গল্প

মজার ভ্রমণ

ওশিন মাহিয়াত

আজকে জিনি স্কুল থেকে বেশ তাড়াতাড়ি ফিরে এলো। আজ সে খুব খুশি। কারণ, আজ বিকালে সে এবং তার অন্যান্য ভাইবোনেরা একসাথে দূরে একটা জায়গায় বেড়াতে যাবে। জিনি দুপুরের খাবার খেয়ে সবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। 

তখন বনি এসে জিজ্ঞেস করলো, “আপু, তুমি তোমার জার্নি ব্যাগ রেডি করেছ?” 

বনি হলো জিনির ছোট বোন। 

জিনি উত্তরে বলে, “না, আমি তো ভুলেই গেছি! যাই, গুছিয়ে আসি।” 

এটা বলে সে ব্যাগ গোছাতে গেল। ততক্ষণে বাসায় সব কাজিন ভাইবোনেরা চলে এলো। তাদের মধ্যে সবার বড় তানিয়া। সে কিছু বললে বাচ্চারা সব মন দিয়ে শুনে। তানিয়া ঘোষণা দিলো দুপুর ২টার মধ্যেই সবাইকে রেডি থাকতে হবে। যেহেতু ঠিক ২টায়ই তারা রওনা দিবে। সবাই সম্মতি দিল। 

তিনটা গাড়ি ঠিক করা হলো, যদিও শুধু বাচ্চারাই যাচ্ছে..তাদের সংখ্যাই প্রায় ১৪জন! যা হোক, যথাসময়ে রওনা দেয়া হলো। 

রওনা দেয়ার কিছুক্ষণ পর জিনি সবাইকে জিজ্ঞেস করল, “ সবাই সব কিছু নিয়েছ? কেউ কিছু ফেলে আসোনি তো!” 

সবাই বলল তারা সবকিছু নিয়েছে। হঠাৎ সাগর বলে উঠলো, “ দাঁড়াও! আমি আমার ব্যাগ আনতেই ভুলে গেছি!” 

সাগরের স্বভাবটাই এমন, সবকিছু এখানে সেখানে ফেলে আসা; সুতরাং কেউ তেমন অবাক হলো না। তবুও তানিয়া ধমক দিল, “তোর জন্য কখনো ঠিক সময়ে বের হওয়া যায় না, আমি না কতবার করে বললাম নিজেদের সবকিছু ঠিকাছে কিনা সেটা ভালো করে দেখতে?” 


সাগর বলল, “সরি তানিয়াপু! আর কখনো এমন হবে না।” 

ড্রাইভার তখন বলে, “এখনো বেশি দুরে যাইনি, গাড়ি ঘোরাবো?” 

তানিয়া বলে, “ হ্যাঁ”। 

ড্রাইভার তখন আবার বাসার দিকে গিয়ে সাগরের ব্যাগপ্যাকটা নিয়ে আসে।

 প্রায় ২ঘন্টা পর তারা গন্তব্যে পৌঁছালো। জায়গাটা একদম নিরিবিলি আর খুব সুন্দর। এক পাশে গাছপালা ঘেরা একটা পরিবেশ আছে। অন্যদিকে বড় একটা খেলাধুলার জায়গা আছে; বাচ্চাদের মধ্যে যারা বেশি খেলাধুলা করতে পছন্দ করে, ওরা এক দৌড়ে যায় মাঠের দিকে। মিশু খেলা বিষয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে। সে দাবি করছে সে নাকি আগে থেকে জানতে এমন একটা বড় খেলার মাঠ থাকবে, তাই সে ক্রিকেট ব্যাট বল নিয়ে এসেছে। 

যা হোক, বাচ্চারা খেলা শুরু করে দিল। যারা বেশি ছোট, ওরা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে লাগল। তারা যাতে হারিয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখার দায়িত্ব নিল তানিয়া। রূপা, জিনি, বনি, এবং লিমা একপাশে ফ্রিজবি খেলছে। 

তিশা, সাগর, মিশু, জিমি, আর নিশু সহ আরো অনেকেই ক্রিকেট খেলছে। হঠাৎ সাগর আর মিশুর দলের মধ্যে একটা তর্ক শুরু হলো। সাগরের দল বলছে, তারা কিছুই করেনি; আর মিশুদের দল বলছে অবশ্যই সাগরের দল চোট্টামি করেছে। 


মিশু বলল, ‘এটা কোনো খেলাই না! আম্পায়ার ছাড়া কখনো খেলা হয় না। আমাদের একজন আম্পায়ার লাগবে, তা নাহলে যে কেউ চোট্টামি করে ফেলবে কেউ বুঝতে পারবে না।’ 

সবাই বলল, ‘ঠিকাছে, তাই হবে।’ 

তিশা তানিয়ার কাছে গেল জিজ্ঞেস করতে, সে আম্পায়ার হবে কিনা। তানিয়া বলল, ‘এখন আর কোনো খেলা না, অনেক হয়েছে। কয়টা বাজে জানিস?’ 

তিশা বলল, ‘না, জানি না। কয়টা?’ 

তানিয়া বলল, ‘৬টা।’ 

তিশা বলল, ‘এত তাড়াতাড়ি সময় চলে গেছে? আমরা টেরই পাইনি!’ 

তানিয়া বলল, ‘যা, অন্যদের ডেকে নিয়ে আয়। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তাঁবু খাটিয়ে ক্যাম্প তৈরি করতে হবে, মনে আছে তো?’ 

তিশা বলল, ‘হ্যাঁ,আপু। যাচ্ছি।’ 

ক্যাম্প তৈরি শুরু হয়ে গেল। প্রথমে কিভাবে শুরু করবে, তারা বুঝতে পারছিল না। একদিকে রেডি করতে গিয়ে আরেক দিকে এলোমেলো হয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর তাঁবু খাটানো শেষ হলো। এবার রান্না করার পালা। এখন তারা বেশ সমস্যায় পড়লো। কেননা, তাদের কেউই আগে কখনো রান্না করেনি। তবুও কোনো ভাবে মোবাইলের ভিডিও দেখে রান্নার পর্ব শেষ করল। 

বনি মুখে প্রথমেই খাবার দিয়ে মুখ বিকৃত করে বলল, ‘উহু! এটা কোনো রান্না হলো? লবণ নাই কেন? কি পানসে! আমি আর খাবো না!’ 

বনিকে দেখে অন্য বাচ্চারাও খাবে না খাবে না করতে লাগলো। 

তানিয়া এবারে রেগে গেল বলল, ‘এত বাড়াবাড়ি করিস না তো, এরকম করবি জানলে তো এখানে তোদের আনতামই না! আসলে তোদের এখানে আনাই ভুল হয়েছে।’ বকা শুনে সবাই চুপচাপ খেয়ে নিল। 

ক্যাম্পে বসে কি করবে সবাই ভাবছিল। রূপা বলল, ‘চল, ক্যাম্প ফায়ার করি।’ 

লিমা জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি ক্যাম্প ফায়ার করতে পার?’ 

রূপা উত্তর দেয়, ‘হুম, আমি আগেও করেছি।’ 

লিমা বলল, ‘ও।’ 

রূপা বলল, ‘সবাই শোনো, এদিকে কিছু শুকনো পাতা, খড়কুটো আছে। সব এক জায়গায় এনে জড়ো কর। আমার কাছে ম্যাচ কাঠি আছে।’ 

সবাই শুকনো পাতা ও খড়কুটো একজায়গায় এনে জড়ো করল, রূপা কিছু বড় শুকনো কাঠ জোগাড় করে এনে ওগুলোর উপরে দিয়ে ম্যাচ কাঠি ধরিয়ে দিল। সাথে সাথে আগুন জ্বলে উঠলো, আর বাচ্চাদের আনন্দধ্বনি শোনা গেল। এবার সবাই আগুনের চারিদিকে বসে গল্প করতে লাগলো। 

কিছুক্ষণ পর লিমা তানিয়ার কাছে ভুতের গল্প শোনার আবদার করলো। 

তানিয়া বলল, ‘ভয় পাবি না তো?’ 

‘না! আমি ভয় পাই না।’ লিমা বলল। 

তানিয়া তার ভুতের গল্প শুরু করল। প্রথমে সবাই হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছিল। গল্পের ঠিক মাঝখানে আসার পর থেকে সবাই চুপ হয়ে গেল। আসলে ওরা বড্ড ভয় পেয়েছে। আর গল্পের শেষে সবাই ভয়ে একটা জোরে চিৎকার দিল! 

এসব কান্ড দেখে তানিয়া গল্প থামিয়ে হাসতে লাগলো। এভাবে করে মাঝরাত হয়ে গেল প্রায়। সকালে ওদের বাসায় নিতে গাড়ি আসবে, তাই সবাই তাড়াতাড়ি ক্যাম্পে ঢুকে গেল ঘুমাতে। 

মাঝরাতে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেলে জিনির। তাঁবুর বাইরে খসখস শব্দ হচ্ছে কি যেন একটা আঁচড় দিয়ে তাঁবুর ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করছে। শব্দ টা শুনে মনে হল যেন আদব ভৌতিক কোন জন্তু তাঁবুর ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করছে সে ভয়ে কাঠ হয়ে গেল এমনকি কাউকে ডাকার সাহস পেল না। পাশে শুয়ে থাকা তানিয়া আপুকে হাতের ইশারায় ডাক দিল তানিয়া আপু উঠে বসলো কি হয়েছে। তানিয়া আপু উঠে বসাতে জিনি একটু সাহস পেলো ভাবলো এবার তানিয়াপু কিছু একটা করতে পারবে, কারণ সে অনেক সাহসী। তখনই তাঁবুর বাইরে থেকে ফোঁস করে একটা শব্দ ভেসে এলো সাথে সাথে তানিয়া আপুই জিনিকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে কাঁপতে শুরু করল। তখন জিনি তানিয়া আপু কে সান্ত্বনা দিয়ে ফিসফিস করে বলল, 'ভয় পেয়ো না আপু আমি তো আছি।' তাদের শব্দ শুনে পাশ থেকে ছোট্ট বনি লাফ দিয়ে উঠে বলল, 'কি হয়েছে, কি হয়েছে!' জিনি বললো, 'বাইরে কি যেন একটা এসেছে, সেটা আবার তাঁবুর ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করছে।' বনি একটা বোকা সে কিছু না বুঝে হাতে একটা লাঠি নিয়ে আস্তে আস্তে শব্দটার দিকে যেতে থাকলো। তানিয়া আপু তখন ভয়ে বলছে, 'এই বনি! যাসনা বাইরে যাসনা।' তোকে কামড় দেবে। কিন্তু বনি কোন কথা না শুনে একটা লাঠিটা দিয়ে তাবুর ভেতর থেকেই সেই খসখস শব্দের জায়গাটার উপর জোরে একটা বাড়ি দিল। তখনই একটা আর্তনাদের শব্দ শোনা গেল "মিঁয়াওওওওওও!"


শব্দ শুনে সবাই বুঝে গেল ওটা ছিল একটা বিড়াল। তারপর সবাই হাসতে লাগল হো হো করে। হাসতে হাসতে ওরা ঘুমিয়ে পড়ল।

সকালবেলা বাচ্চারা সবাই ঘুম থেকে ওঠার অনেক আগেই তাদের নিতে গাড়ি এসে হাজির হয়েছে। কেউই এত তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে চাইছিল না। 
জিমি বলল, ‘আবার যে কখন আসবো এখানে!’ 

মিশু বলল, ‘হুমম..এবারে খুবই মজা হয়েছে। এ মজাটা খুব মিস করবো!’ 
তখনই ড্রাইভারের ডাক শোনা গেল, সবাইকে এখন গাড়িতে উঠতে হবে। সবাই গাড়িতে উঠে গেল এবং বাসার দিকে রওনা হলো।  একটা আনন্দময় সময় কাটিয়ে সবাই বাড়ি ফিরে এলো।    


......................................................
[ওশিন মাহিয়াত, ৮ম শ্রেণী, ফুলকি সহজপাঠ  বিদ্যালয়]

Comments

Popular posts from this blog

ভিনদেশী রূপকথা

আতনিন বিন জহির

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা