অনুগল্প
কিটির অলস দুপুর
শারজিতা দিশা
ঘুম ভাঙতেই কিটি খাবারের গন্ধ পায়। রাজ্যের আলসেমি নিয়ে ছোট সোফা থেকে হেলে দুলে নামে। কলিংবেল পড়ার আগে খেয়ে নিতে হবে, নাহলে অন্যরা দেখলে একটু অসুবিধে। কিটির কান খাড়া করে শুনতে পায় কি যেন নড়ছে জানালার পাশে। শোঁ শোঁ শব্দের অত্যাচার হঠাৎ! এই শব্দেই আসলে কিটির ঘুমটা ভাঙে।
ওফ কি মহা যন্ত্রণা, ভাবলো কিটি, এখন কি খাবার খেতে যাবো, নাকি উঁকি দিয়ে দেখবো বাইরে!” কিটির কানগুলো খাড়া হয়ে গেছে এর মধ্যেই। গজগজ করতে করতে সাবধানী পায়ে চুপ করে খোলা জানালা দিয়ে মুখ বের করে। দেখে পাশের বাড়ীর বিল্টু বাগানে পা ছড়িয়ে বসে আছে। বিল্টু বিশেষ সুবিধের নয়, কিটিকে দেখলেই দৌড়ে আসবে, কিটির কান মুচড়ে দিয়েছে বার দুয়েক। কিটি খেয়াল করে বিল্টুর হাতে কালো রিমোটের মতন কিছু একটা, ওটাই শব্দের উৎস? কিন্তু না, শব্দ আসছে অন্যখান থেকে। বিল্টু কালো জিনিসটা ডানে বামে ঘুরিয়ে নেয়, সাথে সাথে হুশ করে কি যেন উড়ে গেলো।
কিটি ভাবলো, যাক কাজ নেই বাপু অতসত দেখেটেখে। বিল্টুর কাজকারবার বলে কথা, টিপছে রিমোট না কি যেন আর উড়ে যাচ্ছে কি সব। আজগুবি। মুখ ঘুরিয়ে সোফার উপর লাফ দেয় কিটি, অহেতুক দুএকটা আঁচড় কাটে পড়ে থাকা কুশনে, মুখ ঘষে ঘষে আরেকটু আয়েশ করে নেয়।
আজ বাসায় কেউ নেই। ইচ্ছেমতন অনেক কাজ করা যাবে, ভাবলো কিটি। কাজ মানে দুষ্টুমি। একটু হেলেদুলে বেডরুমের বিছানাতে গড়াগড়ি, কিটির নিজের গোল বিছানাটা খুব বোরিং লাগে। তাই বড় চৌকোনা বিছানাতে লাফালাফি বেশ মজার।আর হ্যাঁ টেবিলে রাখা খাবার গুলো চেখে দেখতে হবে। খাবারের কথা মনে পড়তেই কিটির মন চনমন করে উঠে। লাফিয়ে টেবিলে উঠে। লাফ দেবার সময় টেবিলে থাকা কর্ন ফ্লেক্সের প্যাকেটটা সরসর করে নিচে পড়ে যায়। পুরো মেঝেতে কর্ণ ফ্লেস্কের ঢল। সেগুলোর দিকে উদাস ভঙ্গিতে তাকায় কিটি ভাবখানা এমন,পড়লে আমার কি! পা টিপে টিপে খাবার প্লেট বাটির দিকে এগিয়ে যায় সে। উমম কি যে সুবাস, কি এটা, থাবা দিয়ে নাড়াচাড়া করে খাবার শুঁকতে থাকে কিটি। তারপর চুমুকে চুমুকে আহ কি আনন্দ। স্বাধীনতার কি সুখ, টেবিলে চড়ে খাওয়া, সে তো নিত্যদিন ঘটে না।খাবারে মগ্ন হয়ে পড়ে কিটি।
ঠিক সেই মূহুর্তে কিটির কলজে কাঁপিয়ে বিল্টুর সেই নাম না জানা উড়ন্ত বস্তুটা খোলা জানালা দিয়ে ভোঁ করে রুমে আছাড় খায়।
আর কিটি? ভয়ের চোটে দুম করে মোটা লেজ গুটিয়ে চিৎকার করে বলে’
“ম্যাঁওও”
যা অনুবাদ করলে হয় কিছুটা এমন, “দুরছাই দিলে তো সর্বনাশ করে আমার আয়েশী দুপুরটার!”
Comments
Post a Comment