ফিচার

 আলবার্ট আইনস্টাইন

মাহফুজ টিটু



এ পৃথিবীর নানান প্রান্তে যুগে যুগে জন্ম নেয়া মহান কিছু ব্যাক্তির কারনেই যে আমরা আজ নতুন এক আধুনিক বিশ্ব দেখছি,তাতে নিশ্চয়ই তোমাদের কারো দ্বিমত থাকার কথা না।এসব সৃষ্টিশীল মানুষগুলোর সৃষ্টি,আবিষ্কার, থিওরী ইত্যাদির উপর ভর করে সভ্যতার বিকাশ ও আমাদের সামনের পথ চলা। লক্ষণীয় ব্যাপার এটাই যে, তাঁদের বেশীর ভাগেরই জন্ম, বেড়ে উঠা অতি সাধারণ পরিবারে।শিশু কাগজের পাঠকদের জন্য সেরকম একজন মহান মনিষীর কথা তুলে ধরছি যার জীবন কাহিনী সত্যিই অনেক মজার যা জেনে আশাকরি তোমাদের অনেক ভালো লাগবে।

আর তিনি হচ্ছেন মহান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন।

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন স্কুল জীবনে যিনি ছিলেন সবচেয়ে ব্যর্থ, অনেক ঘুরেও একটা চাকরি জোটাতে না পেরে ২ বছর বেকার থাকতে হয়েছে যাকে, সেই আইনস্টাইনকেই এখন সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী বলে মনে করা হয়।

১৯০৫ সালে বিখ্যাত আপেক্ষিকতা তত্ত্বটি দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। এই তত্ত্বটির কারণে গত শতাব্দী থেকে মানুষের চিন্তার জগতে ঘটে গেছে এক আমূল পরিবর্তন। আমাদের চারপাশের রহস্যময় প্রকৃতিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে আইনস্টাইনের এই তত্ত্বটি। এই একবিংশ শতাব্দীতেও তার প্রভাব যে কমেনি বরং বেড়েছে সেটাও বলাই বাহুল্য।

আপেক্ষিকতা তত্ত্বটির জনক আইনস্টাইন জার্মানির উলম শহরে জন্মেছিলেন ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ। আমাদের এবারের এই আয়োজন তাকে নিয়ে।

শুরুর কথাঃ

ইউরোপের একটা দেশের নাম জার্মানি। জার্মানির উপর দিয়ে বয়ে চলেছে দানিয়ুব নদী। নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে একটা ছিমছাম শহর। শহরটার নাম উলম। এই শহরেই একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা হেরম্যান আইনস্টাইন। সেখানে তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে ভালোভাবেই জীবন কাটাচ্ছিলেন।


১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ তাদের ঘর উজ্জল করে এক ফুটফুটে শিশু জন্মলো। দুজনে শখ করে ছেলের নাম রাখলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। তোমার কি বুঝতে পারছেন এই নবজাতক কে? হ্যাঁ, ইনিই আইনস্টাইন। পরে যিনি আবিস্কার করেছিলেন বিখ্যাত আপেক্ষিকতার সূত্র।

ছেলেবেলার ম্যাগনেটিক কম্পাসঃ

জন্ম গ্রহণের মাত্র ছয় সপ্তাহ পরেই আইনস্টাইনের বাবা মা তাকে নিয়ে মিউনিখে রওনা হন। মিউনিখ জার্মানির আরেক শহর। সেখানে হেরম্যান একটা তড়িৎ যন্ত্র নির্মাণ কারখানা তৈরি করেন। বেশ চলতে লাগল তার ব্যবসা। তিনি সারাদিন তার দোকানে কাজ করেন আর বাড়ির সব সামাল দেন মিসেস পলিন। দেখতে দেখতে আইনস্টাইন বড় হতে থাকেন। যখন তার বয়স তিন কি চার সে সময় তিনি হাতে পান এক আশ্চর্য জিনিস। জিনিসটা ছিল একটা ‘ম্যাগনেটিক কম্পাস’। তিনি এটা যতই দেখেন ততই অবাক হন। অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে কিভাবে এর কাঁটা পরিবর্তন হচ্ছে তা দেখে তার বিস্ময় কাটে না। তিনি বিশ্বাস করতেন, নিশ্চয়ই তাতে রহস্যময় কিছু একটা রয়েছে। সেই থেকেই তার সবসময় অদৃশ্য শক্তির প্রতি আকর্ষণ।

ছয় বছর বয়সে আলবার্ট বেহালা বাজাতে শেখেন। তবে বাজাতে খুব একটা ভালো লাগতো না তার। ছোট বেলায় আরেকটা জিনিস তাকে মুগ্ধ করেছিল সেটা হল ইউক্লিড এর ‘এলিমেন্ট’ নামের জ্যামিতির বই। এই বইটা তার এত প্রিয় ছিল যে সে এটাকে ‘পবিত্র ছোট জ্যামিতির বই’ নাম দিয়েছিলেন। আসলে এই বইটিই আইনস্টাইনকে প্রভাবিত করেছিল সবচেয়ে বেশি।

কিন্তু এতকিছুর পরেও আইনস্টাইনকে নিয়ে তার বাবা মার চিন্তার অন্ত ছিল না। কারণ তার বয়সের অন্য সব ছেলেমেয়েরা যখন কথা বলতে শিখে যায় তখনও ক্ষুদে আইনস্টাইন ঠিকমত কথাই বলতে শেখেনি। এ সময় তার বয়স ছিল নয়। এদিকে ১৮৮১ সালে আইনস্টাইনদের ঘরে জন্ম নেয় তার বোন মারিয়া মাজা। বোন বড় হলে তিনি খেলার সাথী পান। তবে খেলার ফাঁকে ফাঁকে ছোট্ট আইনস্টাইনের মনে নানা প্রশ্ন জাগে। তার অধিকাংশই বিজ্ঞানের। এদিকে যখন তার বয়স পনেরো বছর, তার সমবয়সীরা স্কুলে যেতে শুরু করেছে, তখনও কিন্তু আইনস্টাইন স্কুলে যাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠেননি। তাই স্কুলে ভর্তির উপযোগী করার জন্যে তাকে বাড়িতেই পড়ানো হয়। এসব নানা কারণে, অনেকে মনে করেন আইনস্টাইন আসলে অটিজমে আক্রান্ত ছিলেন।

শিক্ষক বলেছিলেন, তোমাকে দিয়ে কিসসু হবে নাঃ

আইনস্টাইন ক্যাথলিক এলিমেন্টারি স্কুলে ভর্তি হয়ে তার একাডেমিক শিক্ষা শুরু করেন। এ সময় ধর্ম কর্মের প্রতি তার বেশ আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু বিজ্ঞান পড়তে পড়তে তার সে আগ্রহ কমতে থাকে। আর এ কারণে ক্যাথলিকদের স্কুলে তিনি কর্তৃপক্ষের অপ্রিয় হয়ে পড়েন। এক শিক্ষক তার প্রতি বিরক্ত হয়ে বলেই বসেন যে, “তোমাকে দিয়ে কিসসু হবে না।”

কিন্তু একথা শিক্ষকরা বললে কী হবে, স্কুলে পড়া অবস্থাতেই আইনস্টাইন নানা রকম মজার মজার যন্ত্রপাতি বানিয়ে সবাইকে দেখাতেন। এসব যন্ত্রপাতি সবাইকে অবাক করে দিত। তাছাড়া তিনি গণিতে আর বিজ্ঞানে বেশ ভালো ছিলেন। স্কুলে পড়া অবস্থাতেই তিনি অনেক কঠিন কঠিন গণিতের সমাধান সহজেই করে দিতেন। কিন্তু অন্য দিকে স্কুলের অন্যান্য বিষয়ে কাঁচা থাকায় প্রতিবছর দেখা যেত, গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয় বাদ দিয়ে অন্যগুলোতে টেনেটুনে পাশ করেছেন বা একেবারে ফেল করেছেন।ফলে প্রথম স্কুল থেকে তাকে কোন রকম সার্টিফিকেট ছাড়াই বের হয়ে যেতে হয়। এরপর তিনি সুইজারল্যান্ডের জুরিখে এডজেনোসিস পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি হন। এটি মুলত একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। তোমাদের তো আগেই বলেছি যে, তার কোন রকম কোন সার্টিফিকেট ছিল না। তার পরেও তার মেধার কথা বিবেচনা করে তাকে এখানে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। তবে তাকে শর্ত দেওয়া হয় যে তিনি ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই ভর্তি করা হবে।

কিন্তু দেখা যায় তিনি পদার্থ বিজ্ঞান আর গণিতে ভালো করলেও ফরাসি ভাষা, রসায়ন আর জীব বিজ্ঞানে ফেল করেন। গণিতে ভালো করার জন্যে তাকে পলিটেকনিকে ভর্তি করা হয়। তবে সাধারণ স্কুলের পর্যায়গুলো তাকে পার করে আসতে বলা হয়। তিনি অবশ্য পরে একটা বিশেষ স্কুলে সেগুলো অধ্যয়ন করেন। এসময় তিনি জার্মানির নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন আর সুইডেনের নাগরিত্বের জন্যে আবেদন করেন।

দুই বছর বেকারঃ

১৯০০ সালে আইনস্টাইন ইটিএইচ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। স্নাতক হবার পর অনেক খোঁজাখুঁজির করেও তিনি একটা শিক্ষকতার চাকরি জোটাতে পারেননি। প্রায় দুই বছর তিনি বেকার বসে থাকেন। তারপর একটা পেটেন্ট অফিসে সহকারী পরীক্ষকের চাকরী পান। তবে সেখান থেকে তাকে বলে দেওয়া হয়, পূর্ণ দক্ষতা অর্জন না করা পর্যন্ত তার পদোন্নতি হবে না।

১৯০৬ সালে পেটেন্ট অফিস তাকে পরীক্ষকের পদে উন্নীত করে। এরপর ১৯০৮ সালে তিনি বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। এরপর ১৯১১ সালে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তার কিছুদিন পরেই তিনি চার্লস ইউনিভার্সিটি অফ প্রাগে প্রফেসরের পদ গ্রহন করেন।

১৯০৫ সালে পেটেন্ট অফিসে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে আইনস্টাইন একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে চারটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন। চারটি বিষয় হলঃ “আলোক তড়িৎ ক্রিয়া” আইনস্টাইনের আলোক তড়িৎ সমীকরণ প্রতিপাদন। “ব্রাউনীয় গতি” আনবিক তত্বের সমর্থন, “তড়িৎ গতি বিজ্ঞান” আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব আবিস্কার ও ভর শক্তি সমতুল্যতার বিখ্যাত E=mc² সূত্র প্রতিপাদন। তারপর আইনস্টাইনকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

এই গবেষণাপত্র প্রকাশের কিছূদিন পরই আইনস্টাইন বিজ্ঞানীদের নজরে আসেন।

আর এখন তাকে ছাড়া বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। গত শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন বলে গণ্য করা হয় তাকে। আপেক্ষিকতার তত্ব ছাড়াও বিজ্ঞানের জগতে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে তার।

সেই বিখ্যাত থিওরিঃ

আইনস্টাইনের নানা কর্মের মাঝে যে অবদানটি তাকে চিরঞ্জীব করে রেখেছে তা হল থিওরি অফ রিলেটিভিটি। এই থিওরি মানুষের এতদিনের চিন্তা চেতনাকে ওলটপালট করে দেয়। নিত্যদিনের চিরচেনা ভাবনাগুলো থমকে দাঁড়ায় এখানে। কেউ যদি থিওরি অফ রিলেটিভিটি জানে, তাহলে সে অনুভব করতে পারবে তার চারপাশের জগৎটা কত রহস্যময়।

এই থিওরি বলে পৃথিবীর কোন কিছুই স্থির নয়। সবকিছুই গতিশীল। এবং এই গতির কারণে দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, অবস্থান সবকিছুই আসলে আপেক্ষিক। তোমার নিশ্চয় অজানা নয় যে পৃথিবীটাও সূর্যটাকে ঘিরে অনবরত ঘুরছে। পৃথিবীটা যেমন প্রতি সেকেন্ডে ২৯.৮ কিলোমিটার বেগে সুর্যের চারদিকে ঘুরছে।আবার ধরেন, তুমি একটা চলন্ত ট্রেনে বসে আছেন আর তোমার পাশ দিয়ে আরেকটা ট্রেনে তোমার বন্ধু যাচ্ছে। তোমাদের দুটো ট্রেন যাচ্ছে একটা আরেকটার বিপরীত দিকে। যদিও তোমাদের ট্রেনটা আসলে চলছে তবু তোমার নিজেকে এবং তোমাদের ট্রেনটাকে স্থির মনে হবে। আবার তোমার বন্ধুও নিজেকে এবং তার ট্রেনটাকে স্থির মনে করবে। আসলে এই ব্যাপারটাই হচ্ছে আপেক্ষিকতা।

ধরি, তোমাদের ট্রেনে তুমি তোমার আব্বুর পাশে বসে যাচ্ছ আর তোমার বন্ধু ট্রেনের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। তখন চলন্ত ট্রেনের মধ্যেও তোমার কাছে তোমার বাবাকে স্থির বলে মনে হবে। আর তোমার বন্ধুকে মনে হবে প্লাটফর্ম সহ পিছনের দিকে সরে যাচ্ছে। তাহলে তোমার সাপেক্ষে তোমার বন্ধু গতিশীল আর তোমার আব্বু হবে স্থির। ভালো করে ভেবে দেখো আসলেই তা কিনা। তাহলে তোমার বন্ধুর গতিকে বলা যেতে পারে আপেক্ষিক গতি। তেমনি করে হতে পারে আপেক্ষিক অবস্থান, আপেক্ষিক দৈর্ঘ্য, আপেক্ষিক সময়, আপেক্ষিক ভর। এর সবই গতির ফলে হয়ে থাকে। আর এই গতিকে তুলনা করতে হয় আলোর গতির সঙ্গে। কেননা মহাবিশ্বে কেবল আলোর গতিই অপরিবর্তনীয়। কোন কিছুর গতিই আলোর থেকে বেশি নয়।

তবে এই লেখাটুকু পড়লেই তুমি আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব সম্পর্কে পুরো জেনে বা বুঝে যাবেন সেটা কিন্তু একদমই সত্য নয়। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, এখানে আপেক্ষিক তত্ত্বের ধারণা দেয়া হয়েছে মাত্র। এ সম্পর্কে আরও বিশদভাবে জানতে তোমাকে এ বিষয়ে আরও বেশি পড়তে হবে।এই থিওরির আরও মজাঃ

এই থিওরির কয়েকটা মজার জিনিস তোমাদের বলি। যেমন কোন গতিশীল মানুষের হাতে যে ঘড়ি থাকবে তার ঘড়িটি একজন সি’র মানুষের হাতের ঘড়ির থেকে চলবে আস্তে। থিওরির একটা অংশ বলে যে কোন গতিশীল বস্তুর সময় তুলনামুলক কম গতিশীল বস্তুর তুলনায় কম দ্রুত চলে। আবার থিওরি থেকে জানা যায় গতিশীল সবকিছুর দৈর্ঘ্য স্থির বস্তুর তুলনায় কমতে থাকে। শুধু তাই না, এই থিওরি বলে ভর আর শক্তি বলে আলাদা কিছু নয়। একটা আরেকটাতে পরিবর্তিত হতে পারে গতির ফলেই। অর্থাৎ কোন বস্তুর ভরের সঙ্গে আলোর বেগের বর্গের গুনফলই হচ্ছে শক্তি।

টুইন প্যারাডক্সঃ

থিওরি অফ রিলেটিভিটির আরেকটি মজার বিষয় হলো টুইন প্যারাডক্স। বিষয়টা বোঝার জন্য ধর, তুমি আর তোমার ভাই একই দিনে জন্ম গ্রহণ করলে। জন্ম গ্রহণের কিছুদিন পরে একটা রকেটে তুমি ঘুরতে গেলে পৃথিবী থেকে দূরের কোন নক্ষত্রের দিকে। এদিকে তোমার যমজ ভাই রয়ে গেল পৃথিবীতেই। তোমার রকেটটা আলোর প্রায় কাছাকাছি বেগে চলছে। তার মানে তোমাদের রকেটের বেগ হল ১৪৭০০০ মাইল/সেকেন্ড এর কাছাকাছি।


তুমি তিন বছর বিভিন্ন গ্রহ, নক্ষত্র ঘুরে ফিরে তোমার ভাইকে দেখতে আবার পৃথিবীতে এলেন। বাড়িতে যখন তোমার ভাই তোমার সামনে এলো, তোমার তো চক্ষু ছানাবড়া। আরে আশ্চর্য! এই বুড়ো লোক তোমার ভাই হয় কীভাবে! গত তিন বছরে তোমার বয়স বেড়েছে মোটে তিনটি বছর। আর তোমার ভাইয়ের কিনা বয়স তখন ত্রিশ বছর।

এরকম একটা ব্যাপার নিশ্চয় তোমার কাছে জগাখিচুরী লাগছে? ভাবছো এটা অসম্ভব। কিন্তু এমনটাও সম্ভব। অন্তত আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটি কিন্তু তাই বলে।


আইনস্টাইন গাণিতিক ভাবে প্রমাণ করে দেখান যে কম গতিশীল বস্তুর তুলনায় স্থির বস্তুর সময় অধিক দ্রুত যায়। আর একারণেই এমনটি ঘটেছে। এটাকে বলে টুইন প্যারাডক্স বা যমজ বিভ্রান্তি।


আলো চলবে উল্টো দিকেঃ

আবার ধরো,  একটা রকেটের ছাদে করে আলোর থেকেও বেশি বেগে যাচ্ছেন। এসময় তোমার হাতে একটা চার ব্যাটারীর টর্চও আছে। তুমি তোমার টর্চটা জ্বালাতেই আলো ১৮৬০০০ মাইল/সেকেন্ড বেগে যেতে শুরু করলো। কিন্তু তুমি যেহেতু আলোর থেকেও বেশি বেগে যাচ্ছেন তাই আলো কিন্তু তোমার সামনে যেতে পারবে না বরং তোমার সাপেক্ষে টর্চের আলো বের হয়েই পিছন দিকে যেতে থাকবে। টর্চ জ্বালিয়ে আলোকে কখনো পিছনে যেতে দেখেননি বলে তোমার কাছে অবাক লাগতেই পারে।


বিপদও আছেঃ

তোমার নিউক্লিয়ার বোমার নাম হয়তো শুনে থাকবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ ধরনের দুটো বোমা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা হয়েছিল। এই বোমাগুলো আইনস্টাইনের বিখ্যাত ভর শক্তি রূপান্তর সূত্র E=mc² মেনে কাজ করেছে। এই সূত্র মেনে অল্প পরিমাণ ভর থেকে বিশাল শক্তি উৎপন্ন করেছিল। থিওরিটি আগে গাণিতিক ভাবে দেখানো হলেও বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে তা সফলভাবে প্রমানিত হয়েছে ওই বোমা নিক্ষেপের ঘটনায়।

ওই ঘটনা যে ঘটতে পারে তার আশংকা আগেই করেছিলেন আইনস্টাইন। এজন্য তিনি মন খারাপ করতেন এই ভেবে যে তার আবিষ্কার মানুষের অপকারের কাজে ব্যবহার করা হবে। আইনস্টাইন প্রকৃতির রহস্য উদঘাটন করতেই যুগান্তকারী তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। এখন এই তত্ত্ব ব্যবহার করে খারাপ কিছু বানিয়ে ফেলে, তাতে আইনস্টাইনের দোষটা কোথায়?

আইনস্টাইনের ‘থিওরি অফ রিলেটিভিটি’ যে আরো কত সব চমকপ্রদ আর নতুন নতুন ভাবনাকে জন্ম দেয় তা এই স্বল্প পরিসরে আলোচনা করে শেষ করা সম্ভব নয়। 

তাই তোমাদের যারা এই থিওরি সম্পর্কে আরো জানতে চাও তারা মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘থিওরি অফ রিলেটিভিটি’ বইটি পড়তে পারো।


Comments

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা