গল্প

 কেন হলো এমন !

ইলমা আইলিন মাতৃকা


জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরে দেখছে নিকিতা। আজকের আবহাওয়াটা খুব চমৎকার। এতদিন ধরে বিরক্তিকর, মন খারাপ করা বৃষ্টি পড়ছিলো। বৃষ্টির জন্য এতদিন বাইরে খেলতে যেতে পারেনি। আজ বৃষ্টি নেই, খেলতে যাওয়ার জন্য নিকিতার তর সইছে না। বন্ধুরা আসলেই সে তাদের সাথে বের হবে খেলতে। এসব ভাবতে ভাবতে নিকিতা দেখলো তার বন্ধুরা চলে এসেছে। সে দৌঁড়ে তাদের সঙ্গে খেলার জন্য বের হয়ে গেল। নিহা, বল্টু, রিমঝিম, শান্ত, রুমি সবাই এসেছে।

রুমি বললো, এসেছিস নিকিতা? চল আজ আমরা ঐ পার্কটাতে যাচ্ছি।

নিকিতা বললো,কেন, পার্কে কি আছে ? তারচেয়ে চল মাঠে খেলতে যাই।

রিমঝিম বললো, হ্যাঁ'

তখন শান্ত বললো, আমরা ঐ গাছ থেকে ফুল পাড়তে যাবো।

নিকিতা বললো, মাথা খারাপ ! মালি দেখলে তোদের ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবে।

রুমি বললো, তুই ভয় পেলে আসিস না, আমরা যাই। 

নিকিতা বললো, আচ্ছা ঠিক আছে, চল।

সিদ্ধান্ত মতো সকলে গেলো সেখানে। কিন্তু গিয়ে দেখলো কি, বৃষ্টিতে সব ফুল ঝরে পড়ে আছে, শুধু গাছের উপরের দিকের ডালে কিছু ফুল রয়েছে।

বল্টু বললো, ঔ বেল্লু মাথা কদমের জন্য আমি মোটেও গাছে উঠছি না।

নিহা বললো, ওমা, তোর না সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ছিল। 

রিমঝিম বললো, থাক, বল্টু যেতে চাইছে না, না যাক। বল্টু তুই বরং নিচে থাক, আর মালি আসছে কিনা সেদিকে চোখ রাখবি। আমরা গাছে উঠি।

বল্টু বাদে বাকিরা গাছে উঠতে শুরু করলো। নিকিতা খুব একটা গাছে চড়তে জানে না। বাকিরা ওকে টেনে গাছে উঠালো। নিকিতা উপর থেকে নিচে তাকিয়ে বললো, এখান থেকে পড়লে মালির এসে ঠ্যাং ভেঙ্গে দিতে হবে না আর।

শেষ পর্যন্ত ওরা কদম ফুলের ডালের কাছাকাছি আসলো। যেই না ওরা ফুল তুলতে যাবে, অমনি বল্টু চিৎকার করতে লাগলো, মালি আসছে... মালি আসছে...!'

সবাই হুড়মুড় করে গাছ থেকে নেমে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। ওরা খেয়ালই করেনি যে, নিকিতা গাছ থেকে নামতে পারেনি। নিকিতা একটুও নড়াচড়া করলো না। মালি কিছুক্ষণ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক দেখলো, একটু উপরের দিকে তাকালো বলে মনে হলো নিকিতার। নিকিতার গলা শুকিয়ে কাঠ।

কিন্তু কি আশ্চর্য ! মালি কিছুই বললো না ! ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে মালি চলে গেল। মালি চলে যাওয়ার পর নিকিতা আস্তে আস্তে গাছ থেকে নামার চেষ্টা করছে। কিন্তু হঠাৎ, ধপাশ ! ভেজা ডাল থেকে হাত ফসকে নিকিতা একেবারে নিচে। উহ্ !

একি, ব্যথা লাগেনি কেননিকিতা হঠাৎ লক্ষ্য করলো, সে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে ভেসে আছে। পরক্ষণেই সে মাটিতে দাঁড়িয়ে পড়লো। ওর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না, এটি কি আসলেই সম্ভব? ভয়ে-আতঙ্কে সে এক দৌঁড়ে বাসায় চলে এলো। নিকিতা তখনো বুঝতে পারছে না, ঠিক কি ঘটেছিল। আসলে কি সত্যি, নাকি কল্পনা, নাকি...!

হঠাৎ তার মনে হলো, আচ্ছা কেউ দেখেনিতো। ওরা যখন গাছে উঠেছিলো, তখন আশেপাশেতো কেউ ছিলো না। নিকিতা এতোটা অবাক হলো যে, সে আশেপাশে না থাকিয়ে চলে আসে। হয়তো কেউ দেখেনি। দেখলে নিশ্চয়ই তার দিকে ছুটে আসতো সবাই।

কিন্তু, নিকিতার ধারণা ভুল ছিল। তাকে এক লোক দেখে ফেলে। তার নাম ড. জোসেফ। তিনি একজন গবেষক। ড. জোসেফ নিকিতাদের শহরেই থাকে। তিনি নিকিতাকে সেই ঘটনার সময় দেখেছিলেন, কিন্তু কাছে গিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই নিকিতা চলে যায়।

সেদিন রাতে নিকিতা তার বাবা-মার সাথে খেতে বসেছে। নিকিতার বাবা জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার নিকিতা, তুমি এতো চুপ কেন ?'

নিকিতা বললো, 'না না..., কিছু না..., এমনি।’ নিকিতা আজকের ঘটনা তার বাবা-মাকে বলতে পারছে না এই ভেবে যে, তারা বোধ হয় বিশ্বাস করবে না। 

কয়েকদিন পর নিকিতা ওর মার সাথে ডাক্তারের কাছে গেছে। ড. জোসেফও সেদিন ওখানে গিয়েছিলেন। তিনি নিকিতাকে দেখার সাথে সাথে চিনে ফেললেন। নিকিতারা যেই ডাক্তারের কাছে গেছে, সেই ডাক্তার ড. জোসেফের বন্ধু। তিনি তাড়াতাড়ি ওনার বন্ধুকে গিয়ে সেই দিনের ঘটনা বললেন। আর বললেন, তিনি নিকিতার কিছু পরীক্ষা করাতে চান।

খানিক পর নিকিতা ও তার মা ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলে, ডাক্তার দুজনকেই পরীক্ষা করলেন এবং নিকিতা ও তার মা দুজনকেই কেছু টেস্ট করাতে বললেন। তারা দুজনইতো অবাক। ডাক্তার দেখাতে এসেছে নিকিতার মা, কিন্তু নিকিতারও টেস্ট করাতে হবে কেন ? তাদেরতো কোন সংক্রামক রোগ হয়নি। ডাক্তার বললেন, ভালো রেজাল্ট পেতে গেলে টেস্ট এখানে করালে ভালো হয়। এখানে উন্নতমানের মেশিন রয়েছে।

একথা শুনে নিকিতা ও মা আরো অবাক। তারা এখানে কখনোই টেস্ট করায়নি, ডাক্তারও তাদের টেস্ট করিয়েছিলেন অন্য জায়গায়। অগত্যা, এখানেই তারা টেস্ট করালো। নিকিতার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছিল। নিকিতাকে টেস্ট করার সময় ডাক্তার তাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে দিলেন। নিকিতা সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লো।

যখন ঘুম ভাঙলো নিকিতা বুঝতে পারছে না, সে কোথায়। ও তার বাসায়ও না, ডাক্তারের ওখানেও না। কোথায় সে ?

হঠাৎ সবকিছু মনে পড়লো নিকিতার। দৌড়ে ঐ ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়লো। বুঝতে তার এতটুকু বাকি রইলো না, সে এতক্ষণ ড. জোসেফের ঘরেই ছিলো। সে তাড়াতাড়ি তার বাসার দিকে ছোটা শুরু করলো। সন্ধ্যা হয়ে এসেছিলো। মা কোথায় আছে, বাবা কি অফিস থেকে ফিরেছে, এসব চিন্তা নিকিতার মাথায় ঘুরপাক খেতে খেতে সে বাসার কাছাকাছি চলে এলো।

বাসায় ঢুকেই ডাকা শুরু করলো, মা, বাবা... তোমরা কোথায় ?' 

হঠাৎ সে তার মায়ের কন্ঠস্বর শুনতে পেলো, এই যে নিকিতা, আমি এখানে।

নিকিতা বললো, কোথায়, আমি দেখতে পাচ্ছি নাতো।

নিকিতার মা হেসে বললো, চোখ খোল, তাহলেই তো দেখবি।

নিকিতা চোখ খোলার মানে বুঝতে পারছে না। ঠিক তখনি, তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

দেখলো তার মা বলছে, কত বেলা হয়েছে জানিস, ওঠ তাড়াতাড়ি।

এতক্ষণ ধরে তাহলে নিকিতা স্বপ্নই দেখছিলো? সে যখন বিছানা থেকে নামতে গেল, তখন তার মনে পড়লো, তাহলে গাছ থেকে পড়াটার কি হলো। ওটাতো সত্যিই ছিল !

...............................................

[ইলমা আইলিন মাতৃকা, ৭ম শ্রেণী, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়]


Comments

  1. আশ্চর্য একটা গল্প। কত রকমের রহস্য যে আছে পৃথিবীতে।

    ReplyDelete
  2. সুন্দর হইছে গল্পটা।

    ReplyDelete
  3. অনেক ভালো লিখেছে গল্পটা।

    ReplyDelete
  4. ছোট গল্প। শেষ হইয়াও হইল না শেষ। আরো বাকী আছে কী?

    ReplyDelete
  5. গল্পটা কী সুন্দর!

    ReplyDelete
  6. অসাধারণ হয়েছে!

    ReplyDelete
  7. আইলিনের জন্য শুভকামনা।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা