স্মৃতিগল্প

পেয়ারা গাছের কাঠবেড়ালী
খুকী


খুব কম মানুষ আছে যাদের জীবনে একটা সুন্দর আনন্দময় স্মৃতিবিজড়িত শৈশব থাকে। আজকালকার বাচ্চারা তো একদমই পায় না। মাঠে খেলাধূলা করা, গাছে চড়া, গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়া, পুকুরে ছিপ দিয়ে মাছ ধরা। ওদের এখন সময় কাটে বাসায় টিভি দেখে, কম্পিউটার মোবাইল চালিয়ে, বই পড়ে। আমার পুরো শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত তেল কোম্পানীর একটা আবাসিক এলাকায়। সেই এলাকাটি খুব চমৎকার করে সাজানো ছিল অসংখ্য গাছপালা, পুকুর, খেলার মাঠ, পার্ক ইত্যাদি দিয়ে।


আমরা প্রতিদিন বিকেলবেলা এবং স্কুল বন্ধ থাকলে সকালবেলাতেও সেইসব মাঠে পার্কে দৌঁড়ঝাঁপ খেলাধুলা করে বেড়াতাম। আমি যখন ক্লাস টুতে পড়ি তখন আমার কোন মেয়ে বন্ধু ছিল না, একই ক্লাসে পড়া ছেলেবন্ধুরাই ছিল আমার খেলার সঙ্গী। তাদের সাথে মাঠে খেলাধুলা করতাম, গাছে চড়তাম, গাছ থেকে ফল পেড়ে খেতাম। সেই এলাকায় বসবাসকালে আমার জীবনে এমন কিছু আনন্দময় স্মৃতিমধুর ঘটনা ঘটেছে যা এখনো আমার মনে ভেসে ওঠে বারবার। তার মধ্য একটা স্মৃতি খুব বেশী দাগ কেটেছে।

আমাদের সেই কলোনীর বাসাগুলো ছিল সব একতলা। চারদিকে খোলা  বাগান। সেই বাগানে নানান ফলমূলের গাছ। প্রতিটা বাসাতেই ছিল বেশ কয়েক জাতের ফলের গাছ। বেশীরভাগ সময় আমরা সরাসরি গাছ থেকে পেড়েই ফলমূল খেতাম। আম কাঠাল পেয়ারা বরইসহ নানান মৌসুমী ফলের গাছ।  গাছে গাছে সমস্ত আবাসিক এলাকাটাই ছিল একটা ফলের বাগান। 

সেই বাসাটা এখন


আমার বাসার উল্টোদিকেই ছিল আমার এক বন্ধুর বাসা। তাদের ছিল অনেকগুলো পেয়ারা গাছ। একটা পেয়ারা গাছে খুব মজাদার পেয়ারা ধরতো। ওটায় চড়া খুব সহজ ছিল। উঠে গাছের ডালে বসে থাকা যেতো। মাঝে মাঝে আমরা বন্ধুরা ওই গাছে উঠে ডালে পা ঝুলিয়ে গল্প করতাম। একদিন সেরকম গল্প করছিলাম। হঠাৎ দেখি পাশের ডালে উপরের দিকে খুব সুন্দর লোভনীয় ঠসঠসে একটা পেয়ারা। ভাবলাম পেয়ারাটা যদি এখন পেড়ে না খাই তাহলে পরেরদিন ওটা কাঠবিড়ালীর পেটে চলে যাবে। আমাদের ওখানে ফল খাওয়ার লোভে কাঠবিড়ালী ঘোরাঘুরি করতো প্রায়ই।

পেয়ারাটা পাড়ার জন্য আমি উঠে নীচের ডালে পা রেখে উপরের ডালে ঝুলে থাকা ফলটি ধরার জন্য হাত বাড়ালাম। কিন্তু পেয়ারাটা ছিল নাগালের একটু বাইরে। আমি পা টা আরো উঁচু করে উপরের দিকে হাত বাড়ালাম। পেয়ারাটা নাগালে আসার আগেই নীচের ডালে আমার পা গেল হড়কে। নিমেষের মধ্যে মধ্যাকর্ষণের টানে নীচে নামতে শুরু করলাম। নিশ্চিত যে হাত পা কিছু একটা ভেঙ্গে পড়ে থাকবো নীচে।


কিন্তু এক সেকেন্ডের মধ্যে আবিষ্কার করলাম যে আমি তখনো মাটিতে পড়িনি। স্পাইডারম্যানের মতো ঝুলে আছি মাঝপথে। ব্যাপার কী? তখন দেখলাম পাশের একটা ডালে আমার ফ্রকটা আটকে গেছে। মনে হচ্ছিল সেই ডালটা আমাকে হাত বাড়িয়ে পতনের হাত থেকে রক্ষা করেছে। সেই ঝুলন্ত অবস্থাতে আমার চিৎকারে ছুটে এলো বন্ধুর বড় ভাই এবং আমার বড় ভাইয়া। তারা এসে আমাকে স্পাইডার ম্যান অবস্থা থেকে রক্ষা করলো।

দৃশ্যটা আমার জন্য ভীষণ অপমানজনক হলেও অন্যদের জন্য আনন্দের খোরাক হয়েছিল। আমার দুষ্টু বন্ধুগুলা আমার দুরাবস্থা দেখে এত মজা পেল যে তারা রীতিমত হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল আর হাততালি দিয়ে মজা করছিল।  মনে পড়লে রাগে আমার এখনো গা জ্বলে। এখনো ছেলেবেলার বন্ধুরা সেই ঘটনা নিয়ে আমাকে খোঁচাখুচি করে আনন্দ পায় এবং সেই ঘটনার নাম দিয়েছে খুকী ও কাঠবিড়ালী


Comments

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা