়ে
মেয়েটা
বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল, কংকা বারান্দায় যেতেই মুখামুখি পড়ে গেল। কংকা প্রশ্ন করল
--- তোমার নাম কী?
--- বুবুন। বুবুনের চোখ কংকার হাতে বাঁধা বেলুনের দিকে। চকচক করে উঠল ওর চোখ।
--- তুমি কোথায় থাকো?
--- গ্রামে থাকি। এখন মা’র কাছে আছি। বুবুনের চোখ তাও বেলুনের ওপর থেকে সরল না। বোঝা গেল ওর খুব পছন্দ হয়েছে।
বেলুন বাধা হাত ঝাঁকাল কংকা।
--- আমার বাবা মেলা থেকে কিনে দিয়েছে। তোমার বাবা’কে বোলো। তোমাকেও কিনে দিবে।
মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেল বুবুনের।
--- আমার বাবা নাই।
আশ্চর্য হয়ে গেল কংকা। বাবা নাই আবার কী? সবার একটা করে বাবা থাকে।
--- বাবা নাই কেন?
--- আমার বাবা কোথায় জানি চলে গেছে।
আসমা এসে বুবুনকে তাড়া লাগালো।
--- চল, চল। বাসায় ফিরে যাই। কংকা সোনা, কী সুন্দর লাগছে তোমাকে। আর কী সুন্দর বেলুন।
বুবুনকে সাথে নিয়ে আসমা চলে যেতে থাকে। হঠাত কংকা বলে ওঠে।
--- দাঁড়াও।
ওরা
দাঁড়িয়ে
পড়ল।
আসমার দিকে হাত এগিয়ে দিল কংকা।
--- আমার হাতের দুইটা বেলুন খুলে দাও তো, আসমা খালা।
আসমা খুলে দিয়ে কংকার দিকে বাড়িয়ে ধরল। কংকা বেলুন দুইটা বুবুনের দিকে এগিয়ে দিল।
--- তোমার জন্য।
উদ্ভাসিত মুখে বেলুন হাতে বুবুন ফিরে যেতে থাকে। কংকার ঠোঁটে ফুটে উঠল তৃপ্তির হাসি।
শুধু পেলে না, অন্যকে দেয়াতেও খুশি কম হয় না। বরং মনে হচ্ছে, খুশি একটু বেশি লাগছে।
Comments
Post a Comment