পুরোনো যুগের কথা
আমাদের ছেলেবেলা
লায়লা বেগম
আমাদের ছোটবেলাটা খুব মজার ছিল। সেটা অনেক যুগ আগের কথা। আমরা তখন বোয়ালখালীর গোমদণ্ডিতে থাকতাম। রেল লাইনের পাশেই ছিল আমাদের বাড়ি। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারীর রেল চলতো দিনে কয়েকবার। একটা বিল ছিল মাঝে তার ওপাশ দিয়ে ঝমঝম করে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে ছুটে যেতো রেলগাড়ি।আমাদের সময়টা
আমরা অনেক আনন্দে কাটাতাম। যখন শীতকাল আসতো, তখন আমরা
নানাবাড়িতে বেড়াতে যেতাম। নানাবাড়ি
ছিল পটিয়াতে। আমরা গোমদণ্ডী স্টেশন থেকে বিকেলের ট্রেনে উঠতাম এবং ১
ঘন্টার মধ্যে পটিয়া স্টেশনে পৌঁছে
যেতাম। সেখানে পৌঁছে আমরা অল্প
কিছুদূর হাঁটলেই নানাবাড়ি। শীতকালে সেখানে শুধু আমরা না আমাদের
খালাতো বোন, মামাতো বোন
সহ আরো অনেকেই আসত এবং আমরা
সবাই মিলে একসাথে খেলতাম। আমরা সব মিলিয়ে মোট ২৪ জন ছিলাম।
নানার বাড়িতে থাকাকালীন প্রতিটি দিনই আমাদের জন্য খুব আনন্দময় ছিল। আমাদের
নানি,মামিরা মিলে অনেক ধরনের পিঠা বানাত,আর আমরা
সবাই মিলে সে পিঠাগুলো মজা করে
খেতাম। শীতকালের
সেইসব রসালো পিঠার কথা মনে পড়লে এখনো জিবে পানি আসে।
তখন কারেন্ট ছিল না। ঘুটঘুটে
অন্ধকার থাকতো চারপাশে। যখন রাত হতো চেরাগ বা হারিক্যান জ্বালিয়ে খাওয়াদাওয়া শেষ করতাম সবাই। রাতের
খাবারটা শেষ করে বাতি নিবিয়ে সবাই একসাথে গল্প করতে বসতাম। নানান ধরণের
গল্প হতো আমাদের। আমরা অনেক বিষয় নিয়ে হাসি ঠাট্টা বা গল্প করতাম
এবং সময়টাকে উপভোগ করতাম। গল্প করতে করতে অনেক সময় অনেক রাত হয়ে যেত।
রাতে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে গেলেও আমাদের সকালে ঘুম
ভাঙতো সূর্য ওঠার অনেক আগে। ঘুম থেকে ওঠার পরপরই আমরা বাহিরে বের হয়ে সবাই মিলে
একটু হাঁটাহাঁটি করে নিতাম। হাঁটাহাটি
শেষ করে মামি নানী আমাদেরকে সকালের খাবার হিসেবে নানান রকমের
পিঠাপুলি খেতে দিত।
সকালের খাওয়া শেষ করে আমরা ঘরের বাইরে বেরিয়ে পুকুরের দিকে চলে যেতাম। উদ্দেশ্য মাছ ধরা। বড়শি দিয়ে পুকুরে মাছ ধরাটা খুবই আনন্দের ব্যাপার ছিল। যখন বড়শি দিয়ে মাছ উঠতো,তখন আমরা খুশীতে লাফিয়ে উঠতাম। কি যে ভালো লাগতো! এরপর কেউ যখন পুকুরে এসে জাল ফেলত তখন অনেক মাছ জালে ধরা পড়তো,সেগুলো দেখেও আমরা অনেক মজা পেতাম।
মাছ ধরা হয়ে গেলে আমরা পুকুরে নেমে সাঁতার কাটতাম।
সবাই মিলে একসাথে সাঁতার কাটাটা একটা আলাদা একটা মজার ব্যাপার ছিল! ডুবসাঁতার
দিয়ে অনেক সময় আমরা পানির নীচে চলে যেতাম, পানির
মধ্যেই নানান রকম খেলা খেলতাম। পুকুরে নামলে কেউ উঠতে চাইতাম না সহজে। এরপর গোসল
শেষ করে ঘরে এসে দুপুরের খাবারটা খেয়ে
নিতাম।
দুপুরের খাওয়া শেষ হবার পর
আবার বেরিয়ে পড়তাম। তখন আমাদের খেলাধুলার সময় আমরা অনেক রকমের খেলাধুলা করতাম। কানামাছি,এক্কাদোক্কা,লুকোচুরি,ওপেনটি বাইস্কোপ, ইত্যাদি ছিল আমাদের প্রিয়
খেলা।
বিকেল শেষ
হয়ে আসলে আমরা সবাই ঘরে ফিরে
আসতাম। তখন নাস্তার সময়। নাস্তা শেষ করার পর
আমরা আর বাইরে যেতাম না। বাইরে
অন্ধকার হয়ে যেতো ততক্ষণে। তারপর ঘরের মধ্যেই সময় কাটাতাম পড়ালেখা
করে কিংবা গল্পগুজব করে। যখন কোন
কারণে বাইরে যেতে
পারতাম না,তখন ঘরে বসে লুডু খেলতাম। এভাবে করে বাকি সময়টা
কেটে যেত। নানাবাড়িতে থাকার সময়ে
আমরা এভাবে অনেক ধরনের মজা করে সময়টা কাটাতাম। যখন
নানাবাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময় আসত,তখন যেন আর যেতে
ইচ্ছা করত না। বরং
থেকেই যেতে ইচ্ছা করত। সেই
দিনগুলোর কথা ভাবলে এখনো ভালো লাগে।
(অনুলিখন : ওশিন মাহিয়াত)
Comments
Post a Comment