তিনতলার গল্প
মামা চায়ে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে শুরু করলেন, “তখন আমি সেই কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার। প্রতিদিনের মতো সেই দিনও সকাল বেলা ক্যান্টিনে গিয়েছি নাস্তা করতে। সেদিন আবার মিটিং। তখন সবার মতো আমিও ওখানেই থাকতাম। আমা…”
“মামা কোথায় থাকতে না কী জানি বললে।“
“ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েই ডর্মে থাকতাম সেটা বলছিলাম।
“ও।“
“হ্যাঁ তো কী জানি বলছিলাম?”
“আমা বলে থেকে গেলে।“
“ও হ্যাঁ হ্যাঁ তো আমার রুম ছিল তিন তলায়। মিটিং টিটিং মিটিয়ে যেই না আমার রুমে ঢুকে খাতা দেখা শুরু করেছি, অমনি গেটে নক। বললাম, “ভেতরে আসুন”। দেখি কি স্যার! আবার নিশ্চয়ই কোনো একটা কাজ দেবেন। স্যারকে সালাম দিলাম। কোনো উত্তর পেলাম না অবশ্য। সে যাই হোক, স্যার আমাকে বললেন, “ওই যে ফার্স্ট ইয়ারের…”
“খাতা দেখতে হবে, তাই না স্যার?” বুঝে ফেললাম আমি। স্যার বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছ।“ স্যার চলে গেলে ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারের খাতা দেখে শেষ করে দেখি ৬ টা বাজে। খানিকটা সময় ফোন টিপে , আবার নিচে গেলাম ক্যান্টিনে আলু ভর্তা আর খিচুড়ি খেয়ে, খানিকক্ষণ পিওনের আধুনিক বক্তৃতাটা শুনে, যেই না রুমে যাব, অমনি শুনি আমার নামে একটা টেলিগ্রাম এসেছে। খুলে বোঝা গেল না কে পাঠিয়েছে। দেখি টেলিগ্রামে বড়ো বড়ো করে লেখা-
রাতের বেলা তিনতলাতে জেগে থেকো
না থাকলে……
দেখে তো আমি আকাশ থেকে পড়লাম। কে লিখতে পারে কিছুতেই মাথায় আসল না আমার। যাই হোক আমি ঠিক করলাম যে আমি জেগে থাকব। তো রাতের বেলা অনেক ঘুম আসলেও জেগে থাকতে হলো আমাকে। আচ্ছা কলি তুই এরকম হা করেই কি পুরো গল্পটা পার করে দিবি?”
“না না মামা আমি তো শুনছি!”
“আচ্ছা তাহলে আবার শুরু করছি, তো রাত ৩টার দিকে কোনার রুমটা থেকে ধুপধাপ শব্দ হতে লাগল।“
“মামা তোমার ভয় লাগছিল না?”
“লাগছিল না মানে? ভয়ে আমার মরো মরো অবস্থা। সে যাই হোক, খানিকক্ষণ পরে কয়েক মুহূর্তের জন্য শব্দটা থামলো। একটু পরে মনে হলো আমার রুমের দরজা থেকে আওয়াজটা আসছে। আমি তো ভয়ে অস্থির।“
“মামা আমার ভয় লাগছে।“
“তোর আর ভয়, আমার যা ভয় লাগছিল।“
“তারপর?”
“কেন তোর বলে ভয় লাগছে?”
“না তুমি তাও বলো।“
“আচ্ছা। তো একটু পরে মনে হলো শব্দটা আমার বাম দিকের জানালা থেকে আসছে!”
“সত্যি!”
“হ্যাঁ! তো আমি এতক্ষণ ডান দিকে কাত হয়ে ছিলাম, রুমের ডান দিকের সামনের কোনায় দরজা। উঠে দৌড় দেব কিনা ভাবছিলাম, এমন সময়ে মনে হলো শব্দটা একদম আমার পিছন থেকে আসছে!”
“মামা আমার খুব ভয় লাগছে!”
“ভয় তো লাগবেই। যাই হোক, তো তারপর হুট করে শব্দটা থেমে গেল। সারা রাত না ঘুমিয়ে, সকাল বেলা উঠেই সোজা চলে গেলাম ডর্মের ওয়ার্ডেন স্যারের কাছে। সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকে স্যারকে বললাম, “স্যার একটু রুমের প্রবলেম হয়েছে।“ ভূতের কথাটা চেপে গেলাম। স্যারের সাথে খানিকক্ষণ কথা বলে আমার রুমটা দুই তলায় করে ফেললাম। পরের দিন রাতের বেলা তিনতলা থেকে আবার ধুপধাপ শব্দ হতে লাগল। ঠিক করলাম গিয়ে দেখে আসব। খুব সাহস করে গেলাম। গিয়ে আমি যেটা দেখলাম তাতে আমার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কথা। দেখি আমার চোখের সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি।“
“কীভাবে!”
“আমি অনেক ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করলাম, “ক্ক…কে…কে?” কোনো উত্তর আসলো না। জিনিসটা আস্তে আস্তে আমি যেই ঘরে থাকতাম ওই ঘরে ঢুকে পড়ল। পরের দিন সকালে আমি পিওনের কাছ থেকে জানতে পারলাম আমি নাকি রাতের বেলা তিন তলায় পায়চারী করি। এদিকে আমি তখন ঘুমাই। আজ পর্যন্ত খুব কম মানুষ এই কথা বিশ্বাস করেছে। “
“গল্প কি শেষ মামা?”
“হ্যাঁ, তা শেষ। কিন্তু এখন তোদের এসি-রুমটায় চল, সবাই মিলে কার্ড খেলি।“
“আচ্ছা মামা চলো। মামা এইটা কি সত্যি গল্প?“
“অবশ্যই!”
“মামা আমার ভয় করছে! তুমি কি আসলেই তুমি, নাকি তুমি সেই ভূতটা!”
[ইরাম নায়লা, ৪র্থ শ্রেণি, শিমুল মেমোরিয়াল স্কুল, রাজশাহী ]
অসাধারণ মামনি।
ReplyDeleteইরাম মামনি অনবদ্য লিখেছে। ক্লাস ফোরের মেয়ের লেখা এটা পড়ে মনেই হচ্ছে না। এক কথাই অসাধারণ। ❤️
ReplyDeleteঅসাধারণ আম্মুজি 🥰🥰
ReplyDelete