গল্প - মাইনুল এইচ সিরাজী

 অবাক জাদুকর



শ্যামল আর কমল দুই বন্ধু।

তারা একই ক্লাসে পড়ে।

নামের মিলের কারণে তাদের বন্ধুত্ব হয়েছে। আরও বন্ধুত্ব হয়েছে আরেকটা বৈশিষ্ট্যের কারণে। ক্লাসে তারা সবচেয়ে দুষ্টু। দুজনই সমান দুষ্টু। সুতরাং দুষ্টুতে দুষ্টুতে বন্ধুত্ব।

কিন্তু কিছু সমস্যা আছে তাদের। শুধু তাদের নয়, ক্লাসের সবার। আবার শুধু ক্লাসের নয়, গোটা স্কুলের সব ছাত্রছাত্রীর। কথা হচ্ছে, তারা দুষ্টু বলে সমস্যাগুলোর কথা তারা অন্যদের বলে ফেলে, সমস্যাগুলো নিয়ে তারা বেশি ভাবে। সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বেড়ায়। সমাধান না পেয়ে প্রায়ই স্কুল পালায়।

কী তাদের সমস্যা?

তাদের পড়ার চাপ বেশি। পড়ার চাপে পড়ে তারা খেলাধুলা করার সময় পায় না।


তাদের বইয়ের ভার বেশি। বইয়ের ভারে পড়ে তাদের ঘাড়-পিঠ ব্যথা হয়ে যায়।

এসব চাপ আর ভারের ফাঁকফোকরে কিংবা শুক্রবারে একটুখানি সময় যদিও-বা তারা পায় খেলাধুলার জন্য, কিন্তু খেলবে কোথায় গিয়ে? বাসা থেকে বের হলেই রাস্তা। কোনো মাঠ খুঁজে পায় না তারা। তাই বাসায় বসে বসে ডোরেমন আর টম অ্যান্ড জেরি দেখে, মোবাইলে গেম খেলে। পড়তে পড়তে আর কার্টুন দেখতে দেখতে আর গেম খেলতে খেলতে তাদের চোখ ব্যথা করে, মাথা ব্যথা করে। তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়।

তারা এসব থেকে মুক্তি চায়। মাকে বলে। বাবাকে বলে।

মাকে বলে, মা, বেড়াতে নিয়ে চলো।

বাবাকে বলে, বাবা, দাদুবাড়ি নিয়ে চলো। ওখানে অনেক মাঠ, অনেক গাছ। ওখানে দারুণ মজা।

কিন্তু  মা নেয় না। বাবাও নেয় না। তাদের সময় নেই।

আর তাই শ্যামল আর কমল নিজেরাই সমাধান বের করে। তারা স্কুল পালায়। স্কুল পালিয়ে তারা হাঁটতে বের হয়, খেলতে বের হয় ফুটপাতে আর পার্কে। নানান মানুষের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। ছোট, বড়। সবাইকে তাদের স্কুল পালানোর কারণ বলে, সমস্যার কথা বলে। চিনেবাদামওয়ালাকে বলে, হকারকে বলে, টোকাইকে বলে, হাঁটতে আসা দাদুদেরও বলে। সবাই শোনে মন দিয়ে। কিন্তু কেউ সমাধান দিতে পারে না।

কিন্তু এক দিন।

সেদিন স্কুল পালানোর পর তাদের দেখা হয়ে যায় এক জাদুকরের সঙ্গে। সব শুনে জাদুকর বলেন, তোমাদের এত চাপে, এত ভারে রাখা তো ভারি অন্যায়। জাদুকর শ্যামল-কমলের পিঠ থেকে স্কুল ব্যাগ খুলে নিয়ে বলেন, আমি তোমাদের এই ভার কমিয়ে দেবো।

শ্যামল-কমল হাততালি দিয়ে ওঠে।

জাদুকর বলেন, আমি তোমাদের খেলার জায়গা করে দেবো।

শ্যামল বলে, মজা হবে।

কমল বলে, মজা হবে।

তার আগে তোমরা আমার কাছে বুদ্ধির পরীক্ষা দাও। বলেন জাদুকর।

কী বুদ্ধি?

দুজন দুটো অবাক করা সত্যি কথা বলো।

শ্যামল ভাবে। কমলও ভাবে।

ভাবনা শেষে শ্যামল বলে, আজ সকালে আমি এক সাগর পানি খেয়েছি।

ভাবনা শেষে কমল বলে, আমার দাদু আকাশে বাস করে।

জাদুকর বলেন, ভারি অবাক ব্যাপার তো! বুঝিয়ে বলো।

শ্যামল বলে, আমি যে গ্লাসে পানি খাই, সেটার নাম রেখেছি সাগর।

কমল বলে, আমার দাদু যে ঘরটায় থাকে, তার নাম আকাশ।

জাদুকর মুগ্ধ হন শুনে। বলেন, তোমাদের অনেক বুদ্ধি। শুধু স্কুল পালানোর বুদ্ধিটা ঠিক নয়।

শ্যামল বলে, আর পালাব না।

কমল বলে, আর পালাব না।

জাদুকর বলেন, এখন বাড়ি ফিরে যাও। কাল থেকে নিয়মিত স্কুলে যাবে। আমি তোমাদের ভার কমিয়ে দেবো। চাপ কমিয়ে দেবো। তোমরা যাতে খেলতে পারো, বেড়াতে পারো সে ব্যবস্থাও করে দেবো।

শ্যামল-কমল বাড়ি ফিরে গেল।

জাদুকর সেদিনই অবাক জাদুর বলে সকল স্কুলে পড়ালেখার চাপ কমিয়ে দিলেন। সিটি করপোরেশন আর পৌরসভার মেয়রদের মনে ইচ্ছা তৈরি করে দিলেনবাচ্চাদের জন্য মাঠ আর পার্ক গড়ে তুলতে হবে। আর সকল মা-বাবার মাঝে বোধ জাগিয়ে দিলেনসময় পেলেই সন্তানদের যেন পার্কে নিয়ে যান। যেন নিয়ে যান দাদুবাড়ি, নানুবাড়ি।

তারপর।

শ্যামল-কমল আর তার বন্ধুরা, শুধু বন্ধুরা নয়, স্কুলের সব শিক্ষার্থী মজা করে স্কুলে যায়। খেলতে যায় মজা করে। মাঠে। বেড়াতে যায় মজা করে। পার্কে। আর যায় মজা করে দাদুবাড়ি কিংবা নানুবাড়ি।

 

 


Comments

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা