গল্প

নিহারের বড় হওয়া 

হৃষিতা সেন গুপ্তা



সময়টা ছিল শীতকাল। নিহার তার দুই বন্ধুর সাথে পড়ালেখার জন্য দেশের বাইরে পা রাখে। দেশটির সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করলেও নিজ দেশের প্রতি তার এই প্রথম মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়।

মা বাবা ও নিজের দেশকে ছেড়ে আসতে ইচ্ছে না করলেও নিতান্ত পড়ালেখার জন্য সে বিদেশের পথে পা বাড়ায়। হোস্টেলের ছোট দুই-তিনটি রুমে তার বসে থাকতে ইচ্ছে করে না। নিহারের বেডরুম নানা আসবাবপত্র এ ঠাসা। সে নিজের পছন্দের অনেক গল্প বই বেডরুমে থাকা বুকসেল্ফে রাখে। কলেজ বন্ধ থাকায় সময় কাটানোর জন্য সে জানালার কাছে রাখা ফুলের টবে পানি দেয়, সেগুলোর যত্ন নেয়। অচেনা জায়গা,অচেনা মানুষজন এসবে অসুবিধা হলেও তাকে মানিয়ে চলতে হয়।

বেডরুমটাকে নিজের পছন্দের মতো সাজাবার জন্য সে সব আসবাবকে নিজের মতন গুছিয়ে নিল। গল্পের বইগুলো বুকসেল্ফে ও কম্পিউটার, টেবিল ল্যাম্প সাইট টেবিলে রাখল যাতে সেগুলো সময়মতো কাছে পাওয়া যায়। বিছানায় থাকা বালিশে কভার ঢুকাল ও কাঁথা, ব্ল্যাংকেট সেখানে রেখে দিল। 

যেহেতু কলেজ তখনো খোলেনি তাই বাসায় সময় কাটানোর জন্য চেয়ারে বসে নিজের গিটারটি নিয়ে গান গাইল,গল্প লেখার চেষ্টা ব্যর্থ হলে লেখার কাগজ দুইটি দুমড়ে মুচড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিল। এরপর রিমোট দিয়ে টিভি ছাড়ল ও গুরুত্বপূর্ণ খবর ও সিনেমা দেখল। রাতের খাবার খেয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল।ক্লান্ত ছিল বিধায় অন্যদিনের চেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেল।

প্রথমে বিছানায় বেডসিট বিছিয়ে বালিশ ও ম্যাট্রেস ঠিক করল যাতে ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে। এরপর নিজের একজোড়া স্যান্ডেল কার্পেটে রেখে বিছানায় উঠে কাথাঁ,ব্ল্যাংকেট গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল ও পাশের টেবিল ল্যাম্প বন্ধ করে দিল।

এভাবেই চলতে থাকে তার দিন।এরপর সেই দিনটি এলো যার জন্যে এখানে তার আসা। ক্যালেন্ডারে থাকা ১লা জানুয়ারি আজ। আজই তার স্বপ্নের কলেজে যাওয়ার দিন। সে বিছানা থেকে উঠে পর্দা সরিয়ে দিনটিকে আহবান জানাল। এরপর গোসল করে আলমারি থেকে নতুন জামা বের করে পরে নিল ও ড্রেসিং টেবিলে থাকা আয়নায় নিজেকে দেখে নিল ও অবাক হলো এ-ই কারণে যে তাকে আজকে দেখতে অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে সে অনেক বড় হয়ে গেছে। 

বাবা- মায়ের ছোট্ট মেয়েটি যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে। দেরি না করে সে টেবিলে রাখা ঘড়ি পরে নিল ও যাওয়ার আগে মা-বাবার ছবি বুকে জড়িয়ে নিয়ে দুফোঁটা দুর্বোধ্য চোখের জল ফেলল।এরপর দরজা খুলে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হলো।


.....................................................

[হৃষিতা সেন গুপ্তা, নবম শ্রেণী, অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়]

Comments

  1. সুন্দর হয়েছে গল্পটা৷৷

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা